দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু চালু হওয়ার অপেক্ষায় রংপুর বিভাগের অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া হাজারো মানুষ

এস.কে.মামুন

দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু চালু হওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন রংপুর বিভাগের অর্থনৈতিক ভাবে ও আধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থা থেকে পিছিয়ে পড়া রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলা ও এর আশে পাশের এবং লালমনিরহাটের ৪টি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। সেতুটি চালু হলে অন্যতম স্থল বন্দর বুড়িমারি থেকে পণ্য আনা নেয়াতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। দুরত্ব কমে যাওয়ায় পণ্য পরিবহনে  শুধু আমদানী ও রপ্তানীকারকদের প্রতিমাসে সাশ্রয় হবে প্রায় ১ কোটি টাকারও বেশি । রংপুরাঞ্চলের স্বপ্নের সেতুকে ঘিরে চুলচেরা হিসেব নিকেষ শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। এদিকে সেতু তদারকিকারি এলজিইডি কর্তৃপক্ষের দাবি  মূল সেতুর  ৯৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খুব শ্রীঘ্রই জনসাধারনের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। 
ভৌগেলিক কারনে লালমিনরহাট জেলার বিশেষ করে ৪ উপজেলা পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ এবং আদিতমারি সহ উল্লিখিত উপজেলার অন্তর্গত বুড়িমারি স্থল বন্দর, বড়খাতা ও কাকিনা হাটের মতো গ্রোথ সেন্টারের আশেপাশের মানুষেরা রংপুর বিভাগীয় নগরীর খুব কাছে বসবাস করেও  তিস্তা নদীতে সেতু না থাকায় দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে বাধ্য  হচ্ছেন। অনুরুপ ভাবে রংপুর জেলার গংগাচড়া সহ আশেপাশের মানুষকেও লালমনিরহাট জেলায় যেতে একই ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। এতে সময় ও টাকা উভয়ের অপচয় হচ্ছে। এ ছাড়াও সরাসরি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সুবিধাবঞ্চিত দুই জেলার চরাঞ্চলে বসবাসকারি অগণিত মানুষ। পাশাপাশি বিভাগের অন্যতম  বুড়িমারি স্থল বন্দর  পাটগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত হলেও মালামাল পরিবহনে সকল স্থানের ব্যবসায়িদের দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তাই  লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার মাঝামাঝি বিভক্তকারি তিস্তা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়। অবশেষে তিস্তার নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচায়ের পর ২০১২ সালে লালমনিরহাটের কাকিনা এবং রংপুরের গংগাচড়ার মহীপুরের মাঝে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার কাকিনা গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হাসান জিপটু বলেন, সেতুটি চালু হলে খুব সহজে অল্প সময়ে রংপুর নগরী এলাকায় প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে আবার বাড়ি ফিরে আসতে পারবো। এতে ক্ষেত্র বিশেষে ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার দুরত্ব কমে যাবে। আগামী দিনে অর্থনৈতিক কর্ম চঞ্চল্য সৃষ্টিতে এই সেতুটি কতটা গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠছে তা উল্লেখ করতে গিয়ে রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার মহিপুর গ্রামের বাসিন্দা সাব্বির মিয়া বলেন, নবনির্মিত সেতুর পাশে জেলা পরিষদের খেয়া ঘাট অবস্থিত। এতে সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টানা বড় ৮টি নৌকা প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এবং শত শত যানবহন পার করছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরও বলেন গত মৌসুমে ১ বছরের জন্য খেয়াঘাটটি প্রায় ৯৬ লাখ টাকায় ডাক হয়েছে। বুড়িমারি স্থল বন্দরের মাধ্যমে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনাকারি একাধিক আমদানীকারক এবং সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ৪শতাধিক ট্রাক বিদেশ থেকে আমদানীকৃত পাথর কয়লা সহ বিভিন্ন পন্য রংপুর সহ দেশের অন্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়িরা। এছাড়াও প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রপ্তানীর উদ্দেশ্যে প্রায় দেড় শতাধিক ট্রাক বুড়িমারী স্থল বন্দরে আসে। কিন্তু বিকল্প রাস্তা না থাকায় প্রতিটি