ফুলবাড়ীতে সাংবাদিকের অনুসন্ধানে গাঁজা উদ্ধার
মেহেদী হাসান,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সাংবাদিকের টানা পাঁচ ঘন্টার অনুসন্ধানে এক কেজি ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার সকালে গ্রামের কৃষক ও পথচারীরা গ্রামের সড়কে (মাদবদ্রব্য) গঁজাা পেয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যের নিকট জমা দিলে সাংবাদিকদের তৎপরতায় সেই গাঁজা সন্ধায় সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিনের নিকট জমা দেন এব্ং পুলিশ সেই গাঁজা উদ্ধার দেখিয়ে জব্দ তালিকা করেন।
পথচারী ও গ্রামবাসীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী,দুই কেজি গাঁজা রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়ে ইউপি সদস্যকে জমা দিলেও,ইউপি চেয়ারম্যান জমা দিয়েছেন এক কেজি ১০০ গ্রাম। এখনো ৯০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ২নং আলাদিপুর ইউনিয়নে।
প্রতক্ষদর্শী ও গ্রামবাসীরা জানায়,রোববার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টার সময় আলাদিপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপুর গ্রামের বাসীন্দা গভির নলকুপের লাইনম্যান চন্দ্রপুর গ্রামের মৃত গনেশ চন্দ্রর ছেলে গলিয়া চন্দ্র, আলাদিপুর গ্রামের মড়কাকালি ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে তিনটি প্যাকেট দেখতে পায়, এসময় ওই গ্রামের বাসীন্দা শ্যামল চন্দ্র, সরেন চন্দ্র,বিরেন্দ্র নাথ ও পথচারী উত্তর রঘুনাথপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আব্বাস আলী ঘটনাস্থলে আসেন। তারা একটি প্যাকেট খুলে দেখতে পায় সেখানে আমদানী নিষিদ্ধ মাদক দ্রব্য গাঁজা রয়েছে। এসময় পথচারী আব্বাস আলী ও বিরেন্দ্রনাথ দুটি ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেট নিয়ে আলাদিপুর ইউপির ৫নং ওয়ার্ড সদস্য উত্তর রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে মঞ্জুরুল ইসলামের কাছে জমা দেন। এরপর ওই গাঁজা মঞ্জুরুল ইসলাম থানায় জমা না দিয়ে নিজ বাড়ীতে রেখে দেয়। এই খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। খবরটি জানতে পেয়ে প্রতিনিধি মোঃ মেহেদি হাসান উজ্জল,দৈনিক যায়যায়দিন প্রতিনিধি মোঃ রজব আলী,মাইটিভি প্রতিনিধি ফিজারুল ইসলাম ভুট্টু,আমাদের সময় এর প্রতিনিধি ওয়াহিদুল ইসলাম ডিফেন্স,দৈনিক সমাচার প্রতিনিধি মোকারম হোসেন যৌথভাবে অনুসন্ধানে নামেন। টানা ৫ ঘন্টা অনুসন্ধান চালিয়ে থানা পুলিশ কে জানালে,পুলিশ ইউপি সদস্য মঞ্জুরুল ইসলামকে জিঙ্গাসাবাদ করেন। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় আলাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাসমুছ সাখির বাবলু,এক কেজি ১০০ গ্রাম গাঁজার একটি পোটলা নিয়ে এসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট জমা দেন।
পথচারী গভির নলকুপের মিস্ত্রি গলিয়া চন্দ্র বলেন, তিনি সকালে আলাদিপুর মাঠে গভির নলকুপে যাওয়ার পথে মড়কাকালি ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে একটি ব্যাগে টেপ দিয়ে মোড়ানো তিনটি ইনটেক প্যাকেট দেখতে পায়, এসময় গ্রামের আরো অনেকে জমা হলে প্যাকেটের ভেতর কি আছে,জানার অগ্রহে একটি প্যাকেট তারা খুলে ফেলে দেখেন তার মধ্যে গাঁজা রয়েছে। সে সময় খোলা প্যাকেটটি ছিন্ন ভিন্ন ভাবে যে যার মত ভাগাভাগী করে নিয়ে যায় এবং বাকী দুটি প্যাকেটের মধ্যে একটি আলাদিপুর গ্রামের বাসীন্দা বিরেন্দ্র নাথ ও উত্তর রঘুনাথপুর গ্রামের আব্বাস আলী দুই জন দুটি প্যাকেট নিয়ে যায় এবং ইউপি সদস্য মঞ্জুরুল ইসলামের নিকট জমা দেয়। জানতে চাইলে একই কথা বলেন বিরেন্দ্র নাথ ও আব্বাস আলী, তারা বলেন গাঁজা যেহেতু একটি অবৈধ্য মাদক দ্রব্য এই কারনে তারা সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মঞ্জুরুলের কাছে জমা দিয়েছেন। আব্বাস আলী,ও বিরেন্দ্র নাথ বলেন, তারা মোটাটেপ দিয়ে বাঁধানো প্যাকেট জমা দিয়েছেন।
এদিকে বিকেল সাড়ে ৫টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়া গাঁজা গুলো প্যাকেট খোলা ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আশ্রাফুল ইসলাম। তিনি বলেন বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
প্রতক্ষ্যদর্শি গ্রামবাসীরা অভিযোগ করে বলেন গ্রামবাসীরা দুই কেজি গাঁজা সকালে ইউপি সদস্যকে দিলেও,কয়েক ঘন্টার মধ্যে তা এক কেজি হয়ে গেল কিভাবে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে আলাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাসমুছ সাখির বাবলু বলেন,ইউপি সদস্য মঞ্জুরুল দুপুরে তাকে জানিয়েছেন,তার নিকট কিছু গাঁজা গ্রামবাসীরা জমা দিয়েছে,উপস্থিত গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে ইউপি সদস্যের কাছ থেকে যে ভাবে পেয়েছেন সেই ভাবে তিনি ইউএনও’র নিকট জমা দিয়েছেন। এতো দেরি করে জমা দেয়ার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজের ব্যস্ততায় দেরি হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ভাবে পুলিশ তদন্ত করছে, তদন্ত শেষ হলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে একই কথা বলেছেন ফুলবাড়ী থানার ওসি আশ্রাফুল ইসলাম, তিনি বলেন বিষয়টি তদন্ত চলছে তদন্ত শেষ হলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।