ডোমারে অনুমোদনহীন ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যু ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু

আবু ফাত্তাহ্ কামাল (পাখি),স্টাফ রিপোর্টার ঃ
নীলফামারীর ডোমারে অনুমোদনহীন পালর্স হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নামের একটি বেসরকারী ক্লিনিকে সুরমা বেগম (৩৫) নামের এক প্রসুতির মৃত্যুর ঘটনায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। নীলফামারী সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সিরাজুল ইসলাম কে আহবায়ক করে তিন সদস্যের এই তদন্ত টিম আজ উক্ত  অনুমোদনহীন পালর্স হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার গিয়ে তদন্ত করেছে। তদন্তটিমের অপর দুই সদস্য হলেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যার অফিসার মনিরুজ্জামান ও ডোমার উপজেলা  স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ হিরম্ব কুমার রায়। সুত্রমতে সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুর রশিদ গত ১৩ নভেম্বর উক্ত তদন্তটিম গঠন করে দেন।
এ ব্যাপারে তদন্ত টিমের আহবায়ক সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন তদন্ত শুরু করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত ডোমারের পালর্স হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে গিয়ে তাদের কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি উক্ত ক্লিনিকে সুরমা বেগম (৩৫) নামের যে প্রসুতির মৃত্যু হয়েছে সেই প্রসুতির স্বামী সহ অন্যান্যদের সাক্ষ্য গ্রহন করা হবে।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক এক প্রশ্নের জবাবে জানান তদন্তে প্রাথমিকভাবে যে কাগজপত্র পাওয়া গেছে তাতে ডোমারের পালর্স হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার পরিচালনার জন্য  এখনও সরকারীভাবে কোন বৈধ অনুমোদন তারা পাননি। তবে তারা আবেদন করেছে অনুমোদনের জন্য।
উল্লেখ যে গত ১২ নভেম্বর অবলোকন২৪ ডট কমে ডোমারে অনুমোদনহীন ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যু॥ ধাপাচাপা দিল প্রভাবশালীরা শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদটি নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুর রশিদের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি উক্ত ঘটনায় তদন্ত টিমটি গঠন করে দেন।
প্রসঙ্গতঃ  ১২ নভেম্বর অবলোকন২৪ ডট কমে প্রকাশিত সংবাদটি পুনরায় নি¤েœ উল্লেখ করা হলে।
 নীলফামারীর ডোমারে অনুমোদনহীন পালর্স হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নামের একটি বেসরকারী চিকিৎসা কেন্দ্র  সুরমা বেগম (৩৫) নামের এক প্রসুতির সন্তান প্রসবে সিজার করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে  প্রভাবশালী কিছু ব্যাক্তি নিহত প্রসুতির পরিবারকে ভয়ভিতি দেখিয়ে লাশ দাফনে বাধ্য করেছে। ফলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে ডোমারের অনুমতিহীন ক্লিনিকটি দেদারছে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার সচেতন মহল ঘটনাটি স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ডোমারের উক্ত ক্লিনিককি বন্ধ করে দেয়ার দাবি তুলেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা যায়, নীলফামারী জেলার ডোমার বাসষ্টান্ড সংলগ্ন অনুমোদনহীন পালর্স হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নামের একটি বেসরকারী চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলেন পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালের সাবেক পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ একরামুল হক। সরকারী চাকুরী থাকা অবস্থায় তিনি এটি গড়ে তোলেন প্রায় দেড় বছর আগে। গত এক বছর হয় তিনি চাকুরী হতে অবসরগ্রহন করেন। ক্লিনিকটি পরিচালনার জন্য সরকারীভাবে অনুমতির প্রয়োজন থাকলেও তিনি এখনও সেটি পাননি। ফলে অবৈধভাবে এটি পরিচালনা করা হচ্ছে কিছু প্রভাবশালীর ছত্র ছায়ায়।  খোঁজ নিয়ে জানা যায় নীলফামারীর ডোমার উপজেলার উত্তর ভোগডাবুড়ী মুক্তিরহাট গ্রামের নালু ইসলামের স্ত্রী সুরমা বেগম।
