সৈয়দপুরে দুই বখাটে কর্তৃক কলেজ ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ॥ সড়ক অবরোধ
https://www.obolokon24.com/2017/04/saidpur_22.html
তোফাজ্জল হোসেন লুতু,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
সৈয়দপুরে কলেজে পরীক্ষা দিতে যাওয়া পথে দুই বখাটে কর্তৃক এক কলেজ ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়েছে। এ ঘটনাটি ঘটে আজ (শনিবার) সকালে উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হাজারীহাট - চওড়াবাজার পাকা সড়কের বেলপুকুর নামক এলাকায়। এ ঘটনায় ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। তারা ওই দুই বখাটেকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকালের কলেজ পরীক্ষা বর্জন করে। পরে কলেজের বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে কলেজ সংলগ্ন হাজারীহাটের সকল দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। এ সময় তারা কলেজ সংলগ্ন হাজারীহাটে গাড়ির টায়ারে আগুল জা¡লিয়ে ও কলেজের বেঞ্চ দিয়ে খিয়ারজুম্মা - ঢেলাপীর সড়ক অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে করে ওই সড়ক সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
কলেজ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হাজারীহাট স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী (১৭)। কলেজের যাওয়ার আসার পথে তাকে বখাটে ফরহাদ প্রায় সময় উত্ত্যক্ত করে আসছিল। ঘটনার দিন গতকাল (শনিবার) ওই শিক্ষার্থী যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের পরীক্ষা দেয়ার জন্য সকাল সাড়ে ৯ টায় কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চওড়া বালাপাড়ার বাড়ি থেকে বের হয়। রিক্সাভ্যান না পেয়ে ঝির ঝির বৃষ্টির মধ্যে ছাতা নিয়ে কলেজের মানবিক বিভাগের ওই ছাত্রী পায়ে হেটে কলেজের উদ্দেশ্যে আসছিল। কলেজের একাদশ শ্রেণীর চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে তাদের। আনুমানিক ৯ টা ৫০মিনিটে সে হাজারীহাট স্কুল এন্ড কলেজের অদুরে উপজেলার হাজারীহাট - চওড়াবাজার সড়কের বেলপুকুর নামক স্থানে পৌঁছৈ। এ সময় ওই সড়কে লোকজনের কোন চলাচল ছিল না। আর এ সুযোগে উল্লিখিত এলাকার পাশের গ্রাম প্রজাপাড়া নয়াবাড়ির বাসিন্দা হাজারীহাট মোহাম্মাদীয়া আলিম মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী মো. ইলিয়াসের ছেলে মো. ফরহাদ (২৩) ও একই এলাকার মো. হাশেম আলীর ছেলে লেবু (২২) নামের দুই বখাটে তাঁর পথরোধ করে। বখাটেরা প্রথমে তাঁর হাতে থাকা ছাতা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এতে সে বাঁধা দেয়। পরে তাঁরা ওই কলেজ ছাত্রীর হাত ধরে টানাহেঁচড়া করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। এ সময় সে আর্তচিৎকার করতে থাকে। পরে ওই সড়ক দিয়ে একটি রিক্স্যাভান করে স্বস্ত্রীক যাচ্ছিলেন আবুল হোসেন। সে ও তাঁর স্ত্রী কলেজ ছাত্রীকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে বখাটেরা তাদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় বখাটেরা কলেজ ছাত্রীকে উদ্ধার চেষ্টাকারী স্বামী আবুল ও স্ত্রী লায়লা বেগমকে মারপিট করে। বখাটের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে গৃহবধূ লায়লা বেগম পরণে শাড়ি ছিঁড়ে যায় এবং সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুঁটে এলে বখাটেরা পালিয়ে যায়। এরপর খবর পেয়ে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে কলেজে নিয়ে আসা হয়।
এদিকে, কলেজ ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে কলেজের সকল শিক্ষার্থীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। তারা পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানার উপ-পরির্দশক (এসআই) জিয়াউর রহমান জিয়া সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে দ্রুত সেখানে (কলেজ) ছুঁটে যান। এ সময় বিক্ষুদ্ধ ছাত্রছাত্রীরা ওই বখাটেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেন। এ সময় পুলিশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জড়িত বখাটেদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন। কিন্তু তারপরও বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
হাজারীহাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. লুৎফর রহমান চৌধুরী জানান, ওই এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ বখাটের দল রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ কলেজের আসা যাওয়ার পথে শিক্ষার্থীদের ইভটিজিং করে আসছিল। এর আগে ওই বখাটের অভিভাবককে বিষয়টি অবগত করা হয়। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিক বার সালিশ বৈঠকও হয়। কিন্তু তারপরও বখাটেরা তদের পথ থেকে সরে আসেনি। বরঞ্চ তাদের বখাটেপনা আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
সৈয়দপুর থানার উপ-পরির্দশক (এসআই) মো. জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, এ ঘটনা পর পরই বখাটেদের গ্রেপ্তারের জন্য তাদের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। তবে তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। বখাটেরা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে তালা লাগিয়ে দ্রুত সটকে পড়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরিই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় কলেজ ছাত্রীর বড় ভাই মো. ওবায়দুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই দুই বখাটের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।