কিশোরগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগের নামে চলছে প্রতারণা
https://www.obolokon24.com/2017/05/kisargang_27.html
ভেস্তে যেতে বসেছে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকার
মোঃ শামিম হোসেন বাবু,কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) সংবাদদাতা ঃ
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী জুনিয়র প্রকেীশলী আতাউর রহমান, ইনস্পেক্টর তোজাম্মেল হোসেন, ও ডিজাউন ইঞ্জিনিয়ার মিন্টুসহ সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের মদদে ইলেকট্রিশিয়ান ও দালালরা খুঁটি সম্প্রসারণ, গ্রাম বিদ্যুতায়ন, আবাসিক সংযোগ, শিল্প সংযোগ, সেচ সংযোগের নামে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বানিজ্যের নামে মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘুষের টাকা ইলেক্ট্রশিয়ান ও দালালদের হাত হয়ে চলে যাচ্ছে ওই সব কর্মকর্তার পকেটে ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির হেড অফিস নীলফামারীতে। এমন অবস্থায় ঘুষ ছাড়া নতুন সংযোগ নেওয়ার কথা ভাবতেই পারছেননা গ্রাহকরা । এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সংযোগ প্রত্যাশি হাজার হাজার গ্রাহক। ভেস্তে যেতে বসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার অঙ্গিকার।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উল্লেখিত কর্মকর্তাদের মদদে ইলেকট্রিশিয়ান আব্দুল কাইয়ম, আইনুল, পুলক ,আনছার আলী, মোশারফ এবং দালাল চাঁদখানা ইউনিয়নের মাঝাপাড়া গ্রামের আশরাফুল (হুজুর আলী), নারায়ন, কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর আলম, বাহাগিলি ইউনিয়নের প্রফুল্ল ও জনাব আলীসহ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খুঁটি সম্প্রসারণ, গ্রাম বিদ্যুতায়ন, আবাসিক সংযোগ, শিল্প সংযোগ, সেচ সংযোগের নাম করে গ্রামের সহজ সরল সাধারণ মানুষদের বিদ্যুৎ সংযোগের নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। গ্রাম বিদ্যুতায়নের মাস্টারপ্লানের তালিকাভুক্ত গ্রামগুলোতে নিয়ম অনুযায়ী বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার কথা থাকলে ও বিদ্যুৎ পাইয়ে দেবার কথা বলে ওই সিন্ডিকেট গ্রাহকদের কাছ থেকে মিটার প্রতি চার হাজার থেকে নয় হাজার করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ওই ঘুষের টাকার একটি অংশ ইলেকট্রিশিয়ান ও দালালদের হাত ঘুরে চলে যায় কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎসহ নীলফামারী পল্লী বিদ্যুতের হেড অফিসে।
অভিযোগে প্রকাশ ওই সব ইলেকট্রিশিয়ান ও দালালরা চাহিদামত ঘুষ পেলে কয়েকদিনের মধ্যেই বিদ্যুৎতের ঘুটি বসানোর কাজ শুরু করেন। এরপর কাজ এক পর্যায়ে বন্ধ রেখে আবারো গ্রাহকদের কাছ থেকে নানা কৌশলে মোটাঅংকের টাকা আদায় করে থাকেন। এক্ষেত্রে কোন গ্রাহক তাদের চাহিদামত টাকা দিতে না পারলে ফাইল আটকে রেখে বা নানা অজুহাতে সংযোগের কাজ আটকে রাখা হয। এভাবে মাসের পর মাস বছরের পর বছর বিদ্যুৎ বঞ্চিত রয়েছেন শতশত গ্রাহক।
চাঁদখানা ইউনিয়নের বৈষ্য পাড়া গ্রামের রাখাল বৈষ্যর স্ত্রী রেনুবালা ও নালা বৈষ্যর পুত্র সগেন্দ বৈষ্য বলেন, আমাদের গ্রামের বিশ জন গ্রাহক প্রায় দুই বছর আগে আবাসিক বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করি। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে ব্যর্থ হয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামের ইলেকট্রিশিয়ান আব্দুল কাইয়ম ও দালাল নারায়নের সাথে যোগাযোগ করলে তারা সাত হাজার করে টাকা দাবী করে। তিন হাজার করে টাকা দিলে তারা কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে বাঁকী চার হাজার করে টাকা বুঝে দিলে তারা বিদ্যুতের সংযোগ দেয়। কিন্তু আর্থিন লাগানোর জন্য তাদের চাহিদা অনুযায়ী বাঁকী ২শত টাকা দিতে না পারায় তারা এখন পর্যন্ত আমাদের আর্থিনের সংযোগ দেয় নি।
বাহাগিলি ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আমান উদ্দিনের পুত্র লোকমান হোসেন, আবুল হোসেনের পুত্র সমসের আলী, ছাবেদ আলীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম, রাজ্জাকুলের ছেলে রবিউল ইসলাম ও একই গ্রামের আলতাব হোসেন বলেন, আমাদের গ্রামে দুইশত বিশ জন গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার জন্য ০৭নং ওয়ার্ড মেম্বার জনাব আলীকে পাঁচ হাজার করে টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু। আজ পর্যন্ত আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। অফিসে ঘুরে ও কোন কাজ হচ্ছে না।
কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ইব্রাহীম আলী জানান, আমাদের গ্রামের ৫৬ জন গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ নেবার জন্য প্রত্যেকে ইলেকট্রিশিয়ান আইনুল ইসলামকে চার থেকে পাঁচ হাজার করে টাকা দেয়। কিন্তু আমি গরীব মানুষ দুই হাজার টাকা দিয়েছিলাম বাঁকী তিন হাজার টাকা দিতে না পারায় সংযোগ দেয় নি। বিষয় টি সংবাদিকদের জানালে দুই দিন পরেই আমার সংযোগ দিয়ে দেয়।
ইলেকট্রিশিয়ান আইনুল-এর সাথে যোগাযোগ করে তাকে না পেয়ে ইলেকট্রিশিয়ান কাইয়ুমের সাথে কথা বললে, তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য সাত হাজার টাকা করে নেয়ার কথা ঠিক নয়। খরচ বাবদ কিছ ুটাকা নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী জুনিয়র প্রকৌশলী আতাউর রহমানের সাথে কথা বললে, তিনি বলেন, ভাই আমি এই অফিসে আট বছর ধরে চাকুরী করছি কেউ বলতে পারবে না আমি একটি টাকা ঘুষ নিয়েছি।
কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সাব-জোনাল অফিসার(এজিএম) মোঃ কামাল হোসেন বলেন, গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে, যদি কেউ অফিসের নাম করে টাকা নেয়ার চেষ্টা করে ওই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের জেনারেল ম্যানেজার( জিএম) এসএম হাসনাত হাসানের সাথে কথা বলার জন্য তার মোবাইলে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিফ করে বলেন, আমি বর্তমানে ডিসি অফিসে মিটিং এ আছি। আপনার সাথে পরে কথা বলব।