হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তাদের সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় শ্মশান পরিদর্শন
https://www.obolokon24.com/2017/06/saidpur_2.html
তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
আজ ২ জুন (শুক্রবার) সকাল ১০ টায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তারা সৈয়দপুর শ্মশান পরিদর্শন করেছেন। ট্রাস্টের কর্মকর্তারা সৈয়দপুর শহরের উপকন্ঠে কুন্দল এলাকায় খড়খড়িয়া নদীপাড় সংলগ্ন জায়গায় অবস্থিত শ্মশান পরিদর্শনে এসে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শ্মশান উন্নয়ন বিষয়ে এক মতবিনিময় সভাও করেন। কেন্দ্রীয় শ্মশানের বিশ্রামাগারে ওই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
এ মতবিনিময় সভার বক্তব্য রাখেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি এ্যাডভোকেট রথীশ্ব চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা, ট্রাস্টি সিনিয়ন প্রভাষক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন প্রমুখ।
সভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় যুব হিন্দু কল্যাণ শ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার প্রসাদ। তিনি তাঁর বক্তব্যে সৈয়দপুর শ্মশানের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে তা সমাধানকল্পে কল্যাণ ট্রাস্টের সর্বাত্মক সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করেন।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে রাখেন হিন্দু কল্যাণ সমিতি সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সভাপতি নীলফামারী বারের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী এ্যাডভোটেকট তুষার কান্তি রায়, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ সৈয়দপুর শাখার সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি রাজ কুমার পোদ্দার রাজু ও সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় যুব হিন্দু কল্যাণ শ্মশান কমিটির সভাপতি বিকাশ পোদ্দার। গোটা মতবিনিময় সভাটি উপস্থাপনা করেন মনোজ গোস্বামী।
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তাদের সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় শ্মশান পরিদর্শনকালে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হিন্দু ধর্মীয় ট্রাস্টের ফিল্ড অফিসার প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস, স্বপন কুমার রায়, এ্যাডভোকেট উজ্জ্বল প্রসাদ কানু, অধ্যক্ষ বিপুল বিহারী হাওলাদার,শ্যামল চন্দ্র ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় সৈয়দপুর হিন্দু কল্যাণ সমিতি, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ সৈয়দপুর শাখার নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সৈয়দপুর শহরের বসবাসকারী বিপুল হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের নেতৃবৃন্দ সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় শ্মশান উন্নয়ন কাজ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ট্রাস্টের নেতৃবৃন্দ সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় শ্মশান উন্নয়নের সার্বিক সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
পরে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তারা স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও লোকজনদের সাথে নিয়ে সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় শ্মশান ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন।
প্রসঙ্গত, শহরের উপকন্ঠে পশ্চিমে কুন্দল এলাকায় নর্দাণ কোল্ড স্টোরেজের পিছনে খড়খড়িয়ে নদীর পূর্বপাড় ঘেঁষে সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় শ্মশান ঘাটটি অবস্থিত। এক একর ৯২ শতক জায়গায় জুড়ে অবস্থিত শ্মশানটি এতোদিন সংশ্লিষ্টদের চরম অবহেলার জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল। আর এ সুযোগে এলাকার এক শ্রেণীর লোভী ও স্বার্থন্বেষী মানুষ সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় শ্মশানের বেশ কিছু পরিমাণ জায়গায় নিজের দখলে নেয়। সেই সঙ্গে খড়খড়িয়া নদীর পাড় ঘেঁষে শ্মশানের অবস্থান হওয়ার বর্ষা মৌসুমে নদীর প্রবল স্্েরাতেও কেন্দ্রীয় শ্মশানের অনেক জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে শ্মশান সংশ্লিষ্টদের চরম উদাসীনতা আর সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে কেন্দ্রীয় শ্মশানটির বেহাল অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মৃত্যুর পর দাহ্ কিংবা সৎকার করতে গিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের সম্মূখীন হতে হতো। মৃত্যু ব্যক্তিকে দাহ্ কিংবা সৎকার করার জন্য সেখানে নেই কোন অবকাঠামো কিংবা চূল্লীর ব্যবস্থা। সেখানে আসা মানুষদের বসার জন্য ছিল না কোন বিশ্রামাগার কিংবা ছাউনির ব্যবস্থা। শ্মশানে যাওয়া-আসার রাস্তাটির অনেকাংশ নদীতে বিলীন হওয়ার কারণে অনেক কষ্ট করে সরু পথ ধরে কোন রকমে যেতে হতো শ্মশানঘাটে। এ সব নানাবিধ সমস্যার কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষগুলো তাদের পরিবারের মৃত্যু ব্যক্তিকে শ্মশানে দাহ্ কিংবা সৎকার করতে গিয়ে মারাত্মক বিপাকে পড়তেন।
এ অবস্থায় সৈয়দপুর শহরের কেন্দ্রীয় শ্মশান ঘাটটির উন্নয়নে এগিয়ে আসেন হিন্দু সম্প্রদায়ের যুবকরা। তারা উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহন করে। এ জন্য গঠন করেন যুব হিন্দু কল্যাণ শ্মশান কমিটি। বিকাশ পোদ্দারকে সভাপতি ও কিশোর কুমার প্রাসাদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট যুব হিন্দু কল্যাণ শ্মশান কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির নেতৃবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের আর্থিক সহায়তায় ২০ লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরে শুরু করেছে শ্মশানের উন্নয়ন কাজ। গত ২৬ মার্চ শুরু হওয়া উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে খড়খড়িয়া নদীর কবল থেকে শ্মশানের জায়গা রক্ষায় গার্ডওয়াল নির্মাণ, রাস্তা পাকাকরণ, মন্দির ও মৃত্যু ব্যক্তিকে দাহ্ করতে অত্যাধুনিক চূল্লী নির্মাণ, জরাজীর্ণ বিশ্রামাগারটির সংস্কার, বৈদ্যূতিক আলোর ব্যবস্থাকরণ, বৃক্ষরোপন প্রভূতি।