ট্রাককে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হচ্ছে। কিন্তু সেতুটি চালু হলে স্থলবন্দর থেকে রংপুর যেতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দুরত্ব কমে যাবে। একই সুবিধা ভোগ করবে অন্যস্থান থেকে স্থল বন্দরের উদ্দেশ্য আসা পণ্যবাহী ট্রাক। অন্যতম আমদানিকারক ও সরবরাহকারি  প্রতিষ্ঠান মেসার্স টি এন এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স খুশি ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারি তাহজুল ইসলাম বাবলু বলেন, বর্তমানে রংপুর পর্যন্ত ২২ টন পাথর বহনে ট্রাকের ভাড়া লাগে সাড়ে ১১ হাজার টাকা। সেতু চালু হওয়ার পর যদি দুরত্ব ৫০ কিলোমিটার কমে যায় তাহলে প্রতি ট্রাকে সাশ্রয় হবে নিন্মে দেড়  হাজার থেকে ২ হাজার টাকা।
এলজিইডি রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর রংপুর দিনাজপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (জিআরডিপি) অর্থায়নে ১২১ কোটি ৬৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ব্যয়ে রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলার মহিপুর এবং লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার কাকিনা নামক স্থানে তিস্তা নদীর ওপর ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল সেতুটির নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে সেতুটি নির্মাণ শুরু করে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কন্সট্রাকশন। ৮শ ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটির প্রস্থ ৯ দশমিক ৬০ মিটার। যানবহন চলাচলের জন্য বরাদ্দ আছে ৭ দশমিক ৩০ মিটার । দুই পার্শ্বে ফুটপাত আছে ০ দশমিক ৯ মিটার। সেতুটির মোট স্প্যান আছে ১৭টি। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার। প্রতিটি স্প্যানে পিসি গার্ডার আছে ৫টি করে।
সরেজমিনে নির্মাণাধীন সেতু এলাকা মহীপুর এবং কাকিনা ঘুরে দেখা গেছে, মহিপুরে সেতুর এপ্রোচ সড়কের জন্য মাটি ফেলে বহুদুর পর্যন্ত সড়ক উচুকরণ সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় কথা হয় সেতু নির্মাণকারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কন্সট্রাকশনের ম্যানেজার প্রবীর বিশ্বাসের সাথে তিনি বলেন, মুল সেতুর কাজ বাকী বলতে দুইধারের রেলিং নির্মাণের কাজ এবং বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ। তিনি বলেন, ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে সেতুর কাজ শুরু করেছেন। ২০১৪ জুনে সেতু নির্মাণ কাজ চুড়ান্ত হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব না হওয়ায় পরে সময় বৃদ্ধি করে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে তিনি বলেন জুন মাসের শেষ নাগাদ মূল সেতুর কাজ শেষ করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হবে। এ সময় কথা হয় সেতুটির অধিকাংশ কাজ সরাসরি তদারিককারি লালমনিরহাট জেলা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম জাকিউর রহমানের সাথে। তিনি দাবি করেন, মুল সেতুর শতকরা ৯৮ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এদিকে রংপুর মহিপুর এলাকার দিকে অবস্থিত সেতুর প্রায় ৭ কিলোমিটার এপ্রোচ রোডের কাজ তদারকি করছে রংপুর জেলা এলজিইডি। এর নির্বাহী আকতার হোসেন বলেন, সড়কের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করি নির্দিষ্ঠ সময়ে এপ্রোচ সড়কের কাজ সম্পন্ন হবে।
এলজিইডি রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আজিজুর রহমান বলেন, আশাকরি জুন মাসেই সেতুটি চলাচলের উপযোগি হয়ে উঠবে। বর্তমানে মূল সেতুর কাজ প্রায় শেষ। এখন ব্রীজের দুই প্রান্তে এ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ চলছে। সেতুটি চালু হলে  বুড়িমারী স্থল বন্দর সাথে যোগাযোগ আরো সহজ হবে। ক্ষেত্র বিশেষে দুরত্ব ৫০ কিলোমিটার কমে যাবে। এতে সময় ও টাকার অপচয় কমবে।  এছাড়া সেতু সংলগ্ন ব্যাপক জনগোষ্ঠি সরাসরি বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সহজে যুক্ত হতে পারবেন বলে তিনি দাবি করেন। রংপুরাঞ্চলের মানুষ তাকিয়ে আছেন  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবে উদ্বোধন করবেন দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুটি।

পুরোনো সংবাদ

লালমনিরহাট 4531257963916989424

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item