অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই ট্রাক চলাচলের ফলে হুমকির মুখে বেইলি ব্রীজ
মোঃ শামীম হোসেন বাবু, কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)সংবাদদাতাঃ ধারনক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুন বেশি ওজনের পণ্যবাহী দশ চাকার বালু বোঝাই জ্যাম ট্রাক চলাচলের ফলে ভাঙ্গনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কিশোরগঞ্জ তারাগঞ্জ সড়কের চাঁড়ালকাঁটা নদীর উপর নির্মিত একমাত্র বেইলি ব্রীজ। ব্রীজটি দিয়ে প্রতিদিন দিনরাত সমানভাবে চাঁড়ালকাঁটা নদীর খননকৃত বালু অবৈধভাবে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্র। ফলে একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার অপর দিকে যে কোন মুহুত্বে ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ার আশংখা করছে এলাকাবাসী।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁড়ালকাটা নদীর খননকৃত বালু ১০ থেকে ১৫ টি দশ চাকার জ্যাম ট্রাকে করে দিনে রাতে সমানভাবে বেইলি ব্রীজের উপর দিয়ে পারাপার করা হচ্ছে। এসময় ব্রীজের কাছে গিয়ে দেখা যায়, নীলফামারী সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে ব্রীজের দুই দিকে ৫ টনের অধিক মালামাল পারাপার নিষিদ্ধ লিখে সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে। কিন্তু ওই চক্রটি সরকারী নির্দেশ অমান্য করে দশ চাকার জ্যাম ট্রাকে করে ৩০ থেকে ৩২ টনের বেশি বালু ব্রীজ দিয়ে পারাপার করছে। ব্রীজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রভাবশালী চক্রটি খননকৃত নদীর বালু নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্রীজের পাশ দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ কেঁটে রাস্তা তৈরী করে সেই রাস্তা দিয়ে বালু নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধটিও হুমকির মুখে রয়েছে।
বাহাগিলি ঘাট এলাকার বাসিন্দা শ্রীদাম মহন্ত, দেবেন বর্মন, আজিজার রহমান, এনদাদুল মিয়াসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বাঁধ কেঁটে রাস্তা তৈরী করে এশটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দশ চাকার জ্যাম ট্রাকে করে বালু বোঝাই ট্রাক বেইলি ব্রীজটি দিয়ে পারাপার করছে ফলে যে কোন মুহুত্বে ব্রীজটি ভেঙ্গে যাওয়ার আশংখা করছি। এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বাঁধটি কেঁটে রাস্তা তৈরী করে বালু নিয়ে যাওয়ার ফলে একদিকে যেমন বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অপর দিকে বর্ষাকাল শুরু হলে ভেঙ্গে ফেলা বাঁদ দিয়ে গ্রামে পানি ঢুকে গ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন,গত ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর নীলফামারী পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নদী খননের বালু ইজারা দেওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী ৩ টি লট টেন্ডারের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হয়। বাকি লট গুলো ইজারা না হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। বাঁধ কেটে রাস্তা তৈরী করে দশ চাকার জ্যাম ট্রাকে করে বালু নিয়ে যাওয়ার জন্য কাউকে লিখিত দিয়েছেন কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বাঁধ কেটে রাস্তা তৈরী করে দশ চাকার জ্যাম ট্রাকে কেউ বালু নিয়ে গেলে অব্যশই ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে নীলফামারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুরুল করিমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বাহাগিলি ইউনিয়নের চাঁড়ালকাটা নদীর উপর নির্মিত ব্রীজটি ঝুঁকিপুর্ণ হওয়ার কারনে সেখানে ব্রীজের দুই পাশ্বে ৫ টনের অধিক মালামাল পরিবহন নিষ্দ্ধি লিখে সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দেয়া হয়েছে। কেউ যদি সরকারী নির্দেশ অমান্য করে অতিরিক্ত পন্য বোঝাই করে মালামাল পরিবহন করে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, অবৈধভাবে নদী খননের বালু নিয়ে যাওয়ার কারনে গত ১৫ জুন এক ব্যাক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত চক্রটি দিনরাতে সমানভাবে দশচাকার জ্যাম ট্রাকে করে বেইলি ব্রীজের উপর দিয়ে বালু নিয়ে যাওয়ার কারনে ব্রীজটিও ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।