৭১’ এর সেদিন শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল খুনিয়া দীঘির পানি !

সফিকুর ইসলাম শিল্পী,রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ
১৯৭১ সালে খুনিয়া দীঘির রক্তাক্ত পানি,মানুষের হাড়-হাড্ডি পাকিস্তনি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীদের আজো মানবতা বিরোধী জঘন্য অপরাধের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার হানাদারদের সেই লোমহর্ষক নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের কথা স্মরণ করে শিউরে ওঠে এই উপজেলার মানুষ। বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বাধীনতাকামী নিরীহ লোকজনকে ধরে এনে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর জানতে ঐতিহাসিক খুনিয়া দীঘিরপাড়ে একটি শিমুল গাছের সাথে হাতের তালুতে লোহার পেরেক গেঁথে ঝুলিয়ে রেখে রাইফেলের বাঁট ও বেয়োনেট দিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানোর পর দীঘিরপাড়ে দাঁড় করে ব্রাশ ফায়ারে হত্যার পর হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা লাশ ভাসিয়ে দিত দীঘির পানিতে। সেখানেই লাশগুলো পচে গলে পানির সাথে মিশে যেত। হাজার হাজার লাশ আর রক্তে দীঘির পানির রং সব সময়ই থাকতো টকটকে লাল। খান সেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় এলাকার যুবতী ও সুন্দরী নারীদের পিতা-মাতা এবং স্বামীর উপস্থিতিতেই ধরে এনে ক্যাম্পে আটকে রেখে চালাতো পাশবিক নির্যাতন। এ কথা শুনলে গা শিউরে ওঠে। ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতম নির্যাতনের বর্ণনা করতে গিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের পঞ্চাশোর্ধ এ নির্যাতিতা বিধবা উপরোক্ত কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।এমনি হাজার নারির অশ্রুভেজা চোঁখে
রক্ত লজ্জ্বা লুকায়িত । মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাস সময়ে বিভিন্ন নির্যাতন ক্যাম্পে স্বাধীনতাকামী নিরীহ মানুষকে এনে হত্যার করার পর এই খুনিয়া দীঘির পানিতে নিক্ষেপ করতো। এখানে প্রায় তিন হাজার মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ ফেলা হয়েছিল।এই দীঘির পানি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হওয়ায় স্থানীয় লোকজন এর নাম দিয়েছে “খুনিয়া দীঘি”।স্থানী প্রত্যক্ষদর্শী প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার রাণিশংকৈল উপজেলার ভা›্ডারা গ্রামে খুনিয়া দিঘির অবস্থান। এর ১ কিলোমিটার দুরে রাণীশংকৈল থানার কাছে ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন ক্যাম্প।আরেকটি নির্যাতন ক্যাম্প ছিলো রাণীশংকৈল সরকারি আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে স্বাধীনতাকামি নিরিহ মানুষকে এনে একটি আম গাছের সঙ্গে ফাঁসি দিয়ে হত্যার করার পর এই খুনিয়া দীঘির পানিতে ফেলে দেয়া  হতো। হানাদার বাহিনী তাদের স্থানীয় সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন নির্যাতন ক্যাম্পে এদেশের শত শত মেয়েকে ধরে এনে শ্লীলতাহানি করে হত্যার পর খুনিয়া দীঘির পানিতে নিক্ষেপ করতো।রাণিশংকৈল উপজেলা শহরের প্রত্যক্ষদর্শী প্রবীণ মহিউদ্দিন আহমেদ লালু (৬৫), ফজলুল হক (৬২) ও তাকবির আলী (৬৪) ভয়, আবেগ ও অশ্রুসজল চোখে ভান্দ্রা গ্রামে ঘটে যাওয়া এইসব নির্মম কাহিনী বাসস’কে জানান।বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রাণীশংকৈল উপজেলা শাখার সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিনি ও তার সহকর্মীরা ১৯৭২সালে মুক্তিযুদ্ধের পর খুনিয়া দীঘির পানি থেকে এক হাজার পাঁচশত মানুষের খুলি তুলে আনেন।এ সময় একটি তদন্ত দল রাজধানী ঢাকা থেকে এসেছিলেন এবং নমুনা হিসেবে কিছু খুলি এবং অন্যান্য হাড় নিয়ে যান।
তিনি বলেন, রাণিশংকৈল সেনা ক্যাম্পে একটি ভীতিজনক নির্যাতন সেল ছিল, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও নীলফামারীর বিভিন্ন জায়গা থেকে নিরিহ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে সেখানে নিয়ে যেতো। সেখানে অমানবিক নির্যাতন ও হত্যা করে তাদেরকে এই খুনিয়া দিঘির পানিতে নিক্ষেপ করা হতো। তাদের হাতে প্রায় তিন হাজার লোক শহীদ হয়েছেন।
হানাদার বাহিনী এবং তাদের স্থানীয় সহযোগীদের মানবতা বিরোধী জঘন্য এইসব অপরাধের বর্ণনা করেন- সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম ও ইয়াসিন আলী ও সেলিনা জাহান লিটা এমপি সহ ভান্ড্রারা গ্রামের আবদুল মান্নান, হরিপুর উপজেলার মহসিন আলী সরকার, বালিডাঙ্গী উপজেলার অ্যাডভোকেট সাইদ আলম।
তারা একটি অসাম্প্রদায়িক ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি করেন এবং যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের রায় কার্যকর করে কলঙ্কের দাগ মুছে ফেলার কথা বলেন।সরকার স্বাধীনতার পরে খুনিয়া দীঘির পাড়ে অমর শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও শহীদ মিনার নির্মাণ করেছে।এ এলাকার কিছু দুষ্ট লোকের এ দীঘির জমির দিকে নজর রেগেছে।
এ এলাকার মানুষ প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর’ মহান বিজয় দিবসে হাজার হাজার লোক শহীদ মিনারটিতে শহীদের প্রতি সম্মান জানাতে আসেন!

পুরোনো সংবাদ

ঠাকুরগাঁও 8425537639932244698

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item