ফলোআপ- সৈয়দপুরে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ননপ্রকল্প -২ আরসিসি পিলার রক্ষার্থে বাঁশ


 
 তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি :

 নীলফামারীর সৈয়দপুরে আশ্রয়ন প্রকল্প - ২ এর আওতায় ঘর তৈরিতে আরসিসি পিলারে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার হয়নি। তবে আরসিসি পিলার (খুঁটি) রক্ষার্থে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এ ঘটনাটি ঘটেছে সৈয়দপুর উপজেলার পাঁচ নম্বর খাতামধুপুর ইউনিয়নের সরকারপাড়া ও পাইকারপাড়া। সিডিউল মোতাবেক উপকরণ-সামগ্রী ব্যবহার ও যথাযথাভবে কিউরিং না করার কারণে তৈরিকৃত পিলারগুলো ঘরের খুঁটি হিসেবে লাগানোর প্রাক্কালেই ভেঙ্গে পড়ছে। বের হয়ে পড়েছে পিলার অভ্যন্তরে থাকা রড। যদিও ৪ বাই ৪ বর্গফুটের ওই পিলার ৬ এমএমের গ্রেড রড, প্রথম শ্রেণীর ইটের খোঁয়া ও উন্নত মানের সিমেন্ট দিয়ে যথাযথভাবে তৈরির কথা। নি¤œমানের কাজের ফলে এমনটি ঘটছে বলে প্রকৌশল সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
 প্রকল্পের নীতিমানা, সিডিউল, প্রাক্কলন হতে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্প- ২ এর অধীনে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৩০০ ঘর নির্মাণের জন্য তিন কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। এর সুবিধাভোগী দুস্থ অসহায় মুক্তিযোদ্ধা,বিধবা মহিলা,স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা, শারীরিকভাবে পঙ্গু ও আয় উপার্জনে অক্ষম, অতি বার্ধক্য এবং পরিবারে আয় উপার্জনক্ষম সদস্য নেই এমন ব্যক্তি। থাকতে হবে ১ থেকে ১০ শতাংশ জমি নিজের। উপজেলা পর্যায়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)  প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এর সভাপতি সৈয়দপুর জেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)।
প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী এলাকায় মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে দরখাস্ত আহবান করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। সুবিধাভোগী বাছাইয়ে যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ না করার ফলে অনেক স্বচ্ছল পরিবার এমনকি ভিন্ন উপজেলার পরিবারও এই সুবিধাভোগীর তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। বঞ্চিত হয়ে প্রকৃত দুস্থ, অসহায় মানুষ। তারপরও বর্তমানে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে একযোগে ঘর তৈরি কাজ শুরু হয়েছে। যদিও নীতিমালা অনুযায়ী গেল ৩০ জুন ঘর নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়সীমা বাঁধা ছিল। যদিও এখন পর্যন্ত এখানে একটি ঘরও তৈরি সম্পন্ন হয়নি। বর্তমানে তিন শ’ ঘরের জন্য সিমেন্টের আরসিসি পিলার ও কাঠের দরজা-জালানা তৈরির কাজ চলছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। এর পর তৈরিকৃত আরসিসি পিলারগুলো ট্রাক্টর কিংবা পিকআপে করে সুবিধাভোগীদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অবশ্য এর আগেও ট্রাক্টরে তোলার সময় অনেক পিলার ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে পড়ছে।  কিন্তু সবচেয়ে বড় বিপত্তি ঘটছে তখনই, যখন এ সব পিলার ঘরের খুঁটি হিসেবে ব্যবহারের জন্য মাটিতে পোতা হচ্ছে। এ সব পিলার তৈরিতে এমনই নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয় যে এ সব গর্ত খুঁড়ে লাগানো মাত্র ভেঙ্গে পড়ছে। তখন অনেকটা বাধ্য হয়ে এ সব পিলার দাঁড় করাতে বাঁশের খুটি কিংরা বাতা জুড়ে দিতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার উপজেলা ৮ নম্বর খাতামধুপুর ইউনিয়নে প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণ কাজ সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।  