নাগেশ্বরীতে দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে ব্রিজের নির্মাণ কাজ ,ভোগান্তিতে ১০ গ্রামের মানুষ
হাফিজুর রহমান হৃদয়,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ঠিকাদারের উদাসীনতায় একটি ব্রিজের কাজ আটকে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন ১০ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। সেতুর অভাবে থমকে গেছে ওইসব এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিসহ সকল উন্নয়ন কার্যক্রম। স্থানীয়দের দাবি ঠিকাদারের উদাসীনতায় আটকে আছে ব্রিজের নির্মাণ কাজ। গণমাধ্যমকর্মীরা সরেজমিন ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে আসার পরদিন লোক দেখানো নামমাত্র কাজ শুরু করেছেন বলেও জানা গেছে। এর আগেও কোনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওই ব্রিজের স্থান পরিদর্শনে গেলে একইভাবে বহুবার দু-চারজন শ্রমিক দিয়ে কাজ করে পরে আবারও কাজ আটকে গেছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় ভেঙ্গে যায় নাগেশ্বরী পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বদিজমাপুর এলাকার বালাঘাট ব্রিজটি। পরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সেখানকার ১০ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের চলাচল। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন নাগেশ্বরী পৌরসভা, হাসনাবাদ ও নেওয়াশী ইউনিয়নের ফকিরের হাট, বদিজমাপুর, গোবর্ধ্বনকুটিসহ কয়েক গ্রামের শিশু, বৃদ্ধ, শিক্ষার্থীসহ সকল বয়সী নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। ব্রিজের অভাবে সেখানকার কৃষিপন্য বাজারজাত কিংবা আনা নেয়া করাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে তাদের। বন্যার সময় এলে তাদের আর চলাচলের রাস্তা থাকে না। বহু কষ্টে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে অতিরিক্ত ব্যয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয় স্থানীয়সহ সকল পথচারীদের। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এখন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। এদিকে মূল ঠিকাদার নিজে কাজ না করে আরেকজন সাব-ঠিকাদারকে কাজ দেয়ায় কাজে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান নাগেশ্বরী পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
পৌরসভার তথ্যমতে গুরুত্বপূর্ণ নগর উন্নয়ন অবকাঠামো (২য় ধাপ) প্রকল্পের আওতায় কাজটি টেন্ডার পান রংপুরের ঠিকাদার খাইরুল কবীর রানা। ১০০ ফিট দৈর্ঘ্যরে এই ব্রিজটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৭৩ হাজার ৪শ ৬৪ টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে মধ্যে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও থমকে আছে এই কাজ।
স্থানীয় গোলজার হোসেন, মোক্তার আলী, সোলেমন মিয়া জানান ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ার পরের বছর তৎকালীন পৌর মেয়র আব্দুর রহমান মিয়া থাকাকালীন ব্রিজ নির্মানের টেন্ডার হয়। কিন্তু তখন থেকেই ব্রিজের নির্মাণ কাজ আর হয়নি। প্রথমদিকে শুধু পাইলিং করেই ইতি টেনেছে নির্মাণ কাজের। পরবর্তীতে শুধু কেউ দেখতে আসলে নামমাত্র ২-৪ জন শ্রমিক দিয়ে সামান্য কাজের ভান করা দেখিয়ে তারাও উধাও হয়ে যায়। এবারও তাই করছে। এতে করে কৃষি পন্য আনা নেয়া, হাট-বাজার করা, শিক্ষার্থীদের স্কুল কলেজ যাওয়া আসা, রোগীদের হাসপাতালে নেয়া ও যেকোনো জরুরি সেবাসহ নানামুখী সমস্যায় পড়েছেন তারা। স্থানীয় খোতেজা বেগম জানান, কোনো গর্ভবতী মহিলার প্রসবের সময় হলে জরুরি ডাক্তার নিয়ে আসা কিংবা তাকে হাসপাতালে নিতে নিতেই চরম বিপদে পড়তে হয় তাদের। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায় ব্রিজটি না থাকায় তাদের স্কুল কলেজে যেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। বই ভিজে যায়। বর্ষাকালে স্কুলে যেতে পারে না। চলাচলের সময় অনেকে বাই সাইকেল বা মোটর সাইকেল নিয়ে চলাচল করলে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।
এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ হোসেন ফাকু বলেন, আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর দেখি এই ব্রিজসহ ২টি ব্রিজের কাজ আটকে আছে। আমি বহুবার ওই ঠিকাদারকে কাজটি করার তাগিদ দিয়েছি কিন্তু তারা অবহেলা করে কাজ করেনি। তবে আমি বলে দিয়েছি যে কাজ সম্পন্ন না হলে তাদের বিল দেয়া হবে না। আমি চাই সামনের বন্যা আসার আগেই যেনো ব্রিজের কাজ সম্পন্ন হয়।
ঠিকাদার খাইরুল কবীর রানা জানান কাজটি সোহেল নামের একজনকে দেয়া হয়েছে। আর্থিক সমস্যার কারণে হয়তো তিনি কাজটি করতে পারেননি। তবে এখন কাজ শুরু করেছেন।