তিস্তায় রেড এ্যালার্ট॥ উজান থেকে ভয়াবহ ঢল প্রবেশ করতে শুরু করেছে -মানুষজন সরছে
https://www.obolokon24.com/2020/07/Testa_12.html
ইনজামাম-উল-হক নির্নয়, তিস্তা থেকে॥ উজানের ভারত থেকে ধেয়ে আসা ভয়াবহ ঢলের পানি তিস্তা নদীতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। আজ রবিবার(১২ জুলাই/২০২০) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিস্তা ব্যারাজ নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার(৫২ দশমিক ৬০ মিটার) ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবহিত হচ্ছে। এটি রাত নাগাদ বিপদসীমার আরও ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে নীলফামারীর ডালিয়াস্থ্য পানি উন্নয়ন বোডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরন কেন্দ্র সুত্র। এদিকে ভয়াবহ ঢলের হাত হতে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র নিয়ে তিস্তা অববাহিকার মানুষজন নিরাপদে সরে যেতে শুরু করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নীলফামারীর ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। লাল সংকেট দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন তিস্তা ব্যারাজের ফাড ফিউজ(ফাডবাইপাস) এলাকাটি কর্মকর্তারা নজরদারী করছে। তিস্তা ব্যারাজের ফাড ফিউজ এলাকার উজান ও ভাটি এলাকায় বসবাসকৃত পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।
সুত্র বলছে, আজ রবিবার দুপুর ১টায় ভারতের তিস্তা নদীর দো-মহনী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমা (৮৫.৯৫ মিটার) ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে ধেয়ে আসছে। পাশাপাশি সেখানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ভারতের এই পয়েন্টে গতকাল শনিবার বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপার দিয়ে তিস্তার পানি ধেয়ে আসায় রাত ১২ টায় বাংলাদেশের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার (৫২.৬০ মিটার) সর্ব্বোচ ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এরপর ভারতে পানি কমে এলে আজ রবিবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেলা ৩টায় ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ও হু-হু করে উজানের ঢল ধেয়ে আসছে। সুত্র মতে ভারত গজলডোবার মাধ্যমে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ প্রতি সেকেন্ডে ২ হাজার ৪৫৭ কিউসেক পানি ছেড়েছে। সুত্র জানায় ২০ মিনিটে পানি ছাড়া হয় প্রায় সাড়ে ২৯ লাখ কিউসেক।
সুত্র মতে বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্ট হতে উজানে ভারতে তিস্তার দো-মহনীর দুরত্ব ৬৫ কিলোমিটার ও ভারতের গজরডোবার দুরত্ব ১২০ কিলোমিটার। সুত্র মতে ভারতের পাহাড়ে ও সমতলের প্রচুর বৃষ্টিপাত ও গজলডোবার জলকপাট খুলে দেয়ায় বন্যা পরিস্থিতি এ ৮৮/৯৬ অথবা ৯৮ সালের মতো হতে পারে।
এদিকে গত তিন দিনের তিস্তার বন্যায় ডিমলা উপজেলায় ৫ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাঁপানী ও ঝুনাগাছচাঁপানীর ইউপি চেয়ারম্যান গন জানায় তিস্তায় ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃস্টি করছে। ডিমলার কিছামত ছাতনাই, ঝাড়শিঙ্গেশ্বর, চরখড়িবাড়ি,পূর্ব খড়িবাড়ি, পশ্চিমখড়িবাড়ি, তিস্তাবাজার, তেলিরবাজার, বাইশপুকুর, ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখানকার মানুষজন গরু ছাগল, বাক্সপোটরা নিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। অপরদিকে জেলার জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি,গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারী এলাকার ২ হাজার পরিবার বন্যাকালিত হয়েছে। সেই সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় দুই উপজেলার অসংখ্য ফসলী জমির আমন বীজতলা, রোপিত আমনের রোপা তলিয়ে গেছে। বসতঘরগুলোতে প্রকারভেদে হাটু ও কোমড় সমান পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া মাছের খামারগুলোর পুকুরগুলো উপচে পড়ায় প্রচুর মাছ ভেসে গেছে। ওই সকল এলাকায় খবর নিয়ে দেখা গেছে পরিবারগুলো বাক্সপোটরা নিয়ে নিরাপদে সরে যাচ্ছে। এ ছাড়া গ্রামের রাস্তা দিয়ে বন্যার পানি বৈইছে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় বলেন উপজেলার নকল কর্মকর্তাগনকে সঙ্গে নিয়ে কয়েকভাবে টিম গঠন করে প্রতিটি ইউনিয়নে মনিটরিং করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা তাদের স্ব-স্ব এলাকায় নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে।