সারাদেশের ন্যায় ঠাকুরগাঁওয়ে নার্স দিবস পালিত : দেশে নার্সের ঘাটতি দুই লাখ
https://www.obolokon24.com/2017/05/thakurgaon_15.html
আব্দুল আউয়াল ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
সম্প্রতি দেশে একযোগে ১০ হাজার
নার্স নিয়োগ দেয়া হলেও এখনো রোগীর তুলনায় নার্সের সংখ্যা কম রয়েছে। যে হারে
দিন দিন রোগী বাড়ছে সে অনুযায়ী নার্স হাসপাতালগুলোতে নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থার হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রায় দুই লাখ নার্সেও ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া
নার্সদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ প্রদান ব্যবস্থা খুবই নগণ্য। তাদের
আবাসনের ব্যবস্থা, ট্রান্সপোর্ট সুবিধা, ভালো কাজের মূল্যায়ন ও মনিটরিংয়ের
ভিত্তিতে অনিয়মের জন্য কোনো শাস্তির ব্যবস্থা না থাকার কারণে রোগীরা তাদের
কাঙ্খিক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে নার্সরা তাদের এ পেশাকে
সেবা নয় চাকরি হিসেবে গণ্য করছেন।বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, নার্স সংকট সমাধানে সরকার একযোগে যে নার্স নিয়োগ দিয়েছে তা অনেক প্রসংশনীয়। নার্সিং পেশা অনেক বড় মহৎ পেশা। তবে নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীরা এ পেশাকে সেবা নয়, ‘চাকরি’ হিসেবে গণ্য করছেন। এ সমস্যার উত্তরণে নার্সিং শিক্ষা কোর্সে বিহেভিআর চেঞ্জ কমিউনিকেশন (বিসিসি) বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। কারণ, পেশাগত জীবনে দায়িত্ব ও যথোচিত আচার-আচরণ সম্পর্কেও শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে নার্সদের।
হাসপাতালের রোগীদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রয়োজনের সময় নার্সদের ডেকেও সাড়া পাওয়া যায় না। অনেক সময় তারা গল্পগুজব নিয়ে ব্যস্ত থাকে। নিজেদের কাজ করতে ওয়ার্ডবয়-আয়াদের নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া আরো নানা অভিযোগ রয়েছে মহৎ এই পেশায় নিযুক্ত অনেকের বিরুদ্ধে।
এরই মধ্য দিয়ে আজ দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের উক্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হয় । এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নার্সের ভূমিকা অনস্বীকার্য’।
বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বিএনএ) ১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশে দিবসটি পালন করে আসছে। অতীতে ঢাকায় স্বল্প পরিসরে দিবসটি পালিত হলেও বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনে দিবসটি উদযাপন করছে। আধুনিক নার্সিংয়ের প্রবর্তক ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের সেবাকর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারই জন্মদিন ১২ মে আর্জাতিক নার্স দিবস পালন করা হয়। তবে এবার ১২ মে পবিত্র শবেবরাতের ছুটি থাকায় আন্তর্জাতিক নার্স দিবস আজ ১৪ মে রোববার পালিত হচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে নার্সিং ইনস্টিটিউটে এসে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ঠাকুরগাঁও জেলার সিভিল সার্জেন ডা: আবু মো: খয়রুল কবির ও নার্সি এ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক খরশেদ আলম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় দুই লাখ নার্সের ঘাটতি রয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক ও নার্সের আনুপাতিক হার হওয়ার কথা একজন চিকিৎসক থাকলে নার্স থাকবেন ৩ জন। কিন্তু আমাদের দেশে চিকিৎসকের তুলনায় নার্সেও সংখ্যা অনেক কম। তিনজন রোগীর বিপরীতে একজন নার্স থাকার কথা। সেখানে চিত্র উল্টো। কোনো কোনো হাসপাতালে ২০ জন রোগীর বিপরীতে নার্স মাত্র একজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৫-১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সারাদেশে সরকারি পর্যায়ে ৬০৩টি এবং বেসরকারি পর্যায়ে ৪ হাজার ২৮০টি হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৪৮ হাজার ৮৮১টি, বেসরকারি হাসপাতালে ৭৬ হাজার ৬২০টিসহ মোট এক লাখ ২৩ হাজার ৪৯১টি শয্যা রয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন শয্যার অতিরিক্ত রোগী। কিন্তু সেই তুলনায় দেশে পর্যাপ্তসংখ্যক নার্স নেই।
হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক বলেন, আমাদের দেশে নার্সিংয়ে শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণে পারিবারিক শিক্ষারও অভাব রয়েছে। নার্সিং পেশায় আসা উচিত সেবার লক্ষ্য নিয়ে। কিন্তু আমাদের দেশে যারা আসছেন, তারা চাকরির লক্ষ্য নিয়ে আসছেন। এ ছাড়া এখানে নার্সিং পেশাটি এখনো অনেক অবহেলিত। দক্ষতা ও জ্ঞানের অভাবও রয়েছে। এমনও দেখা গেছে, একজন নার্স একটি বিভাগে কিছু দিন কাজ করার পর যখন দক্ষ হয়ে ওঠেন, তখন তাকে অন্য কোনো বিভাগে সরিয়ে দেয়া হয়। প্রত্যাশিত সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে শুধু নার্সদের দোষ দিলেই হবে না। রোগী ও স্বজনদেরও দায়িত্ব আছে। কিন্তু তারা অনেক সময়ই নার্সদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। একজন নার্সের মেজাজ খারাপ থাকলে ভালো সেবা মিলবে না