সৈয়দপুরে অসময়ে পরীক্ষামূলক চারা রোপনের মাধ্যমে ভূট্টার আবাদ
https://www.obolokon24.com/2016/10/saidpur_28.html
তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুরে অসময়ে ইনব্রিড সুইট কর্ণ জাতের ভূট্টার পরীক্ষামূলক আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার
১ নম্বর কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামে সজীব সীড্স নামে একটি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ওই প্রদর্শনী প্লট করা হয়।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, আমাদের দেশে মূলতঃ দুই মৌসুমেই ভূট্টা আবাদ করা হয়। রবি মৌসুমে বাংলা সনের মধ্য কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ভূট্টার বীজ বপন করা যায়। আর ১ কার্তিক থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ভূট্টার বীজ বপন করা যায় খরিপ মৌসুমে। সচরাচর কৃষকরা জমিতে সরাসরি ভূট্টার বীজ বপন করে থাকেন। মূলতঃ চারা বপনের ৯০ দিন থেকে ১২০ পর্যন্ত সময়ে ভুট্টা ঘরে তোলা যায়। কিন্তু উপজেলার অসুরখাই গ্রামের সজীব সীড্স নামের প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী মো. আহসান-উল-হক বাবু জানান অসময়ে ভূট্টার চারা জমিতে রোপন করে ভূট্টা চাষ করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি গত জুন মাসে বীজতলায় প্রথমে ভূট্টার বীজ বপন করেন। পরবর্তীতে বীজতলা থেকে ১২ দিনের চারা তুলে তা রোপন করেন জমিতে। এতে বিঘা প্রতি এক কেজি ভূট্টার বীজ ব্যবহার করা হয়েছে। বর্ষার পানিতে জমি কাঁদা করে তিন ফুট প্রশস্ত বেড তৈরি করা হয়। পরে জমিতে তৈরিকৃত সেই বেডে সারি সারি ভূট্টার চারা লাগানো হয়। একটি চারা থেকে অপর একটি চারার দূরত্ব দেড় ফুট এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব এক ফিট করে। ওই কৃষক তাঁর ১০ শতাংশ জমিতে ১২ দিন বয়সের ১ হাজার ৫০টি ভূট্টার চারা রোপন করেন। যদিও প্রচলিত ভূট্টা গাছে একটি করে ভূট্টার মোচা ধরে। কিন্তু কৃষক আহসান উল- হকের লাগানো গাছে সর্বনি¤œ ২টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি ভূট্টার মোচা পাওয়া গেছে। যদিও সব মোচাতে ভুট্টার দানা মেলেনি। কিন্তু তারপর তিনি আশাবাদী যে আগামীতে সব মোচায় যেন দানা পাওয়া যায় সে প্রচেষ্টা থাকবে তাঁর। তিনি আশানুরূপ ফলন পাওয়ার কথা জানান।
সজীব সীড্স নামের প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী মো. আহসান-উল-হক বাবু জানান, ইন্টারনেটে কৃষি বিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে “এ্যাডোবটিং রেইজড বেড ফ্যারো এন্ড টিঈন প্লান্টেশন টেকনিক” পদ্ধতি খুঁজে পান তিনি। সে টি ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি সে অনুযায়ী ইনব্রীড জাতের ভুট্টা চাষাবাদের মনস্থির করেন। যেই চিন্তা, সেই কাজ। তিনি বীজ সংগ্রহে নেমে পড়েন। ঢাকার গীতাঞ্জলী অর্গানিক নামের প্রতিষ্ঠান থেকে বীজ সংগ্রহ করেন বলে তিনি জানান।
এদিকে,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান গত ২৫ আগষ্ট সজীব সীড্স’র ভূট্টার পরীক্ষামূলক আবাদের প্রদর্শনী প্লট পরিদর্শন করেছেন। তাঁর পরিদর্শনকালে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কৃষিবিদ শাহ্ আলম, রংপুরের তাজহাট কৃষি ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান, নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ মো. আফতার হোসেন, সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোছা. হোমায়রা মন্ডল হিমু, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব দাস ও আসাদুজ্জামান হাসু প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
কৃষক আহসান-উল-হক বলেন,নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অসময়ে ভূট্টা চাষ করে আমি আশাতীত ফলন পেয়েছি। আগামীতে আরো বড় পরিসরে অসময়ে আমি ভূট্টা আবাদ করতে চাই।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ইউএও) মোছা, হোমায়রা মন্ডল হিমু জানান, আহসান-উল-হকের উদ্যোগটি ভাল। তবে তাতে কি পরিমাণ সফলতা আসে সেটিই এখন দেখার বিষয়। আর একজন কৃষকের পরীক্ষামূলক আবাদের মধ্যদিয়ে এর সফলতা এসেছে এটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না। প্রয়োজনে আরও কৃষকদের মধ্যে অসময়ে পরীক্ষামূলক এ ধরনের ভূট্টা আবাদ করতে হবে।