প্রাণীদের প্রতি রেহেনার ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ এলাকাবাসী
https://www.obolokon24.com/2018/07/thakurgaon_51.html
আব্দুল আউয়াল ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি-
সকল প্রাণীর মাঝে প্রেম-ভালবাসা বিরাজমান থাকে। মানুষ যেমন মানুষকে ভালোবাসে তেমনি প্রাণীরাও প্রাণীদের ভালোবাসে। আবার কিছু কিছু ভালোবাসা হয় মানুষ ও প্রাণীর মাঝে। এতে মানুষ ভালোবাসে প্রাণীকে। আবার কোনো কোনো সময় প্রাণীও ভালোবাসে মানুষকে। প্রাণীদের প্রতি ঠিক এমনি একটি ভালোবাসা চোখে পড়ে ঠাকুরগাঁও রোড সুগারমিল কোলনি এলাকার মৃত হবিবর রহমানের স্ত্রী রেহেনা বেগম (৫৫)’কে দেখে।
সকল প্রাণীর মাঝে প্রেম-ভালবাসা বিরাজমান থাকে। মানুষ যেমন মানুষকে ভালোবাসে তেমনি প্রাণীরাও প্রাণীদের ভালোবাসে। আবার কিছু কিছু ভালোবাসা হয় মানুষ ও প্রাণীর মাঝে। এতে মানুষ ভালোবাসে প্রাণীকে। আবার কোনো কোনো সময় প্রাণীও ভালোবাসে মানুষকে। প্রাণীদের প্রতি ঠিক এমনি একটি ভালোবাসা চোখে পড়ে ঠাকুরগাঁও রোড সুগারমিল কোলনি এলাকার মৃত হবিবর রহমানের স্ত্রী রেহেনা বেগম (৫৫)’কে দেখে।
সোমবার
সকালে ঐ এলাকার উত্তর হরি-হরপুর গ্রামে গেলে চোখে পড়ে এমনি একটি দৃশ্য।
ফাঁকা একটি মাঠে ভেড়াগুলো খোঁলা আকাশের নিচে চরায় বেড়াচ্ছেন আনন্দের সাথে।
কিন্তু অর্থের অভাবে সঠিক পরিচর্যা নিতে পাড়ছেন না তিনি তার ভেড়াগুলোর।
এরপরেই
কাছে যাওয়া হলো রেহেনা বেগমের। এতো আনন্দের সাথে ভেড়া চরানো ব্যাপারটি
জানতে চাইলে তিনি এক উত্তরে বলে উঠেন,‘আমি আমার সন্তানকে যে পরিমান
ভালোবাসি এই ভেড়াগুলোকেও তেমনি ভালোবাসি’। বেড়ে উঠলো আগ্রহ তার প্রতি।
এবারে শুনা গেলো তার জীবনের কিছু দু:খ ভারা কাহিনী।
যানা
যায়, দীর্ঘদিন আগেই মারা যায় রেহেনা বেগমের স্বামী হবিবর রহমান। জীবিত
থাকা অবস্থায় স্বামী বিক্রি করতেন কলা। মাঝে মাঝে চালাতেন রিকশা। এভাবেই
কোন রকম ভাবে কেটে যেতো সংসার। এর পরে স্বামীর হঠাৎ মৃত্যুতে পরিবারের উপরে
নেমে পড়ে আকাশের ভার। সন্তানদের নিয়ে যাবেন কোথায়। কি করবেন কি না করবেন।
নেই থাকার কোন জায়গা। অবশেষে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় উত্তর হরি-হরপুর গ্রামে
একটি জায়গায় তাকে দেওয়া হয় থাকতে। আস্তে আস্তে সকলের সাহায্য নিয়ে দিনের পর
দিন কষ্টের মধ্যে কেটে যায় তার সংসার। এক পর্যায়ে বিয়ে দিলেন বড় ছেলে
বাহাদুরের। তিন সন্তানদের মধ্যে কেউ কাজ করেন হোটেলে, কেউবা মানুষের ধার
করা রিকশা চালায়,কেউবা বেকার। অভাবের সংসারে অবশেষে থাকলেন না কেউ। চলে
গেলেন দুই ছেলেই। বড় ছেলের বিয়ের পরেই রেহেনাকে তার ছেলে ডিমেন্ডের টাকা
দিয়ে কিনে দেয় ২ টি ভেড়া। এর পরে আস্তে আস্তে এই ভেড়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে
এক পর্যায়ে প্রায় ৩০ টির মতো ভেড়া হয় রেহেনার।
অভাবের
সংসারে কিভাবে ভেড়াগুলো দেখাশুনা করেন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
যেখানে নিজেই পাইলে খাই,মানুষ দিলে খাই সেখানে আর কিভাবে ঠিক মতো এই
ভেড়াগুলো দেখাশুনা করবো। বাসার সামনে মাঠ, সকালবেলা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
মাঠে গরু ও ছাগলের ভিড়ে এলোমেলো ঘুরে ঘাস খায়ে বেড়ায়। সারা দিন এই মাঠ আর
