রংপুরে ভাগ্নে’র রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় খালু গ্রেফতার
https://www.obolokon24.com/2017/05/rangpur_15.html
ক্লু উদঘাটনে মাঠে পুলিশের চৌকস টিম
হাজী মারুফ :
খালার বাড়িতে মিম (১৫) নামের এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের খালুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার নগরীর রংপুর-বদরগঞ্জ সড়কের পীরজাবাদ দরগারপাড়া এলাকায়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে জড়িতরা প্রভাবশালী মহলের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, রংপুর নগরীর কেরানীপাড়া জামতলা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম মোহন বানিয়া পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া জমি-জমা বিক্রি করে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে গাজীপুরে বসবাস করেন। তবে বড় ছেলে মিম (১৬) কে তার খালা আনজিনা বেগমের রংপুর-বদরগঞ্জ সড়কের পীরজাবাদ দরগারপাড়াস্থ বাড়িতে রেখে যায়। সেখানে থেকে মিম পড়াশুনা করে। তার লেখাপড়ার ব্যয়বহন করে পিতা। মিম নগরীর বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ হতে চলতি বছরের এসএসসি পরিক্ষায় অংশ নেয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ছিল পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিনক্ষন।
গত বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টারদিকে স্বজনদের কাছে মিমের আত্মহত্যার খবর পৌঁছে। দ্রুত স্বজনরা ছুটে যায় খালু মঞ্জুরুলের বাড়িতে। সেখানে লাশ ও সরেজমিন দেখে প্রত্যক্ষদর্শীদের মনে সন্দেহের দাঁনা বাধে। মিমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সহপাঠী, শিক্ষকমন্ডলিসহ শুভাকাঙ্খিদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। এদিকে, মিম ৪ পয়েন্ট ৫১ জিপিএ লাভ করেন। মিমের ভালো ফলাফল অর্জনের আনন্দ’র পরিবর্তে বিষাদের ছায়ায় পরিণত হয় সর্বত্রই।
গত বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১ টারদিকে খবর পেয়ে চাচা সুমন, ফুপাতো ভাই আননাছ, শিমুল পরিবারের লোকজন মঞ্জুরুলের বাসায় ছুটে যায়। সেখানে একটি টিনের চালাঘরে গলায় ওরনা পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার চালানো হয়। কিন্তু যে ঘরে মৃতের লাশ ছিল, সেখানে আত্মহত্যার কোন আলামত নেই বললেই চলে। চালাঘরটির ভেতরে দাড়ালেই চালের টিন মাথায় স্পর্শ হয়। অথচ বলা হচ্ছে মিমের আত্মহত্যা কথা। যদি আত্মহত্যাই হয়, তাহলে মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে, কিন্তু মিমের লাশ কুজু হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর গলায় যে ওরনা দেয়া হয়, সেই ওরনার একটি টুকরা, একটি ব্লেড লাশের পাশে পড়ে ছিল। আবার ঘটনাস্থরেই তার মৃত্যু হলেও মিমের পরিবারকে অবগত না করে ঘটনা ধামাচাপা দিতে তরিঘরি করে পার্শ্ববর্তী প্রাইম হসপিটালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এসময় প্রাইম হসপিটালে কর্মরত মিমের ফুপু মরদেহ দেখে তাৎক্ষনিক স্বজনদের খবর দেয়। গাজীপুরে কর্মরত মিমের বাবাকে সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হয়।
এদিকে, খবর পেয়ে রংপুর কোতয়ালী থানার অফিসার্স ইনচার্জ এবিএম জাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান। এসময় খালু মজ্ঞুরুল ইসলাম, খালা আনজিনা বেগমকে অনেক খোজাখুজি করেও পাওয়া যায়নি। শুধু মজ্ঞুরুলের মেয়ে আতিকা আক্তার ছিল। সে কিছুই জানেন না।
খবর পেয়ে মিমের বাবা-মা রিনা রিনা বেগমসহ অপর সন্তানদের নিয়ে রংপুরে পৌছেন। এসময় সন্তানের মরদেহ দেখে কান্না আর আহাজারিতে বার-বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। আর মা রিনা বেগম নির্বাক হয়ে পড়েন। এসময় স্বজনসহ সহপাঠী, শুভাকাঙ্খিদের মধ্যে শোকের মাতম ধেয়ে আসে। অপরদিকে, ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে জড়িতরা প্রভাবশালী মহলের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন নিহতের পরিবারবর্গ।
এ ব্যাপারে, পরিবারের পক্ষ হতে ‘চলমান বার্তা’কে বলেন, পীরজাবাদ দরগারপাড়া এলাকায় জমি কেনার জন্য মঞ্জুরুলকে মিমের বাবা প্রায় ৪৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। টাকা লেনদেনের জের ধরে হয়তো মিম নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়। মিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে কতিপয় লোকেরা আত্মহত্যা বলে প্রচারের চেষ্টা চালিয়েছে। রংপুর কোতয়ালী থানার এসআই হাফিজ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করে দুপুরের দিকে মরদেহটি উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে। বিকেলের দিকে ময়না তদন্ত শেষে মৃতের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টারদিকে নামাজের যানাজা শেষে মুন্সীপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে হত্যাকান্ডের অভিযোগে কোতয়ালী থানায় নিহতের বাবা রেজাউল ইসলাম মোহন বাদী হয়ে একটি এজাহার দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাত আড়াই টারদিকে এসআই হাফিজের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে হানা দিয়ে মৃতের খালু মঞ্জুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। এদিকে, কোতয়ালী থানার এসআই হাফিজ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। হত্যাকান্ডের ক্লু উদঘাটনে কার্যক্রম অব্যাত রয়েছে। এ ঘটনায় ১ জনকে আটকের কথা স্বীকার করেন তিনি।
এদিকে, মিমের রূহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কেরানীপাড়াস্থ (জামতলা মসজিদ গলি) বাড়িতে গত শনিবার বাদ আছর মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে, নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র জানায় মজ্ঞুরুলের বাড়িতে আসা ২ মেয়েকে পুলিশী হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকান্ডের রহস্য উম্মোচন হবে বলে ধারনা করছে।
অপরদিকে, মৃতের ঘটনা রহস্যজনক এমন মন্তব্য করে কোতয়ালী থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) এবিএম জাহিদুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ অব্যাহত রয়েছে। ।
অপরদিকে, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজামুল হাসান বাদল বলেন, পরিকল্পিতভাবে মিমকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে অবিলম্বে জড়িতদের সনাক্তপূর্বক গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন তিনি।