নদীর গর্জন কমে তিস্তা ব্যারাজের সামনে বালুর চর
https://www.obolokon24.com/2020/07/Tista.html
নীলফামারী প্রতিনিধি॥ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার নদীর পানি কমে বালুর চর পড়েছে! আজ মঙ্গলবার(১৪ জুলাই/২০২০) দুপুরে এমন দৃশ্য দেখে যে কারো মনে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে এই তিস্তায় কি গত দুই দিন ধরে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে ৩০ বছরের রেকড ভঙ্গ করেছিল।
এদিকে তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নদীবেষ্টিত গ্রাম, চরগ্রাম ও দ্বীপচরগুলোর নিম্নাঞ্চল থেকে এখনও পানি পুরোপুরি নেমে যায়নি। ফলে বানভাসী ও বসতঘর হারা পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
সরকারি হিসাব মতে ডিমলা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের গত দুইদিনের বন্যায় ছয় হাজার ২৭০টি পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। পাশাপাশি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে ১৪৭টি পরিবারের বসতভিটা। বিষয়টি আজ মঙ্গলবার নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায়। তিনি বলেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারগুলোর জন্য নতুন করে সরকারী ভাবে ১১০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১ লাখ টাকা ও এক হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। দ্রুততার সঙ্গে ওই পরিবারগুলোর মাঝে ত্রান বিতরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া যে ১৪৭ টি পরিবারের বসতঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে তাদের নগদ দুই হাজার করে টাকা প্রদান করা হবে।
আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৬০ মিটার) ২০ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুর ১২ টায় পুনরায় নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৮ সেন্টেমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক উপসহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রশিদ এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, নদীর পানি নেমে যাওয়ায় তিস্তা ব্যারজ ও ফ্যাড ফিউজ এলাকা থেকে রেড এ্যার্লাট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এদিকে তিস্তার দুইদিনের ভয়াবহ বন্যার শিকার পরিবারগুলো চুলা জ্বালিয়ে রান্না করতে পারছেনা বলে জানান জরপ্রতিনিধিরা। বাড়িতে পানি নামলেও বন্যার পানিতে স্যাঁত স্যাঁতে অবস্থায় রান্নার জন্য চুলা জ্বলছেনা। তারা শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। গবাদিপশু খাদ্য এবং বিশুদ্ধ পানিরও (সুপেয়) সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ফসলি জমিগুলো তলিয়ে থাকায় আমনধানের চারাগুলো নস্ট হচ্ছে।
উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান জানান, তার এলাকার ছাতুনামা ও ভেন্ডবাড়ি গ্রামে নদীভাঙ্গনে নতুন করে ৮৭ পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঈনুল হক জানান, চরখড়িবাড়ি, পূর্বখড়িবড়ি তার এলাকায় ২৪ পরিবারের বসতঘর তিস্তায় বিলিন হয়। খালিশাচাঁপানী ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন তার এলাকার বাইশপুকুর ও ছোটখাতায় ১৩ পরিবারের বসতভিটা নদীতে গেছে। খগাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন কিছামত চরে ২৩ পরিবার বসতঘর হারিয়েছে।
জনপ্রতিনিধিরা আরো জানায় বানভাসীরা রান্না করে খেতে পারছেনা। তাদের মাঝে পর্যাপ্ত পরিমান শুকনা খাবার বিতরন জরুরী হয়ে পড়েছে।
কিসামত ছাতনাই গ্রামের বানভাসি হবিবর রহমান (৫০) জানান, উজানের পানি বাড়লে তিস্তার পানি বেড়ে যায়। নিমিষেই তলিয়ে যায় এলাকার শত শত গ্রাম। রা করা যায় না বাস্তুভিটা, ঘর-বাড়ি, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, ফসল, বীজতলা ও শত শত একর আয়তনের পুকুরের মাছ।