ঝাড়ুয়ারবিল-পদ্মপুকুর গণহত্যা দিবস আজ
https://www.obolokon24.com/2017/04/rangpur_17.html
মামুনুররশিদ মেরাজুল:
রংপুরের বদরগঞ্জে ঝাড়ুয়ারবিল-পদ্মপুকুর গণহত্যা দিবস আজ। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বদরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ঝাড়ুয়ারবিল ও পদ্মপুকুর এলাকায় রাজাকার ও পাক হানাদাররা প্রায় দেড় হাজার নিরীহ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঝাড়–য়ারবিল-পদ্মপুকুরে সংঘটিত বর্বরোচিত গণহত্যা আজও মানবতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতম অপরাধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
স্থানীয় প্রবীন ব্যক্তিবর্গ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনা মতে, সেদিন পার্বতীপুর থেকে সকালে একটি রেলগাড়ি এসে দাঁয়ায় স্থানীয় করতোয়া ব্রীজের কাছে। ট্রেন থেকে হানাদারের একটি দল করোতোয়া নদীর ধার দিয়ে অগ্রসর হয় বকশীগঞ্জের দিকে। এরপর ট্রেনটি এগিয়ে আসে রৈরাগীপাড়া রেল ঘুমটির কাছে। মুহূর্তে হানাদারদের অপর দল নেমে পড়ে চৌধুরী পাড়ার রাস্তায়। বদরগঞ্জ রেলস্টেশনের পশ্চিমে এক কিলোমিটার দূরে বৈরাগীপাড়া ঘুমটির কাছে থেকে দক্ষিণে বুজরুক হাজীপুর পর্যন্ত ঘিরে ফেলে রামনাথপুর এবং বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের অসংখ্য গ্রাম, পাড়া ও বসতি। নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগ।
অপরদিকে খোলাহাটি ষ্টেশনের পূর্বদিকে ট্যাক্সেরহাট ঘুমটির কাছে দক্ষিণে করতোয়া নদীর গা ঘেঁষে বকসীগঞ্জ পর্যন্ত অর্ধবৃত্তাকারে ঘেরাও করে তারা বুজরুক হাজিপুর, খালিশা হাজিপুর, ঘাটাবিল, রামকৃষ্ণপুর, বাঁশবাড়ী, বানিয়পাড়া, খোদ্দবাগবার, মাসানডোবাসহ পাশ্ববর্তী এলাকার গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয় এবং ব্যাপক গণহত্যা, লুন্ঠন ও নারী নির্যাতন চালায়। সেদিনের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নারকীয় এ গণহত্যার নেতৃত্ব দেয় আলবদর কমান্ডার এটিএম আজহারুল ইসলাম, পাশ্ববর্তী পার্বতীপুরের জল্লাদখ্যাত বাচ্চু খান ও কামরুজ্জামান। নারী-শিশুরাও রেহাই পায়নি তাদের বর্বরতা থেকে।
কিসামত ঘাটাবিল, কোনাপাড়া, মন্ডলপাড়া, গঁয়দাপাড়া, কুটিরপাড়া, খিয়ারপাড়া, খলিশা হাজিপুর, পাইকাড়পাড়া, তেলীপাড়া, বাজারপাড়া, বানিয়াপাড়া, কামারপাড়া, রামকৃষ্ণপুর, মাসানডোবা, সরকারপাড়া, খিজিরেরপাড়া, মধ্যপাড়া, বালাপাড়া, বিত্তিপাড়া, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বুজরুক, বাগবাড়, মন্ডলপাড়া, দোয়ানী হাজিপুর ও সর্দারপাড়া থেকে প্রায় দেড় হাজার নারী-পুরুষ-শিশুকে ধরে এনে ঝাড়–য়ার বিল ও পদ্মপুকুর এলাকায় এ নারকীয় হত্যাকান্ড চলে বিকেল পর্যন্ত । এসময় যারা বেঁচে যান তারা প্রাণভয়ে আশ্রয় নেন ঝাড়ুয়ার বিল ও পদ্মপুকুর পাড়ে। কিন্তু রাজাকাররা টের পেয়ে পাক হানাদারদের জানালে ওই এলাকাও ঘিরে ফেলা হয় এবং নিরীহ বাঙালীদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পাখির মত গুলি করে হত্যা করা হয়।
সেদিন যেখানে সেখানে মানুষের লাশ পড়ে ছিল। ঘরবাড়িগুলোতে আগুন জ্বলছিল। দু’চারজন বৃদ্ধ মানুষ ছাড়া এলাকায় কাউকে দেখা যায়নি। নরপশুদের তান্ডব লীলায় লাল হয়েছিল সেখানকার বিলের পানি। গুলি এবং বেয়োনেট চার্জ করে হত্যা করা হয় স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের। ঝাড়–য়ার বিল এবং পদ্মপুকুর পাড়ের উপরে ছিল অসংখ্য মানুষের লাশ।
