যেন নো-ম্যানস্ ল্যান্ডে জুয়ার আসর!
https://www.obolokon24.com/2017/06/rangpur_46.html
পুলিশ, এলাকাবাসী এমনকি মাহে রমজানও মানছে না জুয়াড়ীরা! আসরেই সেহরী-ইফতার করছে জুয়াড়ীরা!
মামুনুররশিদ মেরাজুল,পীরগঞ্জ,রংপুর-
রংপুর-দিনাজপুর-গাইবান্ধার সীমান্তে জমজমাট জুয়ার আসর চললেও সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ এর দায় নিচ্ছে না। পুলিশ সীমান্তের দোহাই দেয়ায় জুয়াড়ীরা যেন নো-ম্যানস্ ল্যান্ডে (কেউ এলাকার বা জমির মালিকানা দাবী না করা) রমজান মাসেও ওইসব জুয়ার আসর চালাচ্ছে। এমন কি জুয়ার আসরেই জুয়াড়ীরা ইফতার-সেহরীও সেরে নিচ্ছে। গত ৩১ মে রংপুর পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পীরগঞ্জে জুয়ার আসর পরিদর্শন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারপর দিন থেকে আবারো একই স্থানে জমজমাট আসর চলছে।
এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, রংপুর-দিনাজপুর-গাইবান্ধার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদীর চরে জুয়াড়ীরা পুলিশ, সরকারী দলের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদেরকে ম্যানেজ করে বেশ কয়েকটি স্থানে বছরের পর বছর ধরে জুয়ার আসর চালিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। ফলে এলাকাবাসী, সচেতন মহল বিভিন্ন দফতরে বারবার অভিযোগ দিলেও কোন কাজ হচ্ছে না। জুয়া আসর সংশ্লিষ্ট পীরগঞ্জ, পলাশবাড়ী, ঘোড়াঘাট এবং নবাবগঞ্জ থানার পুলিশ সীমান্ত জটিলতার কথা উল্লেখ করে জুয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে জুয়া বন্ধ করতে গেলে জুয়াড়ীদের সাথে এলাকাবাসীর একাধিক সংঘর্ষও হয়েছে। অপরদিকে চলতি বছরের ৬ মার্চ দিনাজপুরের উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা করতোয়া নদীর চরে পীরগঞ্জের পার্শ্ববর্তী পারবোয়ালমারী গ্রামে জুয়া বন্ধ করতে গেলে জুয়াড়ীরা পুলিশকে বেধড়ক মারপিট করে। ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে।
বর্তমানে পীরগঞ্জের বড়আলমপুর ইউনিয়নের সিরাতনের ঘাট ও উচাপাড়া এবং চতরা ইউনিয়নের টোংরারদহ নামকস্থানে প্রতিদিন বিকেল থেকে শেষ রাত পর্যন্ত জমজমাট জুয়ার আসর চললেও সীমান্ত এলাকার থানার পুলিশ জুয়া আসরের দায় নিচ্ছে না। ফলে অপ্রতিরোধ্য জুয়াড়ীরা জুয়া আসরে বসেই সেহরী ও ইফতার করছে বলে একাধিক বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে। ওইসব জুয়ার আসর থেকে থানা পুলিশ, কতিপয় সাংবাদিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মোটা অংকের টাকা আসে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড়আলমপুর ইউপির সাবেক এক মেম্বার বলেন, সিরাতনের ঘাট জুয়ার আসরের প্রতিদিনের খাজনা (খরচ) ৪০ হাজার টাকা। ওই টাকা বিভিন্ন স্থানে দিয়ে জুয়া চলছে। যে কারণে জুয়াড়ীরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩১ মে ইফতারীর আগে রংপুরের সার্কেল-ডি অতিরিক্ত সিনিয়র পুলিশ সুপার (এএসপি) জাকারিয়া হোসেন বড়আলমপুর ইউনিয়নের সিরাতনের ঘাটে গেলে জুয়াড়ীরা পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে এএসপি জাকারিয়া হোসেন বলেন, পবিত্র রমজানেও জুয়ার আসরের কথা শুনে আমি পীরগঞ্জের বড়আলমপুর ইউনিয়নের সিরাতনের ঘাটে গিয়ে জুয়ার আসর দেখেছি। আমাদের উপস্থিতি দেখে জুয়াড়ীরা ঘটনাস্থল থেকে,দৌড়ে ও মোটর সাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। আমাদের ফোর্স না কম থাকায় কোন জুয়াড়ীকে আটক করতে পারিনি। অপরদিকে ওই ইউনিয়নের উচাপাড়া এবং চতরা ইউনিয়নের টোংরারদহতে জুয়ার আসর চলছে। চতরা ইউপির চেয়ারম্যান এনামুল হক প্রধান শাহীন বলেন, আমি যতদুর জানি, আমার এলাকায় জুয়া চলছে না। সম্ভবত ঘোড়াঘাট উপজেলার সীমান্তে চলছে। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থানার ওসি ইসরাইল হোসেন বলেন, জুয়া খেলার অভিযোগ পেয়ে আমি স্থানটি দেখতে গিয়েছিলাম, স্থানটি আমার থানায় নয়। করতোয়া নদীরপাড়ে পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নে টোংরারদহ নামকস্থানে জুয়ার আসর চলছে। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত কুমার বলেন, আমার থানার কোথাও জুয়া চলছে না, চলবে না। পীরগঞ্জ থানার ওসি রেজাউল করিমও দাবী করে বলেন, আমার থানায় কোন জুয়া আসর নেই। অন্য থানার সীমানায় চলছে। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জুয়াড়ীরা পুলিশও মানছে না। এমনকি রমজান মাসও মানছে না।