সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনের ভোট গ্রহন সম্পন্ন।
https://www.obolokon24.com/2017/05/saidpur_83.html
তোফাজ্জল হোসেন লুতু,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
আজ মঙ্গলবার (১৬ মে) অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনের। এ উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহনের জন্য স্থাপিত ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারে কম। উপজেলার বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র সরেজমিনে ঘুরে ভোট প্রয়োগে ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি। উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে একটি পৌরসভায় ও উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে মোট ৭১টি ভোট কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়। সকাল ৮টা বাজার যাওয়ার আগে থেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ভোট কেন্দ্রের ভোট নেওয়ার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহন করেন। কিন্তু ভোটাররা অনেক দেরি করে ভোট কেন্দ্রে আসতে থাকেন। আর ভোটগ্রহনের নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ সকাল ৮টা থেকে বিকেলে ৪টা পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসে নিজ নিজ ভোট দিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করেন।সকাল ১০টায় সৈয়দপুর পৌরসভার এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দারুল উলুম মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভোট কেন্দ্রের বুথের সামনে কোন ভোটার নেই। ভোটকেন্দ্রের বাইরে লোকজনের ভীড়। এ সময় সেখানে অনেক ভোটারকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। এ সময় এক ভোটারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিনিধির। তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, এখনও ভোট দেইনি। ওই ভোটার বলেন ভোট কেন্দ্রের বাইরের পরিবেশ পরিস্থিতি দেখছি, সব বুঝে, চিন্তা-ভাবনা করে ভোট দিব। এ কেন্দ্রের সামনে অপর এক ভোটার জানান, ভোট কেন্দ্র ঘুরছি।ভোট দিব পরে।
দুপুর সোয়া ১২টায় সৈয়দপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরুষ ভোট কেন্দ্র সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ভোটাররা দুই এক জন করে এসে ভোট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এ ভোট কেন্দ্রের ভোটার সৈয়দপুর পৌরসভার খেঁজুরবাগ মসজিদ এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক নজির হোসেন নজু জানান, ভোট দিতে ৫মিনিটও সময় লাগল না। অন্যান্য নির্বাচনের সময় ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের লাইনে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে হয়েছে। এবারের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো দেখলাম। এখানে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব ছিলেন সৈয়দপুর মহাবিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান। তিনি জানান, তাঁর কেন্দ্রে শুধুমাত্র পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৩ হাজার ৪৩৫জন। দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত ২০ শতাংশ ভোট পড়েছে ওই কেন্দ্রে। আর সকাল ১০টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রের ৮টি বুথে নেওয়া ভোট পড়ে ১১ দশমিক ২০%।
উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষণপুর স্কুল এন্ড কলেজ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বচানের রিটারিং অফিসার ও নীলফামারী জেলা নির্বাচন অফিসার মো. জিলহাস উদ্দিন ভোট কেন্দ্রে পরিদর্শন করে বের হচ্ছে। এ সময় ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির কথা স্বীকার করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন ভোট কেন্দ্রের সার্বিক পরিবেশ অনেক সুন্দর। কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনায় ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ওই ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইজিং অফিসার দায়িত্ব পালন করছিলেন সৈয়দপুর মহিলা ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের প্রভাষক মো. লোকমান হাকিম। তিনি জানান, এখানে ভোটার সংখ্যা এক হাজার ৬৩৯জন। পৌণে একটা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ৩৬০ জন ভোটার তাদের ভোট প্রয়োগ করেছেন। ভোট পড়েছে শতকরা ২৩ দশমিক ৩৯ ভাগ। এ কেন্দ্রের আইনশৃংখলার দায়িত্ব ছিলেন নীলফামারী ডোমার থানায় কর্মরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, এ কেন্দ্রে তাঁর নেতৃত্বে একজন সহকারি উপ-পরিদর্শক (এ এস আই) ও ৪জন পুলিশ কনস্টেবল এবং ১৪ জন আনাসর সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, সকালে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি একেবারে কম ছিল। এখন ২/১জন করে ভোটার আসতে শুরু করেছেন।
উপজেলার ৫ নম্বর খাতামধুপুর ইউনিয়নের ময়দানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সরেজমিনে যাওয়া হয়েছিল বেলা দেড়টায়। এ সময় সেখানে দেখা যায় কোন ভোটার নেই। বাইরে কিছু উৎসুক মানুষের ভীড় থাকলেও ভোট গ্রহনের কাজে নিয়োজিত কেন্দ্রের কর্মকর্তা বসে অলস হয় পার করছিলেন। প্রিজাইডিং অফিসার সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক মো. আব্দুল মান্নান জানান, তাঁর ভোট কেন্দ্রে ১ হাজার ৯২১ ভোটারের মধ্যে ওই সময় পর্যন্ত ভোট কাস্ট হয়েছে ৭ শ’ মতো। এ সময় সেখানে ভোট কেন্দ্রে কথা হয় নীলফামারী জেলা পরিষদ সদস্য মো. শামীম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনিও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি দেখে হতাশা প্রকাশ করেন।
বিকেলে পৌণে ৪টায় উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের বোতলাগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ বুথে কোন ভোটার নেই। কিন্তু মহিলা বুথে ভোট প্রদানের জন্য হাতেগোনা কয়েকজন অপেক্ষায় ছিল। এ সময় প্রিজাইডিং অফিসার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. ময়নুল ইসলাম জানান, তাঁর কেন্দ্রে মোট ভোট সংখ্যা ২ হাজার ৪২০জন। আর ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১ হাজার ১১০জন।
সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাপা(এ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৫জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। সৈয়দপুর পৌরসভা ও উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮১ হাজার ৫০৭জন। উল্লিখিত সংখ্যক ভোটারের জন্য ৭১টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহন করা হয়। আর সকাল ৮ টা থেকে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাওয়াদুল হক সরকার দূরারোগ্য ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত ১ মার্চ রাতে ঢাকায় শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন পদটি শুন্য ঘোষণা করে ৫ এপ্রিল চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের তফশীল ঘোষণা করেন। সে তফশীল মোতাবেক আজ (১৬ মে) সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনের ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে।