সৈয়দপুরে নিজ বাড়িতে কাপড় ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যা
তোফাজ্জল হোসেন লুতু,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে নিজ বাড়িতে রেয়াজ উদ্দিন (৬৫) এক কাপড় ব্যবসায়ীকে মুখে উপর্যুপরি আঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) ভোরে শহরের কাজীহাট এলাকার মোল্ল্যা রোডে ওই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে। নিহতের সৈয়দপুর শহরের শহীদ ডা. সামসুল হক সড়কে জামিল গামেন্টর্স এবং একই সড়কে অন্য একটি থান কাপড়ের দোকান রয়েছে।
নিহতের স্ত্রী জরিনা খাতুন জানান, তাঁর স্বামী কাপড় ব্যবসায়ী রেয়াজ উদ্দিন (৬৫) একজন ডায়াবেটিস্ রোগী। বেশ কিছুদিন যাবৎ অসুস্থ। তাঁর চার ছেলেই যৌথভাবে বাবার কাপড়রে ব্যবসায়ী পরিচালনা করে আসছে। তিনি দিনের বেলা অল্প সময়ের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতেন। তবে রাতের বেলা বাড়িতে থাকতেন। প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিন গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেও যথারীতি তাঁর স্বামী তিনতলা বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষে ঘুুুুমিয়েছিলেন। ওই দিন রাত দুইটা পর্যন্ত তিনি স্বামী সঙ্গে অবস্থান করেন। এরপর তিনি বাড়ির নিচতলায় পৃথক একটি কক্ষে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। আর বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় তাঁর চার ছেলে জামিল (৩৩), সেলিম (৩১), দানেশ (৩০) ও ইমরান (২৮) পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। সকালে তিনি (জরিনা বেগম) স্বামীর কক্ষে গিয়ে দেখেন কক্ষের সামনে প্রধান ফটকের কাঠের দরজা খানিকটা খোলা অবস্থায় রয়েছে। পরে স্বামীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে গিয়ে তাঁর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পারেন তিনি। এ সময় তাঁর আর্তচিৎকারে বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলা বসবাস করা চার ছেলে, ছেলের বউ ও পরিবারে অন্যান্য সদস্যরা ছুঁটে আসেন।
পরে সৈয়দপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী মো. মনোয়ার হোসেন হায়দারের মাধ্যমে খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুঁটে আসেন। পরে রংপুরে ক্রাইম সিনের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়। তারা এসে বেশ কিছু সময় ধরে ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনার বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেন। এরপর থানা পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করেছেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির নিচতলার সামনের একটি কক্ষের ব্যবসায়ীর মরদেহ বিছানায় পড়ে রয়েছে। সৈয়দপুর সদর ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক নুরুজ্জামান বেগের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা হত্যাকান্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ এবং হত্যাকান্ডের ক্লু উদ্ধারে নানা বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করছেন। তবে সরেজমিনে গিয়ে মরদেহ প্রত্যক্ষ করে অনুমান করা হচ্ছে, ভোর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় বিছানায় তাঁর মুখে আঘাত করে নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আর তাঁর মুখে ভারী কোন বস্তু দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করা হয়। ফলে বাড়ির ওই কক্ষে দেওয়ালে তাঁর শরীরের রক্ত ছিটে পড়েছে।
এ সময় নিহতের বড় ছেলে মো. জামিল বলেন, তাঁর বাবার সঙ্গে ব্যবসায়ী কিংবা অন্য কোন বিষয়ে কারো কোন রকম বিরোধ নেই। কারা, কেন তার বাবাকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করেছে সে বিষয়ে কোন কিছু বলতে পারেননি তিনি।
সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সানোআর আলম এবং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল হাসনাত খান জানান, পারিবারিক কলহের কারণে এ হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের সকল সদস্যদের থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।