চাঁদ দেখা যায়নি, সোমবার ঈদ
https://www.obolokon24.com/2020/05/Eid.html
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ধর্ম সচিব নুরুল ইসলাম।
শনিবার দেশের আকাশে কোথাও সাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। আজ ছিল ২৯তম রোজা। তাই আগামীকাল দেশে ৩০তম রোজা পালিত হবে। অর্থাৎ আগামী সোমবার (২৫ মে) উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর।
আজ (২৩ মে) শনিবার বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত বৈঠক থেকে ঈদের ঘোষণা দেওয়া হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা শায়লা শারমীন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, আজ বাদ মাগরিব ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে বৈঠকে বসে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি শেখ মো. আব্দুল্লাহ।
বৈঠকের পর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের কোনো জায়গা থেকেই চাঁদ দেখা যাবার খবর পাওয়া যায় নি। সুতরাং সোমবারই ঈদুল ফিতর পালিত হবে।
মূল চাঁদ দেখা কমিটির সাথে একযোগে প্রতিটি জেলায় একটি করে কমিটি কাজ করে। দেশের কোথাও চাঁদ দেখা গেলে সেটি স্থানীয় প্রশাসন বা ইসলামিক ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে জেলা কমিটির কাছে পৌঁছায়। পরে জেলা প্রশাসন দ্রুত সেটি নিশ্চিত করে বিভিন্ন ভাবে- যেমন স্থানীয় অনেকে চাঁদ দেখেছে কি-না কিংবা স্থিরচিত্র বা ভিডিও চিত্র এসব দ্রুত সংগ্রহ করে নিশ্চিত হয়ে থাকে স্থানীয় প্রশাসন।
সেক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য ও ভালো দৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন কাউকে চাঁদ দেখতে হবে। পরে সে খবরটি যাচাই হয়ে জেলা কমিটি হয়ে কেন্দ্রীয় চাঁদ দেখা কমিটির হাতে পৌঁছায়। একই সাথে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেশজুড়ে যে ৭৪টি স্টেশন আছে সেখান থেকেও তথ্য নেয় চাঁদ দেখা কমিটি।
যদি আবহাওয়া অনুকূল না থাকে অর্থাৎ খালি চোখে চাঁদ দেখার সুযোগ না থাকলে আবহাওয়া স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যও চাঁদ দেশের আকাশে উঠেছে কি-না তা নিশ্চিত হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রসঙ্গত, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কার মধ্যেই আসছে এবারের ঈদ। ঈদকে ঘিরে যে আনন্দ-উচ্ছাস থাকার কথা তা ম্লান করে দিয়েছে মহামারী করোনাভাইরাস। করোনা মোকাবেলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধে সরকারের নির্দেশনায় এবার খোলা মাঠে হচ্ছে না ঈদের নামাজের জামাত। ঈদ জামাত হবে মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হচ্ছে না। হচ্ছে না শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতও। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতি বছরের ন্যায় ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, এবারের ঈদ জামাত আয়োজনে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। সাধারণত প্রতি বছর রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটিতে গড়ে ৫টি করে ঈদ জামাত আয়োজিত হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, এবারের ঈদে আমাদের পক্ষ থেকে খোলা মাঠে ঈদ জামাত আয়োজনের কোনো উদ্যোগ থাকছে না। তবে সরকারের নির্দেশনা মেনে মসজিদ গুলোতে ঈদ জামাত আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ঈদ জামাত প্রসঙ্গে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের গণসংক্রমণ রোধে কোনো অবস্থাতেই বাইরে ঈদ জামাত আয়োজন করা যাবে না। এরজন্য সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। আমি নগরবাসীকে অগ্রিম ঈদ শুভেচ্ছা জানাই। আর এটাও অনুরোধ করছি, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবারের ঈদটা এভাবে উদযাপন করা হোক। আমরা সবাই সুস্থ থাকলে আবার আগের মতো আয়োজন করা যাবে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে এবার পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ইসলামিক ফাউেন্ডশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এ জামাতের ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। মুকাব্বির থাকবেন মুয়াজ্জিন হাফেয কারী কাজী মাসুদুর রহমান।
দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। এ জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী। তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা অনুষ্ঠিত হবে। এই জামাতে ইমামতি করবেন পেশ ইমাম হাফেয মাওলানা এহসানুল হক। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ জামাত। এ জামাতে ইমামতি করবেন পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। এ জামাতের ইমামিত করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ুর রহমান খান।
এই ৫টি জামাতে কোনো ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
এদিকে মসজিদের ওযুখানা ব্যবহার না করে প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসস্থান থেকে ওযু করে মসজিদে আসাসহ ১৪টি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
ঈদ উপলক্ষে ডিএমপির নির্দেশনাগুলো হলো-
১. ঈদের নামাজের জামাতের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
২. ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
৩. করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদে প্রবেশদ্বারে সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
৪. মসজিদের ওজুখানা ব্যবহার না করে প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসস্থান থেকে ওজু করে মসজিদে আসতে হবে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৫. ঈদের নামাজের জামায়াতে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে।
৬. ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে।
৭. এক কাতার অন্তর অন্তর কাতারবদ্ধ হতে হবে।
৮. করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে মসজিদে জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো থেকে বিরত থাকুন।
৯. মসজিদে শৃঙ্খলার সঙ্গে প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক ব্যবস্থা রাখার জন্য মসজিদ কমিটিকে অনুরোধ করা হলো।
১০. করোনা পরিস্থিতিতে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাসায় যাতায়াত করা থেকে বিরত থাকুন।
১১. ঈদের দিন ও পরবর্তী সময়ে বিনোদন কেন্দ্রে যাতায়াত না করে নিজ ঘরে অবস্থান করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করুন।
১২. ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে যারা ঢাকার বাইরে যাবেন তারা তাদের বাসা অথবা ফ্ল্যাটের মেইন গেটে অটোলক ব্যবহার করুন এবং বাসাবাড়ি ত্যাগের আগে রুমের দরজা-জানালা সঠিকভাবে তালাবদ্ধ করুন।
১৩. মালিক পক্ষ স্ব স্ব মার্কেট/শপিংমলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করুন এবং আপনার এলাকার থানা/ফাঁড়ির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখুন।
১৪. খালি বাসায় মূল্যবান সামগ্রী না রেখে ঢাকায় অবস্থান করছেন এমন আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় তা রেখে যান।