ওই ইউপি’র ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রকল্পের সুবিধাভোগী আখিমন নেছা। প্রকল্পের  উপজেলা ৫টি ইউপির তালিকা ২৮১ নম্বরে নাম রয়েছে তাঁর। তাঁর স্বামী রজমান আলী প্যরালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন শয্যাশায়ী। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আখিমন নেছার ঘর ও বারান্দার জন্য ১৭টি আরসিসি পিলার দাঁড় করানো হয়েছে। আর ল্যাট্টিনের জন্য ৪টি পিলার বাড়ির উঠানে রাখা রয়েছে। ঘরের জন্য দাঁড় করানো পিলারের অধিকাংশ ফাটল দেখা দিয়েছে। সে  পিলারে  অধিকাংশই বাঁশের বাতা দিয়ে বেঁধে কোন রকমে দাঁড় করিয়ে রাখা  ব্যবস্থা কবা হয়।  ল্যাট্টিনের জন্য চারটি পিলারের একটি পিলার ভেঙ্গে ভেতরের রড বের হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যে রিং (চুড়ি) বেঁধে রডগুলো নির্দিষ্ট দূরে থাকার কথা। কিন্তু ওই খুঁটিতে দেখা গেছে চারটি রডই একসঙ্গে। সুবিধাভোগী আখিমন নেছার ছেলে আতিকুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন আমি মিস্ত্রিদের পিলার বদলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। এ সময় মিস্ত্রী তাকে জানায়, পিলার বদল করার সুযোগ নেই। প্রয়োজনে পরে পিলারগুলো সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করে দেওয়া হবে। তিনি আর জানান, শুনেছি বঙ্গন্ধুর কন্যা দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পুরো ঘর তৈরি করে দিচেছন। অথচ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২১টি পিলার পরিবহনের জন্য আমাদের কাছে ৮০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। মিস্ত্রি বলেছেন এ সব খরচ নাকি আমাদের দিতে হবে। তাই দিয়েছি।
একই ইউপির একই ওয়ার্ডের পাইকারপাড়ার অপর সুবিধাভোগী আজহারুল ইসলাম। তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর ছেলে এরশাদের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ঘরের মেঝে পাকা করার জন্য মিস্ত্রিরা ট্রলিতে করে বালি এনে তাদের কাছে ১০০০ টাকা নিয়েছেন। নিজোর টাকায় মাটি কিরে ঘরের ভিত্তি উঁচু করেছেন।
অপর সুবিধাভোগী একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নেবরুরায় ওরফে সতীশ চন্দ্র রায়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এ সময় তাঁর স্ত্রী ইন্দু বালা জানান, তাদের ঘরের খুঁটি বসানোর সময় একটি পিলার মাঝখানে ভেঙ্গে রড রেব হয় পড়ে। তখন তিনি সেটি পাল্টানোর কথা বললে মিস্ত্রীর লোকজন তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। বলেন, পিলার পাল্টানোর নিয়ম নেই। দরকার হলে পরে মেরামত করে দেওয়া হবে। ইন্দু বালা আরো বলেন, মিস্ত্রীর লোকজন দুই ট্রলি বালু দিয়ে ৫০০ টাকা আগেই  নিয়ে গেছে। আজও আপনারা আসার কিছুক্ষণ আগে বালুর টাকা নিতে এসেছিলেন ট্রলি চালক।
উল্লেখ্য,  সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বজলুর রশীদ পিআইসি কমিটিকে পাশ কাটিয়ে ৩০০ ঘরের নির্মাণ কাজ করাচ্ছেন। ফলে পিলার তৈরিতে সৈয়দপুরের উৎপাদিত ননগ্রেড রড ও নিম্নমানের ইটের খোঁয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। পিলার ঢালাই শেষে ১৪ থেকে ২১ দিন কিউরিংয়ে চট ব্যবহার করে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দেওয়া কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। ফলে  পিলারগুলো অল্পতেই ভেঙ্গে যাচ্ছে।  প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে দায়সারাভাবে তড়িঘড়ি করে কাজ সমাপ্ত করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া দরজা-জানাজা তৈরিতে শাল, গর্জন, জামরুল, কড়ই, শিশু, আকাশমনি, গাছের কাঠ ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও বাস্তবে অল্প বয়সী অসাড় ইউক্যালিপ্টাস গাছের কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় ঘরের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 7131132070798223722

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item