নীলফামারীতে ভেজাল সার কারখানার সন্ধ্যান॥ গ্রেফতার তিন
https://www.obolokon24.com/2016/11/nilphamari_30.html
নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের পাটকামুরী দেওয়ানী পাড়ায় এই ভেজাল কারখানা গড়ে তোলা হয়। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।
তবে নীলফামারীতে ভেজাল সারের কারখানা স্থাপন ও ভেজাল সারের ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ মতে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ভেজাল সার প্রতিরোধে কোন ভুমিকা রাখেন না। এমনকি ভেজাল সারকারখানা মালিক গুলোর সঙ্গে তার গোপন আতাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নীলফামারী থানার পুলিশ সুত্র মতে, মঙ্গলবার বেলা ১২ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা শহরের গাছবাড়ি এলাকা থেকে ডোমার যাওয়ার পথে প্রায় দুই মেট্রিক টন ভেজাল সার সহ একটি পিকআপ ( নম্বর ঢাকা মেট্রো ন- ১৪-৭৬৯৫) আটক করে থানায় নেয়া হয়। পরে ওই চালকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দুপুর দুইটার দিকে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ফখরুল হাসানের নেতৃত্বে জেলা সদরের কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের পাটকামুরী গ্রামে অভিযান চালিয়ে ওই ভেজাল সারের কারখানা আবিস্কার করা হয়।
এসময় ওই কারখানার মালিক একই গ্রামের মকছুদার রহমানের ছেলে মো. মিলন মিয়া (২২) ও মিলনের ছোট ভাই লিমন ইসলাম (১৮) এবং পিকআপের চালক মো. হাসানকে (২০) গ্রেফতার করে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানায় প্রায় আটমাস যাবত সেখানে সার তৈরী করে বাজারজাত করে আসছিলেন মিলন মিয়া। তবে ওই কারখানার ভেতর এলাকার মানুষের প্রবেশাধিকার না থাকায় তারা জানতে পারতেন না সেখানে কি হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বললে, ভেজাল সার তৈরীর কথা অস্বীকার করে মিলন মিয়া বলেন, আমি এলাকার কয়েকটি ভেজাল সারের কারখানার বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা তাদের ভেজাল সারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি তার কাছে সার কারখানা স্থাপন সহ সারের ব্যবসা করতে বৈধ লাইন্সের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আমাকে তা দেয়া হয়নি। এ কারনে আমিও অন্যান্যদের মতো সারের ব্যবসা শুরু করি। মিলন মিয়া তার কারখানায় উৎপাদিত সার গুলোতে ভেজাল বলে অস্বীকার করে বলেন বৈধভাবে ব্যবসার জন্য ঢাকা খামারবাড়িতে লাইন্সের আবেদন করেছি। তার কাগজপত্র সে তুলে ধরে।
এ বিষয়ে কথা বললে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কেরামত আলী বলেন, ওই কারখানাটি বৈধ না। সেখানে তারা ডলোচুন, বালি, মাটি ও সিমেণ্টের গুড়া দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ভেজাল সার তৈরী করে বিভিন্ন ব্রা-ের প্যাকেটে ভরে বাজারে বিক্রি করছেন। এর আগেও তাকে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু আবারও সে একইভাবে তার ভেজাল সারের ব্যবসা চালাচ্ছে। এতে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছেন। মিলন মিয়ার অভিযোগ সর্ম্পকে তার কাছে জানতে চাইলে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কেরামত আলী বিষয়টি পাশকাটিয়ে যান।
এ বিষয়ে কথা বললে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ফখরুল হাসান বলেন, অভিযানে ভেজাল সার তৈরীর যন্ত্রপাতি, ভেজাল সার ও সার তৈরীর কাজে ব্যবহৃত ডলোচুন, সিমেণ্টের গুড়া, বালি মাটিসহ মালামাল জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ নিয়মিত মামলা করবেন।
নীলফামারী সদর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাদি হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রায় দুই মেট্রিক টন ভেজাল সারসহ পিকআপটি আটক সহ কারখানার মালামাল জব্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে
কারখানার মালিক মো. মিলন মিয়া (২২) ও মিলনের ছোট ভাই লিমন ইসলাম (১৮) এবং পিকআপের চালক মো. হাসানকে (২০) গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ১৪ আগষ্ট রাতে অভিযান চালিয়ে ওই কারখানায় মজুদ থাকা ২০০ মণ ভেজাল সার ধ্বংস করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেই সাথে তৎকালিন ওই ভেজাল সার কারখানার মালিক জীবন সরকারকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। পরবর্তিতে জীবন সরকার ওই সার কারখানার মালিকানা বিক্রি করে দেয় বলে জানা যায়।
সুত্র মতে উক্ত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যোবায়ের হোসেন। সে সময় কারখানাটিতে চীনা পাউডারের সঙ্গে মাটি, বালু, পাথরকুচি, ও রং মিশিয়ে ১০ প্রকারের নকল সার উৎপাদন করা হতো।
এদিকে একাধিক অভিযোগে জানা গেছে নীলফামারী জেলা সদর,সৈয়দপুর,কিশোরীগঞ্জ ও ডিমলা উপজেলায় ভেজাল সারের ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। এসব স্থানে একাধিক ভেজাল সার কারখানা গড়ে তুলেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
প্রকৃত সার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ স্থানীয় কৃষি বিভাগের খামখেয়ালীপনার কারনে ভেজাল সার কারবারিরা লায় পেয়ে যাচ্ছে। তারা জেলা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে জেলার সকল ভেজাল সার কারখানায় অভিযান চালানোর দাবি করে।