ঢাবির ছাত্রীকে অপহরন মামলায় নীলফামারীর খাদ্য পরিদর্শক জুয়েলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো
https://www.obolokon24.com/2019/02/nilphamari89.html
বিশেষ প্রতিনিধি ১২ ফেব্রুয়ারি॥ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক ও সরকারী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এলএসডি) তফিউজ্জামান জুয়েলকে অবশেষে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে উক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার তদন্ত করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নীলফামারী জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ডিসিফুড) কাজি সাইফুদ্দিন অভি।
মামলার বিবরনে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সাংবাদিক আলী আকতার গোলাম কিবরিয়ার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। “আমরাই পারি” নামে একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজের অংশ হিসেবে দুটি মাইক্রোবাসে করে তারা চলকি বছরের ২ জানুয়ারি ১৭ জন বন্ধু বান্ধবী মিলে শীতবস্ত্র বিতরনে যায়। বিকালে ফিরার পথে তফিউজ্জামান জুয়েলসহ সাত-আটজন মাইক্রোবাসে এসে পথরোধ করে অস্ত্র বের করে অন্যদের নামিয়ে দিয়ে মাফলার দিয়ে ওই শিক্ষার্থীর মুখ বেঁধে ফেলে। এ সময় বন্ধু ও বান্ধবীরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাদেরকেও ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করে জুয়েল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীকে লাথি, কিল-ঘুষি মারা হয়। চিৎকার চেঁচামেচির ফলে স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে জুয়েল সহ তার সঙ্গীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা থানায় জুয়েলকে প্রধান আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং ৩ তারিখ ০৪/০১/২০১৯)। ওই ঘটনার পর তফিউজ্জামান জুয়েল আতœগোপনে চলে যায়। ফলে তিনি তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত হয়ে পড়ে। ঘটনাটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল অবলোকন সহ বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পায়। এ অবস্থায় ওই কর্মকর্তা উচ্চ আদালত হতে জামিনের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারী বিকালে লালমনিরহাট চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্টেট আদালতে আতœসমর্পন করে। বিজ্ঞ আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরন করেন। বর্তমানে ওই কর্মকর্তা লালমনিরটহাট জেলা কারাগারে রয়েছে। এই খবরও অবলোকন সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পায়। এর প্রেক্ষিতে কর্মস্থলে বিনা ছুটিতে অনুপস্থিত সহ ওই ঘটনার মামলার কারন দেখিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে বৃহস্পতিবার ৭ ফেব্রুয়ারি রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রায়হানুল কবীরের স্বাক্ষরিত এক পত্রে ডিমলা উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক ও সরকারী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এলএসডি) তফিউজ্জামান জুয়েলকে বাংলাদেশ সরকারি চাকরি বিধিমালা ১ম খন্ড এর রুল-৭৩ মোতাবেক সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
অপর দিকে এ ঘটনা নিয়ে উক্ত খাদ্য পরিদর্শক তফিউজ্জামান জুয়েলের বিষয়ে এক সদস্যের একটি তদন্ত টিম তদন্ত শুরু করে। আজ মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারী) নীলফামারী জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ডিসিফুড) কার্যালয়ে তদন্ত করেন জয়পুরহাট জেলা খাদ্য কর্মকর্তা (ডিসিফুড) মনির হোসেন। তদন্তে ডিমলা উপজেলার খাদ্য অধিদপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী ও উক্ত জুয়েলের পরিবারের সদস্যদের স্বাক্ষ্যগ্রহন করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা জয়পুরহাট জেলা খাদ্য কর্মকর্তা (ডিসিফুড) মনির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে অনুযায়ী তদন্ত করে আগামী দুই দিনের মধ্যে তদন্ত রির্পোট ঢাকায় প্রেরন করা হবে।
উল্লেখ যে, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক ও সরকারী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এলএসডি) তফিউজ্জামান জুয়েল লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার দক্ষিন গুড্ডিমারী মহল্লার ফজলুল হকের ছেলে। ছাত্র জীবনে জুয়েল হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিল। গত চার বছর পূর্বে সরকারী চাকুরী পেয়ে নিজ বাড়ি হতে মাত্র ১৫ কিলোমিটার অদুরে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় পোষ্টিং নেয়। সেই থেকে ডিমলায় কর্মরত রয়েছে জুয়েল।ওই মামলার জুয়েল প্রধান আসামী। অপর আসামীরা হলো ওমর ফারুক মানিক, মো.রানা, মো. ফেরদৌস এবং মাইক্রোবাস চালক মো. জহুরুল। বর্তমানে সকল আসামী আটক হয়ে জেলহাজতে রয়েছে।
হাতিবান্ধা থানার ওসি ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন ঘটনাটি তদন্তের প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে প্রেরন করা হবে। #