তিস্তা অববাহিকায় উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ১১ জুলাই॥
তিস্তা নদী পানি কিছুটা কমলেও আজ মঙ্গলবার সকাল হতে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সোমবার (১০ জুলাই) এই পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। বর্তমানে তা আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় বিপদসীমার ১০ সেন্টেমিটার উপর দিয়ে প্রাহিত হলেও সকাল ৯টায় তা আরো ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে যা বর্তমানে প্রবাহ বলে ডালিয়াস্থ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরন কেন্দ্র সুত্রে জানা গেছে।
  এদিকে উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তা নদী বেষ্টিত এ জেলার ১০ ইউনিয়ন এবং ২০টি চর গ্রামে দেখা দিয়েছে বন্যা। বৃষ্টি ও নদীর বন্যার কারনে তিস্তা পাড়ের পরিবারগুলোর ঘরে চাল ডাল মজুদ থাকলেও তা রান্না করে খাওয়ার কোন অবস্থা না থাকায় পরিবারগুলো খাদ্যাভাব, স্বাস্থ্য সেবা এবং নানা সংকটে পড়েছে। তিস্তাপাড়ের ইউনিয়নগুলোতে অবস্থিত কমিউিনিটি ক্লিনিকগুলো প্রতিনিয়ত বন্ধ থাকছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে। এদিকে তিস্তা অববাহিকা সহ গোটা নীলফামারী জেলায় বৃষ্টিপাত চলছিলো।
সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে, গত ২৪ ঘন্টায় ডালিয়া তিস্তা অববাহিকায় ৮২ মিলিমিটার (গতকাল এখানে বৃষ্টি ছিল ১৩২ মিলিমিটার)। এ ছাড়া জেলা সদরে ৪২ মিলিমিটার, ডিমলায় ৩৫ মিলিমিটার, জলঢাকায় ২৫ মিলিমিটার, কিশোরীগঞ্জে ২০ মিলিমিটার, ডোমারে ৭০ মিলিমিটার ও সৈয়দপুরে ৪২ মিলিমিটার।
উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কবলে পড়ে তিস্তা অববাহিকার বসবাসরত পরিবারগুলো নাস্তাবুদের কবলে পড়েছে। রান্না করে খেতে না পারায় তারা শুকনা খাবার ত্রান হিসাবে বিতরনের জন্য দাবি করেছে। বানভাসীরা আরো জানায় বন্যা ও বৃষ্টির কারনে তারা পালিত গবাধী পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
এলাকার মানুষজন বলেন এলাকার অনেক শিশু ও বয়স্কো মানুষজন বিভিন্ন রেগে আক্রান্ত হচ্ছে। এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকায় চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া এলাকায় কোন মেডিকেল টিমও নেই।এ ব্যাপারে নীলফামারী সিভিল সার্জন ডাঃ রনজিৎ কুমার বর্মনের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জানান মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানান। 

তবে প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্থ্যদের পাশে দাঁড়ানো শুরু করেছে ইতোমধ্যে। তিস্তার পানি পর্যবেক্ষণ এবং ক্ষতিগ্রস্থ্যদের তালিকা প্রণয়নে সার্বিক মনিটরিং করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ইউনিয়ন পরিষদ। সরকারের পক্ষে নীলফামারী জেলা প্রশাসন তিস্তা অবাহিকার বন্যা কবলিত মানুষজনের জন্য জিআরএর ৪০ মেট্রিকটন চাল ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
জেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি, ঝুনাগাছ চাপানি, খালিশা চাপানি, পুর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারী ও ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন টেপাখড়িবাড়ি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের মানুষরা।
ক্ষতিগ্রস্থ্য ১০ ইউনিয়নে জনসংখ্যা ৮লাখ ৫৪হাজার ৬৫৬জন। আর বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৫২হাজার ৭০৬টি পরিবার।
এদিকে বিকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ্য এলাকা পরিদর্শন করেন।
পুর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, নদী বেষ্টিত ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় পানি প্রবেশ করায় ঘর বাড়ি হাটু পানিতে তলিয়ে রয়েছে। তার উপর বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় মানুষজনকে নাস্তাবুদ করছে।
এদিকে উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে হুমকীর মুখে পড়েছে ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি গ্রামের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বালু বাঁধটি। যে কোন মুহুর্ত্বে ধসে গেলে পানিতে তলিয়ে যাবে চারটি ওয়ার্ড।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয়দের সহযোগীতা এবং পরিষদের সহযোগীতায় বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেটি স্থায়ী নয়। পানির ¯্রােত বেড়ে গেলে বাঁধটি বিলিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে বালিরবস্থা ও বাঁশের পাইলিং করে বাঁধটি রক্ষাকরার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুল ইসলাম জানান, মুলত উজানের ঢলে কারণে পানি বেড়েছে তিস্তায়। তাছাড়া ভারী বৃষ্টিপাতও রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকবে আরো কয়েক দিন।
তিনি বলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে তিস্তা ব্যারেজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখেছি আমরা। নজর রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, এ্যাপ্রোচ বাঁধ, গাইড বাঁধ, স্পার রক্ষায়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম বলেন, ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ৪০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ মধ্যে ডিমলা উপজেলায় ২৫ মেট্রিক টন চাল ও ৩৫ হাজার টাকা ও জলঢাকা উপজেলায় ১৫ মেট্রিক টন চাল ও ১৫ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের জরুরী ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। তালিকা পেলে তা বিতরন করা হবে।
এদিকে তিস্তা ছাড়াও পানি বেড়েছে জেলার উপর দিয়ে বহমান বুড়ি তিস্তা, চারালকাটা, বুড়িখোড়া, যমুনেশ্বরী, খড়খড়িয়া, দেওনাই, খেড়–য়া, শালকি, নাউতারা, কুমলাই, ধুম, ধাইজান, চিকলি নদীতে।






পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 7844787138899405823

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item