কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি || বানভাসীদের দুর্ভোগ চরমে
https://www.obolokon24.com/2017/07/kurigram_78.html
হাফিজুর রহমান হৃদয়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামে সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে তিস্তা ও দুধকুমারসহ অন্যান্য নদীর পানি।
বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর ও সদর উপজেলার প্রায় ৪০টি ইউনিয়নের চর ও দ্বীপচরসহ ৩ শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার প্রায় ২ লাখ মানুষ। বানভাসী মানুষজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাঁধ ও উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।
টানা পাঁচ দিন ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। অনেক পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে উচুঁ স্থানে আশ্রয় নিলেও তাদের হাতে কোনো কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে দিন যাপন করছে। বন্ধ রয়েছে জেলার দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর গ্রামের রুবেলের শেফালী বেগম ঢাকাটাইমসকে জানান, চার দিন হয় বাড়িতে পানি উঠছে। খুব স্রোত পড়ছে। দুইটা বাচ্চা নিয়া সারাদিন মানুষের নৌকায় নৌকায় ঘুরছি। সারাদিন রান্নাও হয় নাই, খাইও নাই। মেম্বার চেয়ারম্যান কোন রিফিলও দেয় নাই।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী সরকার বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলোর ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি জীবন-যাপন করছে। এর মধ্যে ১৫০ জনকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এই ৩০ হাজার বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য ১১ মেট্রিক টন চাল পেয়েছি। যা মঙ্গলবার উত্তোলন করেছি। বুধবার বিতরণ করা হবে।’
জেলা ত্রাণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ২৫০ মেট্রিকটন চাল ও পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে এই বিপুলসংখ্যক বন্যা কবলিত মানুষের জন্য তা অপ্রতুল।
জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, জেলায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে বন্যার পানিতে জেলায় ৭৭১ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে উঠতি আউশ ৭৪ হেক্টর, বীজতলা ১১৩ হেক্টর, সবজি ৩৪৪ হেক্টর, পাট ২০০ হেক্টর এবং আখ ৪২ হেক্টর।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ২৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।