কুড়িগ্রামে দিন-রাত ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকছে সর্বোচ্চ দুই ঘন্টা।বিপাকে কৃষকরা

আশিকুর রহমান,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
দিন-রাত ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকছে সর্বোচ্চ দুই ঘন্টা। একবার এসে বিদ্যুৎ স্থায়ী থাকছে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট। কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (কুড়িলাপবিস) নাগেশ্বরী জোনাল অফিসের আওতায় নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ি এ তিন উপজেলা এবং কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় তিনটি ইউনিয়ন এলাকার এ অবস্থা। এতে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। বোরো মৌসুমের শেষ সময়ে এসে সেচ অভাবে ফসল নিয়ে ঘুম হারাম কৃষকের। কৃষকদের তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে আকাশের দিকে। মাঝে-মধ্যে বৃষ্টি আসলেও তা ফসলের পানির তুলনায় খুব কম। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে সমস্যার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জোনাল অফিস জানায়, ১৯৯৭ সালের ৭ জুলাই এ এলাকায় বিদ্যুৎ সেবা চালু করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। নাগেশ্বরী থানা এলাকা ও ভূরুঙ্গামারীর জয়মনিরহাটে দু’টি উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছে। ১৯৮৩-৮৪ সালে এ এলাকায় বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) বিদ্যুৎ সার্ভিস শুরু করে। এমনিতে পুরোনো খুটি ও তার ব্যবহার হচ্ছে। ফলে সামান্য বাতাস এলেই সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিদ্যুৎ থাকে না। এর মধ্যে গত দুই সপ্তাহ থেকে এ জোনাল অফিসের আওতায় এলাকাগুলোতে দিন-রাতে সর্বোচ্চ দুই ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছেনা। শুধু নাগেশ্বরী উপজেলা শহরে একটু বেশি থাকলেও বাকি দুই উপজেলাসহ গ্রাম এলাকাগুলোর একই অবস্থা। সূত্রমতে, এ অফিসের আওতায় বাণিজ্যিক, আবাসিক, রাইস মিল, দাতব্য প্রতিষ্ঠানসহ গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪২ হাজার। গভীর ও অগভীর নলকূপে রয়েছে সংযোগ প্রায় পাঁচ হাজার। গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৪০ লাখ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে গ্রাহক। বোরো মৌসুমে চাহিদা বেশি থাকে। চলতি বোরো মৌসুমে গত দুই সপ্তাহের বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিশেষ করে কৃষকদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। মৌসুম প্রায় শেষ। ফসলের শীষ আসার সময়। এসময় পানি না থাকলে ধানক্ষেতে শীষ আসবে না। অনেক ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। পৌর এলাকার পায়ড়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক নিতাই চন্দ্র বলেন, ১৫ বিঘা জমিতে বোরো লাগিয়েছি। এখন শীষ আসছে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় পানি দিতে পারছি না। ক্ষেতের কি হবে তা বলা যাচ্ছেনা। বল্লভপুর গ্রামের কৃষক শাহ আলম, বামনডাঙ্গার কৃষক আব্দুল গণি বলেন, ঋণ-ধার-দেনা করে স্কিম করছি। এখন বিদ্যুতের জন্য আবাদে মার খাব মনে হয়। সেচ পাম্প মালিকরাও পড়েছে বিপাকে। চাহিদা মত পানি দিতে না পারায় কৃষকদের সাথে বাক-বিতণ্ডা হচ্ছে। সেচ পাম্পের চালক রফিকুল ইসলাম জানান, গ্রাহকরা টাকা পয়সা খরচ করে আবাদ করেছে। এ মৌসুমের আবাদ পানির উপর নির্ভরশীল। এ সময়টা ক্ষেতে পানির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ঠিকমতো পানি দিতে না পারলে শীষ বের হবে না। সবার চোখে ঘুম নেই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, বিদ্যুতের বিষয় নিয়ে ডিজিএম (জেনারেল ম্যানেজার) এর সাথে কথা বলেছি। তিনি উৎপাদন কেন্দ্রের সমস্যার কথা বলেছেন। তবে দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। সমাধান হলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ধানে শীষ আসবে না। তবে মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে এটাতে কিছুটা ধানের উপকার হবে। এদিকে বিদ্যুৎ নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো লোকশানে ভুগছে। নাগেশ্বরী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান জিন্নু বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যবসায়ীরা লোকশানে পড়ছে। সাধারণ মানুষও সেবা না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। মাঝে-মধ্যে এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ থেকে পরিত্রাণ দরকার। নাগেশ্বরী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. আসাদুজ্জামান জানান, দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের একটা সমস্যা ছিল। সে কারণে এ বিদ্যুৎ ঠিকমত পাওয়া যাযনি। তবে ইতোমধ্যে ত্রুটি সারানো হয়েছে। এখন নিয়মিত চাহিদামত না পাওয়া গেলেও আগের মত বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।

পুরোনো সংবাদ

জনদূর্ভোগ 7459990889535906458

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item