ঠাকুরগাঁওয়ে প্লাবিত বন্যায় অসহায় সাহেলা’র 'শনু-মনু' !
https://www.obolokon24.com/2017/08/thakurgaon_13.html
আব্দুল
আউয়াল: "আমরা না খেয়ে মরি ক্ষতি নেই, কিন্তু ও আমার অবলা জীব-কথা বলতে
পারে না, শুধু চেয়ে থাকে আর চোখ দিয়ে জল পড়ে"। কথাগুলো অমর কথাশিল্পী
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মহেশ নামক ছোটগল্পের গফুরের।
যে
তার প্রিয় পোষা গরু মহেশকে নিজের সন্তানের মতোই মনে করতো। এ নিয়ে ভুপেন
হাজারিকা - শরৎ বাবু খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে, তোমার মহেশ গফুর এখন
কোথায় কেমন আছে... শিরোনামে একটি গানও লিখেছিলেন।
আমরা
সেই মহেশের শেষ পরিণতি দেখেছিলাম কিন্তু আজ মহেশের মতো ঠাকুরগাঁওয়ে হঠাৎ
বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় শহরের ডিসি বস্তি এলাকায় সাহেলা’র অবলা গবাদি পশুর
প্রতি ভালবাসা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন অনেকেই।
শনিবার
ভোর থেকে গত দুই দিনের অবিরাম ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে
তলিয়ে গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের পৌরশহর সহ ৫ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের বাড়িঘর।
সকলে একটু আশ্রয়ের জন্য নিরাপদ স্থানে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে।
বিকেল
সাড়ে ৫ টায় ঠাকুরগাঁও শহরের টাঙ্গন নদীর একটি পাশে পলিথিন মোড়ানো একটি
ছাউনি তৈরি করেছেন বন্যায় প্লাবিত সাহেলা আক্তার নামে এক মহিলা। পলিথিন
মোড়ানো ছাউনি ভেতরে নিজের পোষা কয়েকটি গবাদি পশুকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা
করছেন। আর সাহেলা নিজে বৃষ্টিতে ভিজে দেখা শুনা করছেন ওই অবলা জীবদের।
এই
প্রতিবেদক ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যায় দূর্গতের প্রতিবেদন করতে গিয়ে সাহেলার সাথে
কথা হলে তিনি জানান, আমার পরিবারের উপার্জনের কেউ নেই। এই গবাদি পশু পালন
করে তাদের দুধ বিক্রি করে সংসার চালাই। তাই তাদেরকে আগে নিরাপদে রাখা আমার
প্রয়োজন। কারণ এই গবাদি জীব গুলো না থাকলে যে আমি দু’মুঠো খাবার কিনতে
পারবো না। এই গবাদি পশু গুলো যে আমার সন্তানের মত। তাই তাদের নাম দিয়েছি
“শনু আর মনু”। এদের নিয়ে খুবই বিপদের মধ্যে আছি। থাকার জায়গাও খুজে পাচ্ছি
না। বৃষ্টি যদি আরো বাড়ে তাহলে কোথায় যাব, কি খাবো।
শনু-মনু
নামক দুটি গরু’র প্রতি সাহলোর যে ভালবাসা লক্ষ্য করা গেছে, সেই
আনন্দ/ভালবাসা যদি শরৎ বাবু কিংবা ভুপেন হাজারিকা দুজনেই দেখতেন তাহলে বেশ
খুশিই হতেন।
উল্লেখ্য,
ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবল বর্ষনে প্লাবিত হওয়ায় হঠাৎপাড়া, ডিসি বস্তি, সরকার পাড়া ও
খালপাড়া, সদর উপজেলার আকঁচা, রায়পুর, মোহাম্মদপুর, সালন্দর, শুকানপুকুরী ও
বালিয়াডাঙ্গী, রাণীংশকৈল উপজেলার আশে পাশের অনেক এলাকার বাড়ি-ঘর এখন
পানির নিচে। এতে বিভিন্ন এলাকায় ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট
ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
শতাধিক
মানুষ এখনো বন্যায় প্লাবিত হয়ে নিজ বাড়িতে আটকে পড়েছেন বলে দূর্গত এলাকার
লোকজন জানিয়েছেন। বেশির ভাগ মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
আশ্রয় নিয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
জেলার বিভিন্ন নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গন নদীর পানি বিপদ সীমার ৪০ মিলি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা
প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, গত দুই দিনের ভারি বর্ষণে জেলার ব্যাপক ঘর
বাড়ি, ব্রীজ-কালভাট, রাস্তা-ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়
কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। বাকিদের উদ্ধারের
জন্য রংপুর থেকে সেনাবাহিনীর একটি টিম উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করছে। বর্তমানে
দূগর্তদের জেলায় প্রায় শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার জায়গা ও ত্রানের
ব্যবস্থা করা হয়েছে।