১০ টাকার চাল- পীরগঞ্জের এক ইউনিয়নে বিক্রি স্থগিত!
https://www.obolokon24.com/2018/04/rangpur_8.html
তালিকায় জামায়াতের মামলার আসামী, সচ্ছল, চাকরীজীবি
পুরাতন কার্ড বাতিল
মামুনুর রশিদ মেরাজুল -পীরগঞ্জের চৈত্রকোল ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচীর চাল বিক্রি স্থগিত করা হয়েছে। তালিকা প্রনয়নে অনিয়ম করায় তদন্ত কমিটি প্রায় দেড় হাজার কার্ড বাতিল করায় চাল বিক্রি কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। ফলে অনেক দরিদ্র পরিবার কষ্টে রয়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের সুত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বর্তমান সরকার অস্বচ্ছল পরিবারের মাঝে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচীর আওতায় মাসে ৩০ কেজি করে চাল ১০ টাকা কেজিতে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে। বছরের ২ মাস ওই চাল ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ৩ জন করে ডিলার ওই চাল বিক্রি করবেন। ওই কর্মসুচীর অধীনে পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ৩৩১টি গ্রামের অসচ্ছল ও নিম্ন আয়ের ২৪ হাজার ৩৬ জনকে তালিকাভুক্ত করে ২০১৬ সাল এবং ২০১৭ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসে চাল বিক্রি করা হয়েছে। চলতি বছরও উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে মার্চ মাসে চাল বিক্রি হলেও চৈত্রকোল ইউনিয়নে তা হয়নি। ফলে ইউনিয়নটির ১ হাজার ৬৪৭ জন চাল ক্রয় করতে পারেনি। এদের মধ্যে অধিকাংশই নিম্ন আয়ের ও অসচ্ছল। নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, বাজারোত এখন চাউলের খুব দাম। ১০ ট্যাকা কেজির চাউল পাইলে হামার খুব উপকার হতো। কখন যে দিবি, তা জানি না।
অপরদিকে চৈত্রকোল ইউনিয়নে ১০ টাকার চালের তালিকাভুক্ত দরিদ্র পরিবারগুলোর কাছ থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচীর কার্ড নবায়নের নামে চৌকিদারী ট্যাক্স আদায় শুরু হলে ক্ষোভে ফুঁসে উঠে মানুষজন। একপর্যায়ে তালিকা প্রনয়নে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠে এবং চাকরীজীবি, ব্যবসায়ী ও জামায়াতের নাশকতা মামলার আসামীকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠলে বিষয়টি উপজেলা খাদ্য কমিটির নজরে আসে। ওই ঘটনা তদন্তের জন্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট গঠিত কমিটি মাঠপর্যায়ে প্রায় সপ্তাহ ধরে তদন্তের পর তালিকায় ব্যাপক ঘাপলার প্রমান পায়। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে চৈত্রকোল ইউনিয়নে চাল বিক্রি স্থগিতের পরামর্শ এবং আগের কার্ড বাতিল করে। বর্তমানে নতুন কার্ডে নাম তালিকাভুক্তের কাজ চলছে বলে জানা গেছে। ইউনিয়নটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলার নবাব আলী, ওয়াহাব মিয়া এবং সোনিয়া নওরীন মার্চ মাসের পুরো চাল উত্তোলন করে তাদের গুদামে রেখেছেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিলার অভিযোগ করে বলেন, চালগুলো গুদামে রাখায় সেগুলো পাহারা দিতে প্রতিদিনই ৫/৬’শ টাকা খরচ হচ্ছে। এতে আমাদের লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও তদন্ত কমিটির প্রধান ছায়েদুর রহমান বলেন, তদন্তের পর তালিকায় চাকরীজীবি, সচ্ছল পরিবারের নাম তালিকাভুক্তের প্রমান পাওয়ায় ইউনিয়নটিতে মার্চ মাসের চাল বিক্রি স্থগিত এবং আগের কার্ড বাতিল করা হয়েছে। তবে মার্চ মাসে চাল উত্তোলন করা আছে। অসচ্ছল পরিবার চৌকিদারী ট্যাক্সের আওতায় পড়ে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওটা চেয়ারম্যানের বিষয়। চৈত্রকোল ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সবুজ বলেন, প্রায় ৪/৫’শ কার্ড মাঠে পাওয়া যাচ্ছে না। কার্ডগুলো ডিলার এবং ব্যবসায়ীদের কাছে রয়েছে। তাই আগের কার্ড পরিবর্তন করে নতুন করা হচ্ছে। জামায়াতের মামলার আসামী তালিকাভুক্ত হয়েছিল, তার নামও বাতিল করা হচ্ছে।