কিশোরীদের নিয়ে আশংকা আর আতংকে কাটে বানভাসীদের দিন
https://www.obolokon24.com/2020/07/kurigram_16.html
কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি সামান্য কমলেও বাড়ছে ব্রহ্মপূত্র নদের পানি। দ্বিতীয়দফা পানি বৃদ্ধির ফলে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে বানভাসীরা। পরিবার-পরিজন, গরু-ছাগল নিয়ে রাস্তায় বা বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। একটি পলিথিনের সেডে গাদাগাদি করে অবস্থান করতে হচ্ছে সন্তানদের নিয়ে। ভীষণ সমস্যায় ভুগছেন নারী ও কিশোরীরা। পর্যাপ্ত লেট্রিন সুবিধা না থাকায় অপরিচিত লোকজনের সাথে ভাগাভাগি করতে হচ্ছে লেট্রিন। অনেক দূর থেকে কায়িক পরিশ্রম করে আনতে হচ্ছে পানি। রাতে নারীরা একান্ত কাজে হুটহাট করে বাইরে বের হতে পারছেন না। কোনভাবে দিনটা কেটে গেলেও রাত নামতে আশংকা আর আতংকে দিন কাটে এসব পরিবারদের। গরু আর ছাগল যাতে চুরি না যায় এজন্য পাহারা বসানো হলেও কর্মহীন যুবক ও কিশোরদের নিয়ে একটা সংশয়ে রাত কেটে যায়। কিশোরী মেয়েদের কারণে দুর-দুরান্ত থেকে অপরিচিতলোকের আনাগোনায় বাবা-মায়েরা বেশিরভাগ সন্তানদের আত্মীয়দের বাড়িতে পাঠিয়েও নিশ্চিন্তে নেই।
পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী মহাসড়কে অবস্থান নেয়া একটি পরিবারের মা জানান, আমার মেয়ে একটি সরকারি স্কুলে ১০ম শ্রেণিতে পড়ে। এই সড়কে এক রাত ছিল। ছেলেপেলেদের উৎপাতে শহরে ওর খালার বাড়িতে পাঠিয়েছি। মেয়েটা ওখানে কেমন আছে জানতেও পারছি না। তিনি আরো জানান, বন্যার সময় দুটো মোরগ আর তিনটে মুরগী নিয়ে এসেছিলাম। একটা খেয়েছি। পরদিন সকালে দেখি বাকীগুলো নেই। কে বা কারা দড়ি খুলে নিয়ে গেছে। পাশের শেডে কাল রাতে কে বা কারা দুটো শাড়ী চুরি করে নিয়ে গেছে।
এক মা জানালেন, শেয়ানা মেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখাই দুষ্কর। ঘুমন্ত কিশোরী মেয়েকে রেখে ত্রান আনতে গিয়েছিলেন বাবা ও মা। এসময় প্রতিবেশী এক বয়স্ক পুরুষ তার গায়ে হাত দিয়েছে। এমন নানান তিক্ততা আর আশংকায় থাকতে হয় তাদেরকে।
এদিকে টানা দ্বিতীয় দফা বন্যায় ধরলার পানি কমলেও বাড়তে শুরু করেছে ব্রহ্মপূত্র নদের পানি। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারীয় পয়েন্টে ১০৩ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৯৬ এবং ধরলা নদীতে কমে গিয়ে ৮৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যার ফলে রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনুরুপ অবস্থা বিরাজ করছে চিলমারী উপজেলায়। এই তিন উপজেলায় নতুন করে আরো ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। চিলমারীর বড়চর, নটারকান্দি, ঢুষমারা, বজরা দিয়ারখাতা, বাতাসু কাঁজল ডাঙ্গা, হাতিয়া বকসি, নাইয়ার চর, দুইশো বিঘা, গয়নার পটল, বড় বাগ, খেদাইমারী, খেরুয়ার চর, শাখাহাতী, মনতোলা, তেলী পাড়া, মাঝস্থল, গুড়াতি পাড়া, বাসন্তি গ্রাম, মাঝি পাড়া, হাটি থানা, কালিকুরা, সড়কটারী, দক্ষিণ খামার এলাকা প্লাবিত হয়ে বাড়ী ঘরে হাটু পরিমাণ পানি হওয়ায় এসব এলাকার লোকজন আশ্রায়ন কেন্দ্র, বাঁধের রাস্তা, স্কুল, মাদ্রসাসহ বিভিন্ন উচু স্থানে গবাদী পশুসহ আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
রাজারভিটা ফাজিল মাদরাসায় আশ্রিত নজির হোসেন (৭৫) জানান, প্রথম দফা বন্যায় ঘরে পানি ওঠায় পরিবার পরিজন সহ এই মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। বন্যার পানি কমে যাওয়ায় বাড়ীতে যাওয়ার ৭ দিনের মাথায় আবারো ২য় দফা বন্যার পানি ঘরে ওঠায় আবারও মাদরাসায় আসতে হলো।
মাদরাসায় আশ্রিত করিমন (৫৫) জানান, ঘরে কোমর পরিমান পানি হওয়ায় অসুস্থ স্বামী ও সন্তানদের কে নিয়ে মাদরাসায় আশ্রয় নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি।
উত্তর রমনা বাঁধে আশ্রিত আহাম্মদ আলী (৫৫) জানান, ঘরে এক বুক পানি হওয়ায় বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।
কুড়িগ্রাম ত্রাণ ও পূণর্বাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে ৪শ’ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ এসেছে। এরমধ্যে ১৭০ মেট্রিকটন চাল উপজেলাগুলোতে উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বরাদ্দ ১৩ লক্ষ টাকার মধ্যে ৪ লাখ টাকা, ৪ হাজার শুকনা প্যাকেটের মধ্যে ২ হাজার প্যাকেট, ২ লক্ষ টাকার শিশু খাদ্য ও ২ লক্ষ টাকার গো-খাদ্য উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।