কাজ করলে খাবার জোটে, না করলে নাই
রংপুর প্রতিনিধি ঃ
নারী দিবস কি এবং কেন পালন করা হয়? এসবের কিছুই জানেন না প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামের নারীরা। প্রতিদিনের মতো কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের। কাজ তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। কাজ করলে খাবার জোটে না করলে অনাহারে থাকতে হয়। গ্রামীণ নারীদের ধারণা পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও সমান তালে কাজ করতে হবে। তবেই স্বামী সন্তান নিয়ে একটু শান্তিতে হলেও দিন যাবে। তাই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও মাঠে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
৮ মার্চ সোমবার নারী দিবসের দিনে মাঠে কাজ করার পাশাপাশি মাছ ধরতে দেখা গেছে নারীদের। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের মাসানকুড়া নদীতে মাছ শিকার করছেন এক দল নারী। তারা শুধু হাত দিয়েই একেক জন এক থেকে দেড় কেজি মাছ শিকার করেছেন। সব দেশি প্রজাতির কৈ, পুঁটি, টেংরা,গছি, শিং ও পদ্মাসহ বিভিন্ন মাছ। নদীর এক পাশে ২০/২২ জন নারী দল বেঁধে মাছ শিকার করছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা ধরে মাছ শিকার করছে তারা।
তাদের প্রত্যেক জনের শিকার করা মাছের বাজার মূল্য প্রায় চার থেকে ছয় শত টাকা। বাজারে দেশি মাছের প্রচুর চাহিদা থাকায় কম সময়ের মধ্যে মাছ বিক্রি হয়ে যায়। অনেক ক্রেতা দেশি মাছ ক্রয়ে নদী পাড়ে অপেক্ষায় থাকেন নারীদের শিকার করা মাছ কম দামে পাওয়ায় আশায় । নারীরা কষ্ট করে মাছ শিকার করলেও তারা হাট- বাজারে বিক্রি করেন না। মাছ শিকারের সময় বা বাড়িতে গ্রাহক পেলেই তাদের কাছে বিক্রি করে দেন। তাও আবার কি পরিমাণ টাকা দিবে সেটাও ক্রেতার ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়। অধিকাংশ সময় ক্রেতারা পছন্দ মতো টাকা দিয়ে নারীদের কাছ থেকে মাছ ক্রয় করতে পারেন। এখন মাঠে কাজ না থাকায় অনেক নারী মাছ ধরা পেশা বেছে নিয়েছেন।
মাছ ধরতে আসা জমিলা বেগম বলেন, হামার কিসের নারী টারী দিবস। কাজ করলে খাবার জোটে না করলে নাই। আজকে প্রথম শুননু কিসের বলে নারী দিবোস। আল্লাহর ত্রিশ দিন কাজ করি খাই। কাজ নাই খাবার নাই। ১৫/১৬ দিন থাকি বসি আছি। কাজ করি যে কয়টা টেকা জোগার করছুনু তাও শেষ। ৩/৪ দিন থাকি হাস্তেয়া (হাত দিয়ে) মাছ ধরি বাড়িতে বিক্রি করি। এতে যে কয় টাকা হয় তাকে দিয়ে চাউল ডাউল আনি খাই।
মাছ শিকারি আয়াশা বেগম বলেন, জমিতে কাজ করে যে কয় টাকা পাই তা দিয়া মাছ, গোস্ত কিনবার পাই না। খালি চাউল, লবণ, তেল, মরিচ, পেঁয়াজ ও তরকারি কিনতে টাকা শেষ হয়। মাছ গোস্ত ভাগ্যে জোটে না। এক কেজির মতো মাছ পাইছি। বিক্রি করবার নই। স্বামী সন্তান নিয়া দুই দিন ভালোই খাওয়া যাবে।
মাসানকুড়া নদীর পাড়ের বাসিন্দা ছাইফুল ইসলাম খান কর্নেল জানান, এটি একটি মরা নদী । এ নদী থেকে অনেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এলাকার নারী-পুরুষের পাশাপাশি হাত দিয়ে মাছ শিকার করেন।