পঞ্চগড় আদালত চত্বরে বাদী-বিবাদী পক্ষের মারামারি, গ্রেফতার-৬
মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম-পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজিরা দিতে আসার পর বাদী-বিবাদী পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১) বেলা সোয়া ১১টার দিকে আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তেঁতুলিয়া আমলি আদালতের জিআরও এবং আদালত পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মজিবর রহমান সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা চার–পাঁচজনকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করেছেন। বেআইনিভাবে আদালত চত্বরে প্রবেশ করে মারামারি, সরকারি কাজে বাধাদান এবং সরকারি কর্মচারীকে বলপ্রয়োগের হুমকিসহ আদালতের বিচারিক পরিবেশের শৃঙ্খলা নষ্টের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে ওই মামলা হয়।
ওই মামলায় গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের বালুবাড়ি এলাকার আব্দুল জব্বারের ছেলে আবদুল হামিদ (৪০), একই উপজেলার বাইনগঞ্জ এলাকার শরীফ উদ্দিনের ছেলে নুর ইসলাম (৩৮), পাগলীডাঙ্গী এলাকার আজিজার রহমানের ছেলে সেলিম রানা (২৫), জায়গীর জোত এলাকার মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে আজিজার রহমান (৪৭), ঝাড়ুয়াপাড়া এলাকার মৃত আমের আলীর ছেলে ফারুক হোসেন (২৫) ও আব্বাস আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম (৩৮)। ওই মামলার প্রধান আসামি বাংলাবান্ধা ইউপির চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা পলাতক।
আদালত পুলিশ, পঞ্চগড় সদর থানা–পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের বালুবাড়ি এলাকার আবদুল হামিদ নামের এক ব্যক্তি জমি নিয়ে বিরোধের জেরে গত বছরের ১৮ মার্চ বাংলাবান্ধা ইউপির চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদাসহ ১৭ জনের নামে তেঁতুলিয়া থানায় মামলা করেন। যার এফ আই আর নং- ৮/৩৬। ওই মামলায় পুলিশ এই বছরের ৮ আগস্ট ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দাখিল করে।
বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলনসহ ১৪ জন আসামি আদালতে জামিন নিতে আসেন। তাঁরা আইনজীবী নিয়ে আদালতের জেনারেল রেজিষ্ট্রার অফিসার (জিআরও)’র কাছে জামিন আবেদন জমা দিয়ে কক্ষ থেকে বের হচ্ছিলেন। এ সময় মামলার বাদী আবদুল হামিদ তাঁর আইনজীবী নিয়ে অফিসকক্ষে প্রবেশ করছিলেন। কক্ষের দরজার সামনে বাদী-বিবাদী পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও হাতাহাতি শুরু হয়। পরে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা তাঁদের নিয়ে চলে যাওয়ার সময় কুদরত-ই-খুদা মিলন আদালতের নেজারত শাখায় কর্মরত ক্যাশিয়ার সুমনকে মারার জন্য তেড়ে আসেন এবং দেখে নেওয়ার হুমকি প্রদান করেন।
এর কিছুক্ষণ পর ওই মামলার বাদী আবদুল হামিদ আদালতের ক্যান্টিনে চা-নাশতা খেতে গেলে বিবাদী পক্ষের লোকজন হামিদকে মারধর শুরু করেন। এ সময় তাঁদের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে আদালতের নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা ক্যান্টিনে গিয়ে মারামারি থামিয়ে আবদুল হামিদ ও নুর ইসলামকে আটক করেন। পরে আদালত পুলিশ পঞ্চগড় সদর থানা–পুলিশকে খবর দেয়। সদর থানার পুলিশ আদালতের বাইরে অভিযান চালিয়ে অপর চারজনকে আটক করে। এ ঘটনায় মামলার পর আটক ছয়জনকে সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পঞ্চগড় সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ভবেশ চন্দ্র পাল বলেন, আদালত চত্বরে মারামারির ঘটনার সময় আদালত পুলিশের আটক করা দুজন আর থানা–পুলিশের অভিযানে আটক হওয়া চারজনসহ মোট ছয়জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।