নীলফামারীতে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত॥ কৃষকরা পাচ্ছেন নতুন আরও ৪টি বোরো জাতের নতুন ধান
ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী॥ আসন্ন বোরো মৌসুমে নতুন আরোও ৪টি জাতের ধান উৎপাদনে যাচ্ছে কৃষক। এ গুলি হচ্ছে, ২৮-ব্রি জাতের বিকল্প ব্রি-৮৮ ও ব্রি-৭৪ এবং ২৯-ব্রি জাতের বিকল্প ব্রি-৮৯ ও ব্রি-৯২ জাত ধান। এ ছাড়া গত দুই বছরের বিভিন্ন সময়ে উদ্ভাবিত ৬টি বোরো জাতের ধান গুলো রয়েছে। এ গুলো হলো ব্রি-৮১, ব্রি-৮৪, ব্রি-৮৬, ব্রি-৮৮, ব্রি-৮৯ এবং ব্রি-৯২। আগামী ৩০ নবেম্বর/২০২০ বোরো মৌসুম শুরু হবে। বাংলাদেশের মোট ধানের চাহিদার শতভাগই আসে বোরো থেকে।
আজ শুক্রবার(৬ নবেম্বর/২০২০) বিকাল ৫টায় নীলফামারী জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের কানিয়ালখাতা গ্রামে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিিিটউট(ব্রি),গাজীপুর ধান উৎপাদক প্রযুক্তি বিষয়ক কৃষক প্রশিক্ষন কর্মশালা এবং ব্রি-৯৩, ব্রি-৯৪ ও ব্রি-৯৫ মাঠ দিবসে এ কথা জানান ব্রি’এর মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির।
ব্রি’এর মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির বলেন, ১৯৭২ সালে ব্রি প্রথম অধিক ফলনশীল ধান উদ্ভাবন করে। এরপর বিজ্ঞানীরা একে একে নানা জাতের বোরো ও আমন ধান আবিষ্কার করেছে। ব্রি’র সফলতার পালকে আমন মৌসুমে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ব্রি-৯৩, ব্রি-৯৪ ও ব্রি-৯৫। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশে ধান উৎপাদনে ৮টি চ্যালেঞ্জ আছে। এগুলো হচ্ছে- লবণাক্ততা, জলমগ্নতা, খরা, আকস্মিক বন্যা, বৃষ্টিনির্ভর নিচু ভূমি, উচ্চভূমির ক্ষেত, গভীর পানির ভূমি এবং চরাঞ্চল। এসব চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে ব্রি ধান উদ্ভাবন করেছে। এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত ধানের মধ্যে ইনব্রিড ৯৪টি ও হাইব্রিড ৬টি। এসব ধান চাষের প্রকৃতি বিবেচনায় ভাগ করলে দেখা যায় রোপা আমনই ৪৫টি। এছাড়া বোরো ৪২টি, রোপা আউশ ৬টি, বোনা আউশ ৮টি, বোনা আমন ১টি, রোপা ও বোনা আউশ ১টি। বোরো জাত রোপা আউশ হিসেবে চাষযোগ্য আছে ১২টি।
অনুষ্ঠানে ড. শাহজাহান কবির আরো বলেন, নতুন উদ্ভাবিত আমন জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান ব্রি-৯৩ লালচে বর্ণের। এটি ১৩৪ দিনে উৎপাদিত হবে। ভারতীয় স্বর্ণা জাতের বিকল্প হবে এটি। ১৩৪ দিনে উৎপাদিত হবে ব্রি-৯৪। এটিও স্বর্ণার বিকল্প। এটিও লালচে বর্ণের। আর ব্রি-৯৫ হবে গভীর লালচে বর্ণের। এটি ১২৫ দিনে ফলানো সম্ভব। মূলত চিকন চালের চাহিদা মেটাতে এ ধানটি আনা হয়েছে। এ তিনটি জাত বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে খরাসহিষ্ণু হিসেবে কৃষকরা পাবেন। এবার এই তিনজাতের বীজ উৎপাদন করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮৭ ব্রি জাত ১৫০ হেক্টরে ও ব্রি ৯৩.৯৪ ও ৯৫ জাত ২০ হেক্টরে।
অনুষ্ঠানের বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিিিটউট(ব্রি),গাজীপুরের ব্রি’র পরিচালক (প্রশাসন) ড. কৃষ্ণ পদ হালদার জানান, ব্রি এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত ধানের মধ্যে লবণাক্তসহিষ্ণু জাত এনেছে ৯টি। এগুলো হচ্ছে- ব্রি-২৩, ৪০, ৪১, ৪৭, ৫৩, ৫৪, ৬১, ৬৭ ও ৭৩। জলমগ্নতাসহিষ্ণু জাত- ব্রি-৫১, ৫২ ও ৭৯টি। খরা সহিষ্ণু জাত- ব্রি-৫৬, ৫৭, ৬৬ ও ৭১। সবই রোপা আমন। এছাড়া ব্রি ঠান্ডাসহিষ্ণু ৪টি, লবণাক্ততা ও জলমগ্নতাসহিষ্ণু একটি, জোয়ার-ভাটার ধান ২টি এবং জলাবদ্ধতার ২টি জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ব্রি-৭১ এক মিটার গভীর পানিতেও ফলন দেয়।
ধানের জাত পরিচিতি ও ফলন, ধান উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি ও কাঙ্খিত ফলন অর্জনের উপায়, ধানের সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা, ধানের প্রধান রোগ ও পোকামাকড় সংক্রান্ত এক বক্তৃতায় ফলিত গবেষনা ব্রি’এর প্রধান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর পৃথকভাবে উল্লিখিত তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলার মানুষের খাবারের থালায় দৈনিক যে পরিমাণ খাবার তোলা হয় তার ৭৭ শতাংশই ভাত। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আমি সব ধরনের চেষ্টা করা সত্ত্বেও পৃথিবীর কোনো জায়গা থেকে চাল কিনতে পারিনি। আমরা যদি ভাত খেয়ে বাঁচতে চাই তাহলে আমাদের চাল পয়দা করে খেতে হবে। মূলত বঙ্গবন্ধুর এ নির্দেশনাই ব্রি’র বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবনের অনুপ্রেরণা। আমাদের লক্ষ্য ২৫ কোটি মানুষের ভাতের ব্যবস্থা করা। সে লক্ষ্যে গবেষণা এগিয়ে চলছে।
সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধান বৈজ্ঞনিক কর্মকর্তা বি রফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ কামরুল হাসান প্রমুখ। #