হরিপুরে প্রায় দুইশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

জে.ইতি হরিপুর, ঠাকুরগাও প্রতিনিধিঃ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন ও ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঠাকুরগায়ের হরিপুর উপজেলায় প্রাই দুইশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন শহীদ মিনার । এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে শহীদদের সম্মান জানাতে পারেন না।
অনেক প্রতিষ্ঠানে শুধু জাতীয় পতাকা ও দোয়া পালন করেন শিক্ষার্থী শিক্ষকরাসহ সর্বস্তরের মানুষ। অথচ সরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপন করার নির্দেশ থাকলেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারছেন না বর্তমান নতুন প্রজন্ম। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক শহীদ দিবস মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকেই প্রতিবছর সারবিশ্বে দিবসটি পালিত হয় তবে হরিপুর উপজেলায় মাতৃভাষা দিবসটি পালিত হয় হ-য-ব-র-ল ভাবে। কলেজ, হাইস্কুল, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক স্কুলগুলোতে দিবসটি পালিত হয় জাতীয় পতাকা দোয়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার গড়ে না উঠায় গুরুত্ব হারাচ্ছে দিবসটি। শিক্ষার্থীর বঞ্চিত হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ থেকে । ফলে নানা ক্ষোভ বিরাজ করছে ভাষা প্রেমিকদের মাঝে।
চোরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরফান আলী জনান, এই প্রথম চোরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের স্মরণে আজও হরিপুর উপজেলায় প্রায় দুই শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার গড়ে না উঠিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা ও স্মরন করতে পারেন না।
 হরিপুর, কাঠালডাঙ্গী আসলেউদ্দীন প্রধান সিনিয়ার আলিম মাদ্রাসার সুপার বলেন, ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি। ভাষার জন্য যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের স্মরণ করতে পারেন না অনেকে। মাদ্রাসাগুলো গড়ে উঠেনি কোন শহীদ মিনার।
এ ব্যাপারে সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি। হরিপুর উপজেলায় রয়েছে প্রায় দুইশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৪টি, ৪১টি হাইস্কুল ও ১১ টি কলেজের মধ্যে ৪ টিতে শহীদ মিনার আছে। আলীম ও দাখিল ১৮ টি মাদ্রসার  একটিতেও কোন শহীদ মিনার নাই। তবে সদর উপজেলা থেকে আধা কি.মি. পূর্বে মোসলেমউদ্দিন কলেজে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান, কয়েকটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন সহ কোন ব্যক্তির উদ্যোগে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ না হওয়ায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন না শিক্ষার্থীরাসহ এলাকার মানুষ। প্রতিষ্ঠানে যদি শহীদ মিনার থাকত তাহলে ভাষার গুরুত্ব ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা, দো’আ, আলোচনা সভা ছড়িয়ে পড়ত সবার মাঝে।
 হরিপুর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষাকর্মকর্তা আজিজার রহমান জানান, ১০৪টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধু একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। আর কোন বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ দরকার।
হরিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস আর ফারুক জানান, উপজেলায় ১৮ টি কলেজ ও ৪১ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৮ টি আলিম ও দাখিল মাদরাসা এবং অনেক কিন্ডার গার্ডেনের মধ্যে ৪টি শহীদ মিনার রয়েছে এর মধ্যে উপজেলা সদর থেকে আধা কি.মি. দূরত্ব হরিপুর মোসলেমউদ্দিন সরকারি মহাবিদ্যালয়ে ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে নির্মাণ করা হয় ২০০২ সালে যাদুরাণী উচ্চ বিদ্যালয়ে ১টি। ১৯৯৭ সালে আর এ কাঠালডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে ১টি এবং ২০১৬ সালে স্থানীয় এমপি নিজ খরচে কাঠালডাঙ্গী কে, বি ডিগ্রী কলেজে ১টি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন।
 এবিষয়ে উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় এমপি নিজ খরচে উপজেলা চত্তরের আমাইদিঘীর পূর্ব প¦াশে গত বছর ১০শে এপ্রিল মাসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তি স্থাপনা করেছেন। এবং শহীদ মিনারের কাজ চলমান। আশা করা যাই শহীদ দিবস দিনটি আসার আগে শহীদ মিনারটির কাজ শেষ করা হবে। এছাড়াও কোন মাদরাসা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্ডেনে শহীদ মিনার গড়ে উঠেনি। তৃণমূল পর্যয়ে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের গুরুত্ব ছড়িয়ে দিতে বা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন।
তবে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হরিপুর উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনার নির্মাণ করা দাবী শিক্ষক ও ভাষাপ্রেমিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাকর্মকর্তাগণসহ সর্বস্থরে মানুষের।    

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item