আব্বু নিজেই আম্মুকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলে॥ সংবাদ সম্মেলনে আট বছরের ছেলে জিসান(ভিডিও সহ)
https://www.obolokon24.com/2017/12/nilphamari_44.html
আমার আব্বু জাহিদুল ইসলাম বালিশ চাপা দিয়ে আম্মু রুপনা আক্তার দুলালীকে মেরে ফেলে। এ সময় খাটে জোড়ে শব্দ হয়। আমি দেখতে পেয়ে ভয়ে কম্বলের নিচে মাথা ঢুকিয়ে ফাক করে দেখি আম্মুর লাশটা আব্বু বাথরুমে ঢুকিয়ে অনেকক্ষন পর বাহির হয়ে আসে। সকালে জানতে পারি আমার আম্মুর লাশ বাথরুমে ঝুলছে। আমার আব্বুই আমার আম্মুকে মেরে ফেলেছে। আমি আব্বুর বিচার চাই। কিন্তু পুলিশ এখনও আমার আব্বুতে গ্রেফতার করেনি।
আজ রবিবার সকাল ১১টায় নীলফামারী সদরের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের জামতলী গ্রামে নানা নানীর বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে ঠিক এ ভাবেই কথাগুলো বলছিল আট বছরের শিশু রওনাকুল ইসলাম ওরফে জিসান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জিসানের ১৩ মাস বয়সের ছোট ভাই রাফিউল ইসলাম রাফি, নানা আলহ্াজ্ব মোখলেছার রহমান, নানী আলহাজ্ব রূপালী বেগম, সহ তাদের নিকট আত্বীয় স্বজন ও গ্রামবাসী।
এ সময় নানা মোখলেছার রহমান জানান, ২০০১ সালে তার মেয়ে রুপনা আক্তার ওরফে দুলালীর সঙ্গে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের বাজিতপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। মেয়ে ও জামাই নীলফামারী শহরের প্রগতিপাড়ায় ক্রয়করা জমিতে বাসা বানিয়ে বসবাস করতো। জামাই শহরের ছমির উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজের গণিত শিক্ষক। তার মেয়ে ২০১৩ সালের অক্টেবর মাস হতে পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা অফিসের সহকারী কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত ছিল।
মেয়ের সুখের জন্য তাদের সংসারে অনেক কিছুই দিয়েছি। তার পরেও যৌতুকলোভি জামাই দফায় দফায় টাকার জন্য আমার মেয়েকে নির্যাতন করতো। সর্বশেষ আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করে । এই টাকা না পেয়ে চলতি বছরের ৯ নবেম্বর সন্ধ্যায় শহরে প্রগতিপাড়ার বাসায় জামাই ও তার মা বাবা এবং ভাই আমার মেয়েকে মারপিট করে। এরপর জামাইয়ের বাবা মা ও ভাই গ্রামের বাড়িতে ফিরে যায়। পরের দিন ১০ নবেম্বর সকালে খবর পাই আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। ছুটে এসে জামাইয়ের বাসায়র বারান্দায় আমরা মেয়ের মরদেহ শুয়ে রাখা অবস্থায় দেখতে পাই। কিন্তু বাসায় জামাই ও তাদের আট বছরের বড় ছেলে রওনাকুল ইসলাম ওরফে জিসানকে খুঁজে পাইনা। পুলিশ সহ তাদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। ছোট ছেলেটাকে বাসায় ফেলে রেখে জামাই পালিয়ে যায়। তখন সন্দেহ জাগে আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে বিকালে লাশ আমাকে হস্তান্তর করে। কিন্তু মেয়ের জামাই ও তাদের বড় ছেলেকে পাওয়া যাওয়ায় লাশ দাফন আটকে যায়। সেদিন রাত আটটার পর লোক মারফৎ তারা মেয়ের বড় ছেলেটাকে পাঠিয়ে দিলেও জানাজা ও দাফনে জামাই অংশ নেয়নি। রাত ৯টার পর নিজবাড়ির সামনে মেয়ের লাশ জানাজা শেষে দাফন করা হয়।
মোখলেছার রহমান অভিযোগ করে জানায় তার মেয়েকে হত্যা করবে বলেই জামাই তার চাকুরীস্থলে ঘটনার দুই আগে ৮ নবেম্বর ৯০ দিনের ছুটি চেয়ে আবেদন করে। সেই হতে সে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠাতে অনুপস্থিত রয়েছে।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় আমার স্ত্রী বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। অথচ পুলিশ আসামী জামাতা জাহিদুল ও তার বাবা, মা ও ভাইকে গ্রেফতার করছেনা। এখন আসামীরা বলে বেড়াচ্ছে তাদের কেউ কিছু করতে পারবেনা। তারা এক কোটি টাকা খরচ করে ঘটনা ধামাচাঁপা দিয়েছে। তিনি বলেন ঘটনার প্রায় দুই মাসের কাছাকাছি হলো এখনও ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন তাহলে কি আসামীদের কথাই ঠিক। তারা কোটি টাকা খরচ করে সব কিছু ধামাচাপা দিতে পেরেছে?
তিনি আরো জানান, আমার মেয়ের উত্তরা ব্যাংকে ৭ লাখ টাকার একটি এফডিআর ছিল। জামাই ছিল নমিনি। আমার মেয়েকে হত্যার পর জামাই সেই টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। তিনি জানান এ বিষয়ে ব্যাংক ম্যানেজাররে সঙ্গে যোগাযোগ করলে ম্যানেজার জানায় তিনি নমিনি হিসাবে এফডিআর হতে ঋণ নিয়েছে। যেখানে একটি হত্যা মামলা হয়েছে, সেখানে ব্যাংক ম্যানেজার কিভাবে মেয়ের এফডিআরের ফান্ডের টাকা আসামীকে প্রদান করলো আমি সুষ্ঠু তদন্ত চাই। সেই সঙ্গে আমার মেয়ের হত্যাকারী আসামীদের গ্রেফতার ও ফাঁসীর দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত রুপনা আক্তার ওরফে দুলালীর মা রূপালী বেগম কান্না বিজরিত কন্ঠে বলেন আমি আমার মেয়ের হত্যাকারী আসামীদের গ্রেফতার ও ফাঁসী চাই।
সংবাদ সম্মেলনের সুত্র ধরে সাংবাদিকরা পুলিশ সুপার জাকির খান এর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, নিহতের বাবা ঘটনার দিন থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। পরবর্তিতে নিহতের মা বাদী হয়ে আদালতে ৭ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়েরের জন্য পিটিশন করেছে। আদালত সেটি থানায় প্রেরণ করলে তা হত্যা মামলা হিসাবে রুজু করা হয়েছে। পুলিশ সুপার আরো জানান, ময়না তদন্তের ভিসারা প্রতিবেদন এখনও আমরা পাইনি। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পেলেই পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ সংক্রান্ত রির্পোট “নীলফামারীতে পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের নারী সহকারীর মরদেহ উদ্ধার” শিরোনামে আবলোকনে বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়।