আশপাশের সড়কে ঘুরেফিরেই ভেড়াগুলোর বেলা কেটে যায়। ভেড়াগুলো বাড়ি ফিরে
সন্ধ্যাবেলা। এর পরে আর কি খেতে দিবো নিজেরি পেটে ভাত একবেলা জুটে তো আরেক
বেলা নাই।
এর পরেই হার না মেনে ভালোবাসার মর্যাদা রেখে অভাবের দিনের মধ্যেও তিনি অনেক আনন্দের সাথেই লালন পালন করে যাচ্ছেন ভেড়াগুলো।
স্থানীয়
বাসিন্দা জাহানার জুই নামের একজন বলেন, অনেকদিন ধরেই দেখে আসছি এই রেহেনা
বেগমকে। সারাদিন যার তার বাসায় কাজ করতেন তিনি। হঠাৎ করেই তার কাজের দিকটি
একটু কমিয়ে যায়। খবর নিয়ে দেখি তিনি ভেড়া নিয়ে ব্যস্ত। কারন তিনি বাসা থেকে
বেশিক্ষন বাহিরে থাকলে কুকুরে যদি তার ভেড়া খেয়ে ফেলে এই ভয়ে তিনি এখন
একটু কম সময় অন্যের বাসায় কাজ করেন। রেহেনা বেগম যেভাবে ভেড়াগুলো সাথে সময়
দেয় তাতে স্পৃষ্ট তার প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসাটি দেখা যায়। আসলেই তিনি
অনেক মহৎ। প্রাণীদের প্রতি এমন ভালোবাসা দেখে আমি সহ এলাকার সকলেই আমরা
মুগ্ধ। তবে মহিলাটি অনেক কষ্টেই আছেন। শুনেছি তার বয়স্ক ভাতা/বিধবা ভাতা
কিছ্ইু নেই। যদি এগুলো করে দেওয়া হয় তাহলে অনেকটাই ভালো হবে।
অবশেষে
কথা হলো সেই প্রাণীর প্রতি এতো ভালোবাসা দেখানো ব্যক্তি রেহেনা বেগমের
সাথে, ভেড়া পালনে বলতে গেলে কষ্ট অনেক কম। তাদের কোনো বিমার (অসুখ) নাই।
ভেগা মূলত বছরে একটি স্ত্রী ভেড়া দুবার এক থেকে দুটি বাচ্চা প্রসব করে
থাকে। একটি ভেড়ি থেকে বছরে দুই থেকে চারটি বাচ্চা পেয়ে থাকি। সব থেকে বড়
কথা ভেড়া পালনে বাড়তি কোনো শ্রম দিতে লাগে না। তিনি আরো বলেন, মানুষের সাথে
মানুষেই প্রতারণা করে এটা দুনিয়ার বাস্তবতা। কিন্তু প্রাণীরা এই প্রতারণা
করেনা। এই ভেড়া পালন আমার কাছে অনেক সৌখিন। তবে কষ্ট লাগে এখানেই যখন সঠিক
পরিচর্যার ফলে মারা যায় আমার এই আদরের ভেড়াগুলো। খুবি কষ্ট লাগে। যদি সঠিক
পরিচর্যা নিতে পারতাম তাদের ভালো খাবার দিতে পাড়তাম তাহলে হয়তো এর আগে আমার
যে ভেড়াগুলো মারা গেছে সেগুলো আর মড়তো না।
তিনি
আরো বলেন, আমার বয়স ৫৫ এর মতো বয়স হবে কিন্তু আমার কোন বয়স্ক ভাতার কার্ড
নেই। আমার স্বামী মারা যাবা দীর্ঘদিন হয়ে গেলো অথচ আমার কাছে বিধবা ভাতার
কোন কার্ড নেই। শুনেছি আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমার মতো অনেক গরীব মানুষদের
সাহায্য করে। তাহলে আমি কি গরীব নয়.? আমার কি এইসব ভাতা গুলো পাবার অধিকার
নেই .?
এদিকে জেলা
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন জানান, ভেড়া পালনের সুবিধা অনেক। তাদের
জন্য বাড়তি কোনো খাবার লাগে না। একটু খেয়াল রাখলেই চলে। তেমন কোনো শ্রমও
দিতে হয় না। তবে রেহেনা বেগমের যদি প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার কোন রকমের কোন
সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা অবশ্যই সেটার চেষ্টা করবো।
এ
ব্যাপারে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দীক জানান,
যেহেতু রেহেনা বেগমের বয়স্ক ভাতার জন্য প্রাপ্ত নয়। বয়স্ক ভাতা দিবার একটি
নিয়ম আছে। মেয়েদেও জন্য বয়স কমপক্ষে ৬০ এর মধ্যে হতে হবে। সেক্ষেত্রে তার
এই ভাতাটি এই সময়ে হবেনা । তবে তার বিধবা ভাতার জন্য তাকে একটি দরখাস্ত
করতে হবে তাহলেই আমরা সেটার একটি ব্যবস্তা করে দিবো অবশ্যই।