পীরগঞ্জ ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শুধু সংকট আর সংকট!
https://www.obolokon24.com/2017/05/rangpur_84.html
মামুনুররশিদ মেরাজুল,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
মাত্র চার ভাগের একভাগ চিকিৎসক দিয়ে পীরগঞ্জের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। তারপরও বেশীরভাগ সময় ডাক্তার ও ঔষুধ সংকট থাকায় রোগীদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রায় ৭ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে অপারেশন থিয়েটারটি। আধুনিক যন্ত্রপাতি, এক্স-রে, ইসিজিসহ প্রয়োজনীয় মেশিনপত্রও দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে আছে। এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারের অভাবে কমপ্লেক্সটি ঘিরে মাইক্রোবাস মালিকরা বিকল্প এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস গড়ে তোলায় আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে রোগীরা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে পুঁজি করে প্রাইভেট বানিজ্য গড়ে উঠেছে। ফলে উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে এসে রোগীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে দেদারছে গবাদিপশুও চরছে। যেন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।
সুত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ৩৩১টি গ্রামে প্রায় ৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে জুনিয়র কনসালটেন্ট ১০ জন এবং মেডিকেল অফিসারের ২৭ টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। ওইসব পদের মধ্যে ৫জন কনসালটেন্ট ও ৪ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে শম্ভুক গতিতে চলছে চিকিৎসা সেবা। পাশাপাশি নার্স ও অন্যান্য পদেও অনুমোদিত পদের মধ্যে চারভাগের একভাগ কর্মচারী দিয়ে সেবা কার্যক্রম চলার কারণে রোগীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অর্থোপেডিকস, মেডিসিন, এ্যানেসথেসিয়া (অবেদনশীল), কার্ডিওলজি এবং নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ নেই। রয়েছে শিশু, গাইনী, সার্জারী, চর্ম-যৌন এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞ। অপরদিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে ৯টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৯জন মেডিকেল অফিসারের স্থলে মাত্র ১ জন রয়েছেন। বর্তমানে পীরগঞ্জের ৫ জন মেডিকেল অফিসার এবং চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেষনে রয়েছেন। তারা পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেই বেতনভাতা উত্তোলন করছেন। অপরদিকে যে কয়জন মেডিকেল অফিসার রয়েছেন, তাদের কয়েকজন ৪০ কিলোমিটার দুরে রংপুর জেলা শহরে থাকেন। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডক্টরস কোয়ার্টারগুলো অযতœ অবহেলায় পড়ে রয়েছে। অণেক সময় ডাক্তারদের অফিসে আসতে দেরী হয়, আবার চলেও যান তাড়াতাড়ি। এই প্রবনতার কারণে রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও অফিস সময়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা ডাক্তারদের সাথে আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত থাকছে। অপরদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরীন ও বহিরাগত রোগীদেরকে সরকারী ওষধ সরবরাহ দেয়া নিয়ে নানান সমস্যার কথা শোনা গেছে। শুধু নামমাত্র কয়েকটি ট্যাবলেট আর ক্যাপসুল, কখনো সিরাপ-স্যালাইন রোগীদেরকে দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ রোগীকেই বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে হয় বলে জানা যায়। এদিকে কমপ্লেক্সের ভিতরে স্থানীয় বেশকিছু গরু দলবেধে অবাধেই চরছে। গরুগুলো অনেক সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা সাধারন মানুষদেরকে হামলা করে আহত করছে। যেন কেউ দেখার নেই। কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় এক রোগীর সাথে। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি জানান, অধিকাংশ সময় খাবার এবং ঔষধ বাহির থেকে আনতে হয়। হাসপাতাল থেকে যে খাবার সরবরাহ করা হয় তা খাওয়া যায় না। খালি ডাল, আর ভাত। কোন সময় সবজি দেয়। মাছ-গোস পাওয়াই মুশকিল। মহিলা ওয়ার্ডেও কয়েকজন রোগী একই সমস্যার কথা বলেন। নাম প্রকাশ না করে কর্তব্যরত এক নার্স জানায়, আমাদেরকে যেভাবে ওষুধ সরবরাহ দেয়া হয়, সেভাবেই রোগীদেরকে দেই। তবে বাইরে থেকেই বেশী ওষুধ রোগীদেরকে কিনতে হয়। এখানে নার্সের সংকট থাকায় আমাদেরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও (আবাসিক মেডিকেল অফিসার) ডাঃ জিয়াউর রহমান বলেন, জনবলের অভাবে আমাদের সেবা কার্যক্রম দেয়া কঠিন হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডাঃ মোখলেছুর রহমান বলেন, কয়েকদিন আগে ৪জন ডাক্তার যোগদান করেছেন। তারপরও জনবলের তীব্র সংকট রয়েছে। ৩ জন চালকের স্থলে ১জন থাকায় হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স ও একটি গাড়ী চালানো সম্ভব হচ্ছে। অজ্ঞানকারী ডাক্তারের অভাবে প্রায় ৭ বছর ধরে আধুনিকমানের অপারেশন থিয়েটারটি বন্ধ রয়েছে। তিনি ওষুধ সংকটের কথা এড়িয়ে যান। ভাল মানের খাবার সরবরাহ দেয়া হচ্ছে বলে তিনি দাবী করেন।