নিজেই বাল্যবিবাহ রোধ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নীলফামারীর লিমু আক্তার
https://www.obolokon24.com/2017/07/child-marrage.html
ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ২৭ জুলাই॥
নিজেই নিজের বাল্য বিবাহ বন্ধ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে লিমু আক্তার (১৫)। লিমু নীলফামারী সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া চৌধুরীবাজার দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেনীর ছাত্রী। তার রোল নম্বর ৮।
গত ১৪ দিন গৃহবন্দী থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে মাদ্রাসায় এসে মেয়েটি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ঘটনার কথা শিক্ষক ও সহপাঠিদের কাছে তুলে ধরে। এমন খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ছুটে যায় ওই মাদ্রাসায়। লিমু আক্তার একই ইউনিয়নের পূর্ব খামাতপাড়া টেপুয়ারডাঙ্গা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলামের মেয়ে। লিমু আক্তার জানায় সে এখন আতœপ্রত্যয়ী। ডিগ্রি পাস করে নিজের কর্মসংস্থান গড়ে তোলে তারপর বিয়ে করবে। লিমুর নিজে নিজের বাল্য বিয়ে বন্ধ করার ঘটনা জানতে পেরে তার সহপাঠিরাও লিমুর মতো সোচ্চার হয়ে উঠে।
দুই ভাই এক বোনের মধ্যে লিমু দ্বিতীয়। সংসারে কোন অভাব অনটন না থাকলেও গ্রাম্য কিছু টাউট লোকের খপ্পরে পড়ে লিমুর বাবা এক বেকার ছেলের সঙ্গে একমাত্র মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলে। বর পাশ্ববর্তী কচুকাটা ইউনিয়নের দুহুলী ঘনপাড়া গ্রামের মোখছেদ আলীর ছেলে সেলিম মিয়া (২১)। বিয়েতে যৌতুক ঠিক হয় দুই লাখ টাকা। বব পক্ষকে কেনাকাটার জন্য এক লাখ টাকা দিলেও এরমধ্যে গ্রাম্য টাউটরা ৪১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
মেয়ে বড় হয়েছে গ্রামের কিছু মানুষের কথা ধরে বাবা নজরুল ইসলাম ও মা লিপি আক্তার তাদের মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিল গত ১৫ জুলাই। গত ১২ জুলাই হতে লিমুর দাখিল মাদ্রাসায় আসা বন্ধ করে দেয় অভিভাবকরা। মাদ্রাসার নবম শ্রেনীর ছাত্রী লিমুর বিয়ে হচ্ছে বিষয়টি গোপন থাকায় জানতে পারেনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা শিক্ষার্থীরা। লিমুকে গৃহবন্দী করে রেখে প্রচার চালানো হয় সে নানীর বাড়িতে বেড়াতে গেছে।
লিমু জানায়, তার বাল্য বিয়ে ঠেকাতে সে গৃহবন্দী হয়ে যখন হা-হুতাশ করছিল তখন তার মনে পড়ে যায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ তাদের ইউনিয়নকে বাল্য বিয়ে ও যৌতুকমুক্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত নীলফামারী পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান তার মোবাইল নম্বর দিয়েছিল কোথাও বাল্য বিয়ে হলে তাকে জানাতে। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত বাল্য বিয়ে কুফল সর্ম্পকে অবগত করতো। এসব মনে হতেই লিমু তার বাবা মাকে ডেকে জানায় আমার বাল্য বিয়ে তোমরা বন্ধ না করলে সে পুলিশকে জানিয়ে তাদের সাজা দিতে বাধ্য হবে। তবুও সে বাল্য বিয়ে করবে না। লিমুর এই কথায় কাজ হয়ে যায়। বিয়ে বন্ধ করে দিল লিমুর বাবা মা। এরপর লিমু পুনরায় নিজেকে তৈরী করে বৃহস্পতিবার তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে ঘটনার কথা শিক্ষক ও সহপাঠিদের কাছে খুলে বলে। লিমু এখন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে বধ্যপরিকর। এ ঘটনায় লিমুর বাবা মা সাংবাদিকদের বলে এ জন্য অনুতপ্ত। তারা যে ভুল করতে যাচ্ছিল এমন ভুল আর কেউ যেন না করেন।
লিমুর সহপাঠি রেকসানা, শেফালী রোকেয়া সহ অনেকে বলে উঠে আমরা বাল্য বিয়ে মানিনা মানবো না।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লিমুর ক্লাশ শিক্ষক মওলানা গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি প্রতি নিয়ত ক্লাশের পড়ার পাশাপাশি বাল্য বিয়ের কুফল সর্ম্পকে শিক্ষার্থীদের অবগত করে থাকি। আজ লিমু তার বাল্য বিয়ে ঠেকিয়ে যে সাহসী ভুমিকা পালন করেছে তা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সহায়তা করবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুপার আ,ন,ম হামিদুল ইসলাম বলেন লিমু আক্তারের এ ঘটনা আমরা জানতে পেরে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমারদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩২০ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ডেকে বাল্য বিয়ে রোধে সচেতনা বৃদ্ধি করতে একটি অনুষ্ঠান করবো।
উল্লেখ যে ২০১৬ সালের ২৯ মে নীলফামারী জেলা সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাল্য বিয়ে ও যৌতুকমুক্ত ঘোষনা করেছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এমপি। এই ঘোষনার আগে স্থানীয় প্রশাসক প্রতিটি ইউনিয়নে পৃথক পৃথক সমাবেশ করে ইউনিয়নগুলোকে বাল্যবিয়ে ও যৌতুকমুক্ত ঘোষনা করেছিল।