পার্বতীপুরে ইট ভাটার ধোয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
https://www.obolokon24.com/2020/06/Dinajpur.html
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ইট ভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় মৌসুমী ফসল আম, লিচু, ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে এলাকার কলাগাছ, আমের বাগানসহ ইউক্যালিপ্টাস, অন্যান্য গাছ-গাছালি পুড়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভাটার কালো ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে এলাকায় বাড়ি ঘরের চালার টিন। ইট তৈরীর জন্য এসব ভাটায় প্রতিনিয়তই ট্রাক যোগে জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) কেটে নিয়ে যাওয়ায় জমির উর্বরা শক্তি কমে গেছে। এতে এসব এলাকায় ফসলের উৎপদনও কমে গেছে।
এসব থেকে পরিত্রাণের জন্য পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছেন শতাধিক মানুষ। তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় দুই সহ¯্রাধিক মানুষের। বয়স্ক ও শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক ক্ষতির অভিযোগও রয়েছে।
এসব থেকে পরিত্রাণের জন্য পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছেন শতাধিক মানুষ। তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় দুই সহ¯্রাধিক মানুষের। বয়স্ক ও শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক ক্ষতির অভিযোগও রয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের দক্ষিন পলাশবাড়ী (ধুলাউদাল) গ্রামের তরিফুল, রেজাউল, শাহিনুর, আঃ মজিদ, মোস্তফা জামান, হাসিনুরসহ ¯'ানীরা ক্ষতিগ্রস্তদের গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জমা দেন। ওই অভিযোগের কপি দেয়া হয়েছে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর, উপজেলা কৃষি অফিসার পার্বতীপুরসহ অন্যদের।
এতে উল্লেখ করা হয়, দক্ষিন পলাশবাড়ী ও হামিদপুর মৌজায় ২টি ওয়ার্ডে অব¯ি'ত ৭টি ইট ভাটার মধ্যে কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র না থাকা সত্বেও ৬টিতে দেদারছে কার্যক্রম চালাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। অপরটির কাগজপত্র ন থাকায় ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন মালিক। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোহাগী ব্রিক্স, আরএম ব্রিক্স, সিয়া ব্রিক্স, একতা ব্রিক্স, এআর ব্রিক্স এবং একে ব্রিক্স। এসব ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাসের কারণে এলাকার পরিবেশ দূষন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা তাদের ফসল পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন। তারা আশংকা করছেন এভাবে ইটভাটার কার্যক্রম চলতে থাকলে আগামীতে এ এলাকার কোন জমিতে আম বাগান, লিচু বাগান ও ধান ক্ষেতের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
১৫ একর জমিতে আমের বাগান করেছেন আমিনুল ইসলাম বাচ্চু (৫২) নামে এক ব্যক্তি। তার অভিযোগ বাগানের পাশের ইট ভাটার ধোঁয়ায় দুই হাজার আম গাছের মধ্যে আম ধরেছে ১২শ গাছে। নিচের অংশে পঁচন ধরার পাশাপাশি ঝরে পড়ছে এসব আম। সেই সাথে পরিপক্কের সময় পেরিয়ে গেলেও আমের পূর্ণতা না আসায় আকারে ছোটই রয়েছে বাগানের এসব আম। তার অভিযোগ, পূর্বে এ বাগান ৮ লাখ টাকায় বিক্রি হলেও এবারে বাগানে এসে আমের অব¯'া দেখে ফেরত যাচ্ছেন ক্রেতা পাইকাড়রা।
অনুরুপ অভিযোগ করেছেন মোস্তফা জামান(৫০) নামে আরেক ব্যক্তি। ৩ একর জমিতে আমের বাগান করেছেন তিনি। ৪’শ গাছ লাগানো আম বাগানের মালিক লিয়াকত আলী (৬৫), কামরুজ্জামানের দেড় একর জমিতে লাগানো আম বাগান, আঃ রহমানের ২ একর জমিতে লাগানো আম, লিচু ও বাঁশ পুড়ে যাওয়ায় তারা একই অভিযোগ করেছেন। তারা আরও বলেন, এ এলাকার সবগুলো ইট ভাটা ১ কিলোমিটারের মধ্যে অব¯ি'ত। এসব ইট ভাটার ধোঁয়ায় তারা সর্বশান্ত হয়ে গেছেন বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।
ক্ষতিগ্র¯'রা আরও জানান, এলাকার ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ অর্থনৈতিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়তই। এ ঘটনায় প্রশাসনের নিকট একাধিকবার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
জানা গেছে, পার্বতীপুর উপজেলায় ৫০ টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৩টির বৈধ কাগজপত্র আছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র হামিদপুর ইউনিয়নেই রয়েছে ১৯টি ইটভাটা। তার মধ্যে ৬টির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এআর ব্রিক্স এর সত্ত¡াধিকারী হাজী রেজওয়ানুল হক বলেন, ২০১১ সাল থেকে তিনি ভাটা পরিচালনা করে আসছেন। এর আগে কোন অভিযোগ ওঠেনি। তার ইটভাটার পরিবেশ অভিদপ্তরের ছাড়পত্র ছিলো। এবার এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র পাননি তিনি। তিনি আরও বলেন, আগে ফসলি জমির ১ হাজার মিটারের মধ্যে ইটভাটার ছাড়পত্র দেয়া হতো। আর বর্তমানে ৫০০ মিটারে। তার ইটভাটা থেকে ৮০০ মিটার দূরত্বে ফসলি জমি অব¯ি'ত। এ কারণে ছাড়পত্র পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
একে ব্রিক্স এর মালিক হাজী কালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে তিনি ভাটা চালিয়ে আসছেন। চলতি বছর নিয়ে তার ইটভাটা পরিচালনার বয়স ৩ বছর পেরিয়ে গেছে। তবে ইতিপূর্বে কেউ অভিযোগ করেনি। যারা আমাকে ইটভাটার জন্য জমি দিয়েছেন এখন তারাই আবার অভিযোগ করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে, গণস্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রাকিবুল হক টুটুল, জিল্লুর রহমান সরকার, আমিনুল হক বাচ্চু, শাহাদত হোসেন ও মোঃ শফিকুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে বলেন, আগে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হতো। এখন কয়লার পরিবর্তে কয়লার ডাস্ট, এর সাথে বোতাম, প্লাস্টিক ও রাবারকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন কেউ কেউ। ফলে বিষাক্ত গ্যাস, কালো ধোঁয়ায় গাছপালাসহ ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানান অসুখ বিসুখ হচ্ছে বলে জানান তারা।
পরিবেশ ও বন বিভাগ মন্ত্রনালয়ের সহকারী পরিচালক মিহির লাল সরদার জানিয়েছেন, উন্নত মানের কয়লা ব্যবহার করে ইট ভাটা পরিচালনার নিয়ম আছে। তবে এর ব্যত্যয় হলে ছাড়পত্র পাওয়ার কথা নয়। কয়লার ডাস্ট ও অন্যান্য উপাদান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে ক্ষয়ক্ষতির আশংকা রয়েছে।
এ ব্যাপারে পার্বতীপুর কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান খান বলেছেন, উল্লেখিত ৬ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে তদন্তভার দেয়ার পর তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ শাহনাজ মিথুন মুন্নী বলেছেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে তদন্তভার দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যব¯'া গ্রহণ করা হবে ।