নতুন বছরের প্রথম নীলফামারীতে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক পেয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দে মাতোয়ারা

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয় নীলফামারী প্রতিনিধি ॥ শিশুদের হাতে নতুন বই দেখে আনন্দিত অভিভাবকরাও। কোমলমতি এক শিক্ষার্থীর মা খাদিজা বেগম বলেন, ছেলেমেয়েরা বছরের শুরুতে বই পেলে তাদের মধ্যে লেখাপড়ার প্রতি আলাদা একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
লেখাপাড়ার প্রতি অনুপ্রেরণা জেগে উঠে। আগে তো এভাবে বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই পাওয়া যেতো না। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর  বিনামূল্যেই বই দিচ্ছে। এ সময় তিনি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
“শেখ হাসিনার প্রতিজ্ঞা মান সম্মত শিক্ষা” “শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ বুধবার(১ জানুয়ারি/২০২০) দেখা যায় নীলফামারীর প্রতিটি স্কুলের মাঠজুড়ে শত শত শিশুর সমাগম। তাদের কলরবে গমগম করছিলো স্কুলগুলোর প্রাঙ্গণ। যেন স্বর্গের হাসি ভর করেছিল ওদের মুখে। সবার হাতেই ছিলো নতুন বই। আনন্দে উদ্বেলিত তারা। কখনো হর্ষধ্বনি দিয়ে উঠছিল। কখনো একসঙ্গে বই উঁচু করে দেখাচ্ছিল। উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে হাত বুলিয়ে নতুন বই এর ঘ্রাণ নিচ্ছিলো তারা। এ যেন এক অন্য রকম উৎসব।
সকালে নীলফামারীতে জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী পাঠ্যপুস্তক বিতরনের উদ্ধোধন করেন। হাতে নতুন বই পাওয়ার খুশিতে  উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিলো শিশুদের মুখ। বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরে উৎসবে উৎসবে বিনামূল্যের বই পেয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দে মাতোয়ারা।
নীলফামারী-১ আসন(ডোমার-ডিমলা) আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার, নীলফামারী-৪ আসন(কিশোরীগঞ্জ-সৈয়দপুর) আসনে আহসান আদেলুর রহমান আদেল বই বিতরনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। তবে নীলফামারী সদরে আসাদুজ্জামান নুর এমপি ও নীলফামারী ৩ আসনে মেজর(অবঃ) রানা মোঃ সোহেল এমপি এলাকায় উপস্থিত না থাকায় তারা বই বিতরনে অংশ নিতে পারেননি বলে জানা গেছে।
এদিকে জেলা শহরের আনন্দ নিকতন মডেল স্কুল, নতুন বাজার মডল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারী নতুন দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, জানকীনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেন নীলফামারী পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায় জেলার ছয় উপজেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৯৯টি নতুন বই, ২ হাজার ৮৮২টি স্কুলে বিতরণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে প্রথম থেকে পঞ্চম পর্যন্ত ১৯ লাখ ৮ হাজার ২৪৬টি এবং প্রাক-প্রাথমিকে ৬৩ হাজার ১৫৩টি বই রয়েছে। এছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ে ২৫ লাখ ৬৬হাজার ৬৩টি, দাখিলে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৫১৮টি, এসএসসি ভোকেশনালে ১ লাখ ২ হাজার ৮৯০টি, দাখিল ভোকেশনালে ১৮ হাজার ৫শ, কারিগরি ট্রেডে ৪৬ হাজার ৫শ এবং ইবতেদায়িতে ৩৯ হাজার ৫শত নতুন বই বিতরণ করা হচ্ছে।
অপরদিকে জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৮৫টি, দাখিল ও এবতেদায়ী মাদ্রাসা ১৪৫টি রয়েছে। ওই ৪৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ৬০ হাজার ২৫৩ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৩৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩১৫ কপি বই বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৪০ শিক্ষার্থীদের বিপরীতে ২৪ লাখ ৭৬ হাজার ৯৮৫টি, দাখিল পর্যায়ের ৩৯ হাজার ৩৩৩ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৫৫০টি, এবতেদায়ী পর্যায়ের ৪৪ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৬০০টি, দাখিল ভোকেশনাল ৩৮০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১৬ হাজার ৬৩৫টি, এসএসসি ভোকেশনাল ৪ হাজার ৫৮০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৬ হাজার ৯১০টি এবং এসএসসি ও দাখিল (ভোকেশনাল ট্রেড) ৩৮০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১৬ হাজার ৬৩৫টি বই বিতরণ করা হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তাজুল ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, জেলার শিক্ষার্থীদের জন্য সকল বই আমরা পেয়ে নতুন বছরের প্রথম দিন সব স্কুলে বই উৎসবের মাধ্যমে তাদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছি।

অন্যদিকে আলহাজ্ব মোবারক হোসেন অনির্বান বিদ্যাতীর্থ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এক শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিয়ে উপজেলায় বই উৎসবের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজাউদ্দৌলা। স্কুলের সভাপতি আমজাদ হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সহকারি কমিশনার ভুমি গোলাম ফেরদৌস, শিক্ষাবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফফার, উপজেলা আ'লীগের সাধারন স¤পাদক সহীদ হোসেন রুবেল, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার চঞ্চল কুমার ভৌমিক, উপজেলা শিক্ষা অফিসার নুর মোহাম্মদ, অধ্যক্ষ বিবেকানন্দ মোহন্ত, অধ্যাপক (সাবেক) আনিছুর রহমান চৌধুরী, প্রধান শিক্ষক রোকনুজ্জামান চৌধুরী রোকন প্রমুখ। এদিকে আলহেরা এডুকেয়ার হোম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কেজি স্কুল প্রাঙ্গনে এক শিশুর হাতে বই তুলে দিয়ে প্রাথমিক স্কুলের বই উৎসবের উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর। সভাপতিত্ব করেন পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান, প্রেসক্লাব সাধারন স¤পাদক মাহবুবর রহমান মনি, প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান প্রমুখ। এদিকে একই অতিথিবৃন্দ জলঢাকা মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে বই উধসবের উদ্বোধন করেন। #