স্বামী নালু ইসলাম জানায়, আমি খুব গরীব মানুষ দিন আনি দিন খাই। গত মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) বিকালে আমার স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে তাকে ডোমারের পার্লস ক্লিনিকে নিয়ে আসি। ক্লিনিকের ম্যানেজার আগে ভর্তি করাতে বলেন- না হলে ডাক্তার দেখবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। স্ত্রীর শারিরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তিনি স্ত্রীকে ক্লিনিকে ভর্তি করে দেন। ভর্তির পর একজন নার্স এসে রোগীকে দেখে এবং বলে যে ডাক্তার বাহিরে আছে। আমি ডাক্তারের সাথে ফোনে কথা বলেছি আমাকে ওষুধ ও ইনজেকশন দিতে বলছে। এরপর ওষুধ ও ইনজেকশন দেওয়ার পরে ধীরে ধীরে স্ত্রী সুরমার পেটের ব্যাথা কমে যায়। এভাবে অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও আর প্রসবের ব্যথা উঠে না।
 তখন ডাক্তার কে বললে ডাক্তার বলে যে তোমার স্ত্রীর পেটের বাচ্চা পানি ছাড়া পরে আছে তাই এখন সিজার করতে হবে। আমি নরমালে প্রসবের কথা বলি । কিন্তুু ডাক্তার বলে তা সম্ভব নয়। পরদিন বুধবার পর্যন্ত সুরমার পেটে ব্যথা না থাকায় বাধ্য হয়ে সিজার করতে বলি। পরদিন সকাল ১০টায় আমার স্ত্রীকে অপারেশন রুমে নিয়ে যায় এবং ৪০ মিনিট পরে জানায়, আমার স্ত্রীর কন্যা সন্তান হয়েছে। কিছুক্ষন পরেই একটি মেয়ে শিশু আমার কাছে এনে দেয়। কিন্তুু এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে গেলেও আমার স্ত্রীর সাথে আমাকে দেখা করতে দেয়া হয় না। বার বার স্ত্রীর অবস্থা জানতে চাইলে বলে যে এখনও জ্ঞান ফেরেনি। ঘটনাটি আমার সন্দেহ হওয়ায় পার্লস হসপিটাল এক ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করি অনেক হাতে পায়ে ধরার পর বলে যে তোমার স্ত্রী সুরমা মারা গেছে। একথা শোনার পর আমি মাথা ঘুরে পরে যাই।
আমি সুস্থ হওয়ার পর ক্লিনিকের সবাই বলে, কান্নাকাটি করে লাভ নেই, যা হওয়ার হয়ে গেছে, আমরা তো আর ইচ্ছে করে মারিনি। যে যাওয়ার চলে গেছে। এখন তোমাকে কোন খরচ দিতে হবে না আমরাইতোমার সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমি অসহায় মানুষ কার কাছে যাব তাই আর কিছু বলিনি। এরপর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদের খরচেই গত বৃহ¯পতিবার( ১০ নভেম্বর) দুপুরে  স্ত্রী সুরমার লাশ ক্লিনিকের পিছনের দরজা দিয়ে বের করে তাদের বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও এলাকার কতিপয় সুযোগ সন্ধানী প্রভাবশালী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি রফাদফা করে দেয়। ফলে ওই অসহায় ব্যাক্তি বাধ্য হয়ে  বৃহ¯পতিবার (১০ নভেম্বর) রাতে গ্রামে স্ত্রীর লাশ দাফন করতে বাধ্য হয়।
এ ব্যাপারে পার্লস হসপিটাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী ডাঃ একরামুল হক সাংবাদিকদের জানান, সুরমা বেগম সিজার করার সময় হার্ট ষ্টোকে মারা যায়।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 1896725893703744759

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item