পীরগঞ্জে চাপুনদহ বিলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত সৃজিত সমিতি কর্তৃক মাছ ধরার মহোৎসব

মামুনুররশিদ মেরাজুল -

রংপুরের পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের চাপুনদহ বিলে বিত্তবানদের সৃজিত সমিতি কর্তৃক সর্বসাধারণের মাছ আহরণে বাঁধা দেয়ার জের ধরে কয়েক দফা সংঘর্ষের পর সমঝোতা করে এখন উভয়পক্ষ মাছ শিকারের মহোৎসবে মেতে উঠেছেন। উল্লেখ্য, বিত্তবানদের সমন্বয়ে গঠিত মৎস্যজীবি সমিতি কর্তৃক ওই বিলে সর্বসাধারণের মাছ আহরণে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারী করায় আশ পাশের কয়েকটি গ্রামে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। এ নিয়ে কয়েক দফা সংঘর্ষও হয়। উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হবার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের হলেও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহিনের ব্যক্তি সহযোগিতায় বিষয়টি সমঝোতা হয়। এ সমঝোতার অংশ হিসেবে আজ এক পক্ষ পরদিন আর অপর পক্ষ মাছ শিকারের সিদ্ধান্ত নেয়। আহরিত মাছ বিক্রিলব্ধ টাকা সমহারে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়া হয়। ফলে ওই এলাকার বিবাদমান দু’পক্ষ পর্যাপ্ত লাভবান হলেও সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উল্লেখ্য উপজেলার চতরা ইউনিয়নের ধর্মদাস মৌজায় ৬৬ একর জলাশয় বিস্তৃত চাপুনদহ বিল। জলাশয়টি মৎস্য অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হওয়ায় সরকারি বিধি মোতাবেক বিগত ২০০১ইং সালের ২৪ জুন হতে ১১ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত ধর্মদাস মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি এর অনুকুলে নির্দিষ্ট শর্তে সমিতির সভাপতি মো: আতোয়ার রহমানসহ অন্যান্য সদস্যদের নামে উক্ত বিল (জলাশয়) রক্ষনাবেক্ষন প্রতি বছর সরকারের রাজস্ব খাতে ১ লাখ টাকা জমাদানের শর্তে ১০ বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছিল। ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবার পর খাস আদায়ের ভিত্তিতে শুধু মাত্র মৎস্যজীবিদের নিলাম ডাকে অংশ গ্রহণের শর্ত আরোপ করে ২০১১ ইং সালের ২৮ ডিসেম্বর উপজেলা ভূমি অফিসে নিলাম ডাকের পদক্ষেপ নেয়া হলে ডাকে সর্বোচ্চ করদাতা ধর্মদাস মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সদস্য মোফাজ্জল হোসেনকে ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ও মাসের পুনরায় লীজ দেয়া হয়। এরপর রংপুর জেলা প্রশাসন ২০১২ সালে ১৭ জানুয়ারী ৩ বছরের জন্য বিলটি নিলাম ডাকের পদক্ষেপ নেয়ায় উক্ত সমিতির সভাপতি মতিয়ার রহমান ওই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ওই বছরের ৯ জানুয়ারী উচ্চ আদালতে মামলা করেন। বিজ্ঞ আদালত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ওই বিল ইজারার বন্দোবস্তের উপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দেয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত হতে ওই বিল যে অবস্থায় আছে ওই অবস্থায় থাকার আদেশ দেয়া হয়। এরপর ৫ম বারের মত ওই বিল অবস্থায় থাকার আদেশ দেয়া হয়। এরপর ৫ম বারের মত ওই বিল লীজের সময়সীমা বর্ধিত করা হয়। এরপর বিলটি আর লীজ দেয়া হয়নি। ফলে এটি সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। এ অবস্থায় বিলে মৎস্য চাষ নিয়ে গ্রামবাসীদের মাঝে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। একটি পক্ষ অভিযোগ করেছে, ধর্মদাস মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লি: এর সদস্যরা অধিকাংশই বিত্তবান। প্রতি বছর এরা ওই বিল থেকে ২৫/৩০ লাখ মাছ বিক্রির টাকা ভাগাভাগি করেন। অথচ লীজ না দেয়ায় গত কয়েক বছর ধরে সরকারের রাজস্ব খাতে কোন প্রকার টাকা জমা দেয়া হচ্ছে না। ফলে প্রতি বছর সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এলাকার কেউ মাছ আহরণের জন্য বিলে যাওয়া মাত্রই সমিতির লোকজন তাকে মারপিট ও আটকপূর্বক নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ জরিমানা করে। যে কারণে এলাকায় আশ পাশের গ্রাম গুলোতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। বিলে সমিতির কোন কর্তৃত্ব না থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনক কারণে সাধারণ মানুষের অভিযোগ কর্ণপাত না করে উল্টো সমিতির পক্ষ নেয়ায় সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ভাবে অযথা হয়রানি করা হচ্ছিল। এ ব্যাপারে চতরা ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহিন জানান বিষয়টি সমঝোতা হওয়ার পর কোন গ্র“প আমাকে না জানিয়ে মাছ ধরায় লিপ্ত রয়েছেন। এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ রানা এসব তথ্য অবগত হওয়া সত্ত্বেও চোখকান বন্ধ করে রেখেছেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন এ বিল জলমহালের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। কারণ এ গুলো জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে মনিটরিং করা হয়।