সেদিনের ঘটনায় নিহতদের সকলের পরিচয় জানা না গেলেও বিভিন্ন সূত্র প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৩৬৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৫ জন শিক্ষক, ৩৫ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন শিশু, ৪জন গ্রাম পুলিশ, ৪ জন নরসুন্দর, ২জন রাজমিস্ত্রি, ১জন জ্যোতিষী, ১জন চিকিৎসক, ৪৯জন গৃহিণী এবং ২৫৯ জন কৃষক রয়েছেন।
যে ৫ শিক্ষকের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- মেনহাজুল ইসলাম, প্রাণকৃষ্ণ রায়, মাহতাব উদ্দিন, অনিল চন্দ্র রায় ও দিনেশ চন্দ্র রায়। ৫ শিশুর নাম- রোকসানা (১), আনোয়ারুল হক (৩), বাবু মহন্ত (৫), লুৎফা (৭) বরুণ(২), মোমেন (৮)। গ্রাম পুলিশ সদস্যরা হলেন- শমসের, টন্না মিয়া, উমাচরণ, মোফাজ্জল হোসেন। নর সুন্দররা হলেন- ললিত চন্দ্র শীল, হরিপদ শীল, হরলোচন শীল, ললিন শীল। রাজমিস্ত্রিরা হলেন- শাহাজ উদ্দিন ও আতিয়ার রহমান। নিহত জ্যোতিষীর নাম- গোরা জ্যোতিষী এবং চিকিৎসকের নাম হলো- শশী ডাক্তার।
সেই নৃশংস গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে বর্তমান সরকারের সময়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সহযোগিতায় ২০১৪ সালে নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতিস্তম্ভ। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে রামনাথপুর ইউনিয়নে ঝাড়ুয়ারবিল বধ্যভূমি ও পদ্মপুকুর এলাকায় নির্মিত হয় ২৬ ফুট উচ্চতার পাশাপাশি দুটি স্মৃতিস্তম্ভ। যার মাঝখানে রয়েছে লাল-সবুজের বৃত্ত। ৮০ ফুট প্রস্থ ও ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য এলাকা জুড়ে স্তম্ভটি এখন বদরগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবছরের আজকের এই দিনকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয় এবং সেদিনের ভয়াল স্মৃতিকে স্মরণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং আত্মার শান্তি কামনা করে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
রংপুরের বদরগঞ্জে ঝাড়ুয়ারবিল-পদ্মপুকুর গণহত্যা দিবস আজ। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বদরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ঝাড়ুয়ারবিল ও পদ্মপুকুর এলাকায় রাজাকার ও পাক হানাদাররা প্রায় দেড় হাজার নিরীহ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঝাড়–য়ারবিল-পদ্মপুকুরে সংঘটিত বর্বরোচিত গণহত্যা আজও মানবতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতম অপরাধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
স্থানীয় প্রবীন ব্যক্তিবর্গ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনা মতে, সেদিন পার্বতীপুর থেকে সকালে একটি রেলগাড়ি এসে দাঁয়ায় স্থানীয় করতোয়া ব্রীজের কাছে। ট্রেন থেকে হানাদারের একটি দল করোতোয়া নদীর ধার দিয়ে অগ্রসর হয় বকশীগঞ্জের দিকে। এরপর ট্রেনটি এগিয়ে আসে রৈরাগীপাড়া রেল ঘুমটির কাছে। মুহূর্তে হানাদারদের অপর দল নেমে পড়ে চৌধুরী পাড়ার রাস্তায়। বদরগঞ্জ রেলস্টেশনের পশ্চিমে এক কিলোমিটার দূরে বৈরাগীপাড়া ঘুমটির কাছে থেকে দক্ষিণে বুজরুক হাজীপুর পর্যন্ত ঘিরে ফেলে রামনাথপুর এবং বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের অসংখ্য গ্রাম, পাড়া ও বসতি। নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগ।
অপরদিকে খোলাহাটি ষ্টেশনের পূর্বদিকে ট্যাক্সেরহাট ঘুমটির কাছে দক্ষিণে করতোয়া নদীর গা ঘেঁষে বকসীগঞ্জ পর্যন্ত অর্ধবৃত্তাকারে ঘেরাও করে তারা বুজরুক হাজিপুর, খালিশা হাজিপুর, ঘাটাবিল, রামকৃষ্ণপুর, বাঁশবাড়ী, বানিয়পাড়া, খোদ্দবাগবার, মাসানডোবাসহ পাশ্ববর্তী এলাকার গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয় এবং ব্যাপক গণহত্যা, লুন্ঠন ও নারী নির্যাতন চালায়। সেদিনের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নারকীয় এ গণহত্যার নেতৃত্ব দেয় আলবদর কমান্ডার এটিএম আজহারুল ইসলাম, পাশ্ববর্তী পার্বতীপুরের জল্লাদখ্যাত বাচ্চু খান ও কামরুজ্জামান। নারী-শিশুরাও রেহাই পায়নি তাদের বর্বরতা থেকে।
