পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসা বন্ধে বিক্ষোভ, লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ (ভিডিও সহ)
https://www.obolokon24.com/2019/02/panchagar_13.html
সাইদুজ্জামান রেজা, পঞ্চগড়:
আহমদিয়া মুসলিম জামাতের পূর্বঘোষিত বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড় শহর ও আশপাশ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে।
বিক্ষুব্ধ জনতা শহরে ও জেলা শহরের আহমদনগরে তাণ্ডব চালায়। তারা আহমদনগরে আহমদিয়া মুসলিম জামাতের লোকজনদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালায়।
এ সময় মহাসড়ক দুই ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রাখলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করে। একপর্যায়ে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। এতে পুলিশসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে অর্ধশত আহত হন। গুরুতর আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আক্কাস আহমদ জানান, জেলা প্রশাসন জলসা স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানানোর পরও আন্দোলনকারীরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক ও বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে রাত রাত ৯টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত ওই সড়কগুলোয় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে। আতঙ্কে পঞ্চগড় বাজারের সব দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।
রাত সোয়া ১১টার দিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ গোলাম আজম পঞ্চগড় বাজার জামে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জলসার অনুমতি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। কারো ‘প্ররোচনায়’ বিভ্রান্ত না হয়ে সবাইকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু আন্দোলনকারীদের একটি অংশ তখন শহরতলীর আহমদ নগরে গিয়ে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে আহমদিয়াদের ঘরবাড়ি ও জলসাস্থলে হামলা চালায়।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছোড়ে।
আহমদনগর মুসলিম জামাতের সভাপতি তাহের যুগল অভিযোগ করেন, প্রায় দুই ঘণ্টার তাণ্ডবে তাদের অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। বাড়ির মেয়েদের টেনেহিঁচড়ে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
ঘটনার পর রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবদুল্লাহ সাজ্জাদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার মো. গিয়াসউদ্দিন আহমদ, পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউস সুন্নাহ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এহেতেশাম রেজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাঈমুল হাছানসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে যান।
জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, জলসা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও বিক্ষোভ করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এ জন্য তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।