করোনা পরিস্থিতিতেও মধ্যপাড়া পাথর খনিতে রেকর্ড পরিমান পাথর উৎপাদন ও বিক্রি
মেহেদী হাসান উজ্জল,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
বৈশ্বিক করোনা মহামারী পরিস্থিতিতেও মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড (এমজিএমসিএল) পুরোদমে উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দেশের এই একমাত্র পাথর খনিটিতে রেকর্ড পরিমান উৎপাদনের পাশাপাশি বিক্রিও বেড়েছে রেকর্ড পরিমানে।
করোনা পরিস্থিতিতেও মাত্র সাড়ে ৩ মাসে পাথর উত্তোলন হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার টন পাথর, আর ৮ মাসে পাথর বিক্রি করেছে প্রায় ৯ লাখ মেট্রিক টন। এতে রাজস্ব আয় হয়েছে ২২৪ কোটি টাকারও বেশী। যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
দেশের একমাত্র পাথর খনি দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড (এমজিএমসিএল) বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে ২০০৭ সালে। প্রথম অবস্থায় খনি থেকে দৈনিক ১ হাজার ৫’শ থেকে ১ হাজার ৮’শ টন পাথর উত্তোলন হলেও পরে তা নেমে আসে মাত্র ৫’শ টনে। এমন অবস্থায় উৎপাদন বাড়াতে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ৯২ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের চুক্তি করে খনির উৎপাদন ও রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব দেয়া হয় বেলারুশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম-জিটিসি’কে।
কিন্তু জিটিসি গত জানুয়ারী মাস পর্যন্ত ৬ বছরে উত্তোলন করে মাত্র ৩৭ লাখ মেট্রিক টন পাথর। খনি কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ও মতবিরোধের কারনে কারনেই খনির উৎপাদন ব্যহত হয় বলে নিশ্চিত হন পেট্রোবাংলা।
গতবছরের ৭ নভেম্বর এবিএম কামরুজ্জামান মধ্যপাড়া পাথর খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দান করার পর খনি কর্তৃপক্ষ এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির কারন চিহ্নিতকরনের জন্য ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (নিরীক্ষা) শাহনাজ বেগমের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি, সম্পর্কের অবনতির কারন হিসেবে উভয় পক্ষকেই দায়ী করে। কমিটির প্রতিবেদনে খনির উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার জন্য খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঘন ঘন পরিবর্তনকে দায়ী করে।
এরই মধ্যে গত ২০ ফেব্রুয়ারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি’র সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় এবং করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারনে গত ২৪ মার্চ খনির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। নতুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন চালু রাখার জন্য গত ২৯ জুলাই ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডের ভিত্তিতে জিটিসিকে পাথর উত্তোলনের জন্য এক বছরের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি করে পেট্রোবাংলা। চুক্তি অনুযায়ী ১১.১০ লাখ মেট্রিক টন পাথর এবং দুটি খনির দুটি স্টোভ উন্নয়নের কথা বলা হয়। এই চুক্তি আগামীবছরের ১৩ জুলাই শেষ হবে। এই চুক্তির ভিত্তিতে করোনা মহামারী পরিস্থিতিতেও গত ১৩ আগষ্ট থেকে আবার পাথর উত্তোলন শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি। জিটিসির অধীনে প্রায় ৮’শ শ্রমিক অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে তিন শিফটে দৈনিক ৫ হাজার টন পাথর উত্তোলন করে।
খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম কামরুজ্জামান জানান, গত ১৩ আগষ্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হয়। আর করোনা পরিস্থিতিতেও এপ্রিল মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ মেট্রিক টন পাথর বিক্রি করে রাজস্ব আয় হয়েছে ২২৪ কোটি টাকা। উৎপাদন ও বিক্রির ক্ষেত্রে যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এজন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসিকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
তিনি বলেন, দেশের বেশকিছু মেগাপ্রকল্প মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার করছে। এরমধ্যে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, বাংলাদেশ রেলওয়ের পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু সেতুর রেলসংযোগ নির্মাণ প্রকল্প। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প মধ্যপাড়া খনির পাথর ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এতে উৎপাদন ও বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রীয় রাজস্ব আয়ে খনিটি উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জানান, খনির ইয়ার্ডে বর্তমানে পাথর মজুদ আছে ২ লাখ মেট্রিক টন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি’র মহাব্যবস্থাপক জাবেদ সিদ্দিকী জানান, করোনা মহামারী পরিস্থিতিতেও খনির উৎপাদন অব্যাহত রাখা তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। খনি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তারা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম হয়েছেন। দীর্ঘদিন লোকসানে থাকা এই খনিটিকে করোনা পরিস্থিতিতেও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করতে পেরেছেন। এ জন্য খনি কর্তৃপক্ষকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে দৈনিক ৫ হাজার টন পাথর উত্তোলন হচ্ছে, অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারা এই উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে করোনা পরিস্থিতিতেও ৮’শরও বেশী শ্রমিক কাজ করে পরিবার পরিজনের আহার যোগাতে পারায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও খনি কর্তৃপক্ষের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে খনি শ্রমিকরা।