কিসামত ঘাটাবিল, কোনাপাড়া, মন্ডলপাড়া, গঁয়দাপাড়া, কুটিরপাড়া, খিয়ারপাড়া, খলিশা হাজিপুর, পাইকাড়পাড়া, তেলীপাড়া, বাজারপাড়া, বানিয়াপাড়া, কামারপাড়া, রামকৃষ্ণপুর, মাসানডোবা, সরকারপাড়া, খিজিরেরপাড়া, মধ্যপাড়া, বালাপাড়া, বিত্তিপাড়া, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বুজরুক, বাগবাড়, মন্ডলপাড়া, দোয়ানী হাজিপুর ও সর্দারপাড়া থেকে প্রায় দেড় হাজার নারী-পুরুষ-শিশুকে ধরে এনে ঝাড়–য়ার বিল ও পদ্মপুকুর এলাকায় এ নারকীয় হত্যাকান্ড চলে বিকেল পর্যন্ত । এসময় যারা বেঁচে যান তারা প্রাণভয়ে আশ্রয় নেন ঝাড়ুয়ার বিল ও পদ্মপুকুর পাড়ে। কিন্তু রাজাকাররা টের পেয়ে পাক হানাদারদের জানালে ওই এলাকাও ঘিরে ফেলা হয় এবং নিরীহ বাঙালীদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পাখির মত গুলি করে হত্যা করা হয়।
সেদিন যেখানে সেখানে মানুষের লাশ পড়ে ছিল। ঘরবাড়িগুলোতে আগুন জ্বলছিল। দু’চারজন বৃদ্ধ মানুষ ছাড়া এলাকায় কাউকে দেখা যায়নি। নরপশুদের তান্ডব লীলায় লাল হয়েছিল সেখানকার বিলের পানি। গুলি এবং বেয়োনেট চার্জ করে হত্যা করা হয় স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের। ঝাড়–য়ার বিল এবং পদ্মপুকুর পাড়ের উপরে ছিল অসংখ্য মানুষের লাশ।
সেদিনের ঘটনায় নিহতদের সকলের পরিচয় জানা না গেলেও বিভিন্ন সূত্র প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৩৬৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৫ জন শিক্ষক, ৩৫ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন শিশু, ৪জন গ্রাম পুলিশ, ৪ জন নরসুন্দর, ২জন রাজমিস্ত্রি, ১জন জ্যোতিষী, ১জন চিকিৎসক, ৪৯জন গৃহিণী এবং ২৫৯ জন কৃষক রয়েছেন।
যে ৫ শিক্ষকের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- মেনহাজুল ইসলাম, প্রাণকৃষ্ণ রায়, মাহতাব উদ্দিন, অনিল চন্দ্র রায় ও দিনেশ চন্দ্র রায়। ৫ শিশুর নাম- রোকসানা (১), আনোয়ারুল হক (৩), বাবু মহন্ত (৫), লুৎফা (৭) বরুণ(২), মোমেন (৮)। গ্রাম পুলিশ সদস্যরা হলেন- শমসের, টন্না মিয়া, উমাচরণ, মোফাজ্জল হোসেন। নর সুন্দররা হলেন- ললিত চন্দ্র শীল, হরিপদ শীল, হরলোচন শীল, ললিন শীল। রাজমিস্ত্রিরা হলেন- শাহাজ উদ্দিন ও আতিয়ার রহমান। নিহত জ্যোতিষীর নাম- গোরা জ্যোতিষী এবং চিকিৎসকের নাম হলো- শশী ডাক্তার।
সেই নৃশংস গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে বর্তমান সরকারের সময়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সহযোগিতায় ২০১৪ সালে নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতিস্তম্ভ। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে রামনাথপুর ইউনিয়নে ঝাড়ুয়ারবিল বধ্যভূমি ও পদ্মপুকুর এলাকায় নির্মিত হয় ২৬ ফুট উচ্চতার পাশাপাশি দুটি স্মৃতিস্তম্ভ। যার মাঝখানে রয়েছে লাল-সবুজের বৃত্ত। ৮০ ফুট প্রস্থ ও ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য এলাকা জুড়ে স্তম্ভটি এখন বদরগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবছরের আজকের এই দিনকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয় এবং সেদিনের ভয়াল স্মৃতিকে স্মরণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং আত্মার শান্তি কামনা করে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।