রংপুরের পানবাজারে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত স্কুল ছাত্র প্রান্ত দাসকে বাচাঁনো গেলনা
https://www.obolokon24.com/2017/04/rangpur_13.html
হাবিবুর রহমান সেলিম, পাগলাপীর থেকেঃ
রংপুর সদর উপজেলার পানবাজারে ঐতিহ্যবাহী হরিদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্র সড়ক দূর্ঘটনার আহত প্রান্ত দাসকে আর প্রানে বাচাঁনো গেলো না। টানা চার দিন চিকিৎসার পর অবশেষে আজ ১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ভোর ২ টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত্যু বলে ঘোষনা করে নিহতের লাশ তার পরিবার বর্গের কাছে হস্তান্তর করেছেন। মেধাবী ছাত্র প্রান্ত দাসের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্কুল, মাঝি পাড়া গ্রাম সহ পুরো ইউনিয়ন জুড়ে বিরাজ করছে শোকের মাথম। শেষ বারের মত স্কুল ছাত্র প্রান্ত দাসকে এক নজর দেখার জন্য তার সহপাঠি বন্ধুবান্ধব স্কুলের সকল শ্রেনীর শিক্ষার্থী শিক্ষক এবং আওয়ামীলীগ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংঠনের নেতৃবৃন্দরা ভিড় জমাচ্ছে হরিদেবপুর ইউনিয়নের মাঝি পাড়া গ্রামের স্কুল ছাত্র প্রান্ত দাসের বাড়িতে। স্কুলের সহপাঠি বন্ধুবান্ধব সংবাদকর্মী সহ আগত নারী পুরুষের চোখের জ্বলে ভাড়ি হয়ে উঠছে স্কুল ছাত্র প্রান্ত দাসের মাঝি পাড়া গ্রাম। হত দরিদ্র পিতা জগদীশ চন্দ্র দাসের বড় ইচ্ছা ছিল পুত্র প্রান্ত দাস ভবিষ্যতে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ছোট ভাই জয় দাসকে সুশিক্ষায় গড়ে তুলে দুখিনী মা কল্পনা দাসের মুখে হাসি ফুটিয়ে আলোকিত করে তুলবে অন্ধকার শুন্য দারিদ্রের নি¤œজিত পল্লী মাঝি পড়া গ্রামকে। কিন্তু সেই সব সপ্ন ভেঙ্গে দিল মহেন্দ্র নামে ইট বহনকারী ট্রাক্টার গাড়ী প্রান কেড়ে নিল মেধাবী ছাত্র প্রান্ত দাসের। জানাগেছে গত ৯ এপ্রিল রবিবার হরিদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্র প্রান্ত দাস বাড়ি থেকে স্কুলে আসার পথে স্কুল সংলগ্ন আম বাগান নামক স্থানে বদরগঞ্জ হতে একটি ইট বহনকারী মাহিন্দ্র ট্রাক্টর পাগলাপীর যাওয়ার সময় পিছন দিক থেকে ধাক্কা মারে। এতে স্কুল ছাত্র প্রান্ত দাসের মাথায় প্রচন্ড আঘাত লেগে পাকা সড়কে লুটিয়ে পড়ে তার দেহ। মুহুর্তের মধ্যে ছাত্র প্রান্ত দাসের দূর্ঘটনার সংবাদ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় রায় সহ সকল শিক্ষকের মাঝে পৌছিলে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কেহই। স্কুল ছাত্র প্রান্ত দাসের মাথা থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরন হতে থাকলে স্থানীয় জনগন ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা আশঙ্খা জনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে টানা চারদিন চিকিৎসার পর গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ২ টায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আহত স্কুল ছাত্র প্রান্ত দাসকে মৃত্যু বলে ঘোষনা করেন। এদিকে দূর্ঘটনার পর ঘাতক মাহেন্দ্র ট্রাক্টরটি পালানোর চেষ্টা কালে বিক্ষিপ্ত শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগন চালক সহ গাড়ীটিকে আটক করে চালককে প্রধান শিক্ষকের হেফাজতে অফিস ঘরে তালা মেরে রেখে দেওয়া হয় এবং ইট সহ গাড়িটিকে ইউপি চেয়ারম্যানের হেফাজতে রাখা হয়। কিন্তু ঘটনার দিনে পরক্ষনে প্রধান শিক্ষক মোট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চালককে ছেড়ে দেয়। ফলে এ নিয়ে ঘটনার পরদিন ১০ এপ্রিল সোমবার স্কুলের শিক্ষার্থী ও এলাকা বাসীরা প্রধান শিক্ষকের অবসারন দাবী জানিয়ে মানব বন্ধন বিক্ষোভ কর্মসুচি পালনের পর প্রধান শিক্ষকের কক্ষ ভাংচুর করেন। এ ঘটনায় পানবাজার এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করলে রংপুর কোতয়ালী থানার পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার স্কুল ছাত্র প্রান্ত দাসের বাড়িতে গেলে কথা হয় হরিদেবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি অত্র স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য মোঃ একরামুল হকের সঙ্গে। মেধাবী ছাত্র প্রান্ত দাসের অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনায় তিনি দুঃখ ও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহত স্কুল ছাত্রের দরিদ্র পরিবারে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য স্কুল কতৃপক্ষ ও আটক মহেন্দ্র ট্রাক্টরের মালিকের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন। অপরদিকে জানাযায় গতকাল বিকাল ৩ টায় স্থানীয় মহাস্বসানে স্কুল ছাত্র প্রান্ত দাসের অগ্নিদাহ সম্পন্ন হয়েছে।