ডোমারে হতদরিদ্রদের চাল বিতরনে অনিয়মের অভিযোগ
https://www.obolokon24.com/2016/10/domar_44.html
ডোমার ঃ. ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের শালমারা গ্রামের ১০ টাকা কেজি দরে চালের ১২২৯ নম্বর ক্রমিকের বনবালী রায়ের বাড়ি। |
স্টাফ রিপোর্টারঃ
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডের শালমারা গ্রাম। ওই ওয়ার্ডে ১০টাকা কেজি দরে হতদরিদ্রদের খাদ্য বান্ধব কমৃসুচীর চাল বিতরণে রয়েছে ১১৫ কার্ডের বিপরীতে রয়েছে ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ।
পাকা বাড়ি, ১৫ থেকে ২০ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমি, রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমন ব্যক্তি ওই চালের সুবিধা পাওয়ার অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। ওই সুবিধা পাওয়ার অযোগ্য এবং ক্ষমতাশীল দলের এমন সচ্ছল নেতাদের নামেও কার্ড রয়েছে বলে অভিযোগকারীরা জানায়।
সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে ইউনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডের শালমারা গ্রামে নরেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে বনমালী রায়ের (৩৫) পাকা সড়কের ধারে তার সুনসান আধাপাকা বাড়ি। বাড়ির বাইরে দাঁড় করানো ছিল তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেল। ১০ টাকা কেজি দরে চালের তালিকায় সেই বনমালী রায়ের নাাম পাওয়া যায় ওই ওয়ার্ডের ১২২৯ নম্বর ক্রমিকে।
ডোমার ঃ ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের শালমারা গ্রামের ১০ টাকা কেজি দরে চালের ১২১৮ নম্বর ক্রমিকের রশিদুল ইসলামের চাল কল, চাতাল ও বাড়ি। |
বনমালী রায় বলেন,‘আমি ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য। ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের নেতারা আমার নামে ওই কার্ড দিয়েছে। কার্ড পাওয়ার পর মানুষের ক্ষোভের মুখে চাল নিজে তুলতে যাইনি। এলাকার তিনজন গরীর মানুষ ওই চাল তুলে ভাগ করে নিয়েছে।’ তিনি বলেন,‘আমি লজ্জায় পড়েছি। ভাবছি আমার নামের কার্ডটি বাতিলের আবেদন করবো।’
একই ওয়ার্ডের নীলাহাটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে অনেক বড় এলাকা নিয়ে রশিদুল ইসলামের (৬৫) রাইস মিল ও চাতালের সঙ্গে লাগোয়া বাড়ি। বুধবার দুপুরে সেখানে কাজ চলছিল ধান শুকানোর। তালিকার ১২১৮ ক্রমিকে রয়েছে তার নাম। এসময় রশিদুল ইসলাম স্বল্প মূল্যের চাল বিতরণের তালিকায় তার নাম থাকার কথা স্বীকার করে বলেন,‘আমি কখনো ওই কার্ড চাইনি। হঠাৎ তালিকায় নাম দেখে চমকে উঠেছি।’ এসময় তার ছেলে মনোয়ার হোসেন (৩৫) বলেন,‘কার্ড দেখে প্রথমে জানছিলাম তেল, চিনি পাবো। এখন দেখছি চাল দিচ্ছে।’
এমন অভিযোগ ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সত্যেন চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে। কার্ড পাওয়ার তালিকায় ১২১৭ ক্রমিকে তার নিজের এবং ১৩১৭ ক্রমিকে তার স্ত্রী পুস্প রাণী রায়ের নাম রয়েছে। শুধু তাই নয় তার বাবা সুরেন্দ্র রায়ের নাম রয়েছে ১২৬৩ নম্বরে। এব্যাপারে কথা বলার চেষ্টা করে সত্যেন চন্দ্র রায়কে পাওয়া না গেলে তার বাবা সুরেন্দ্র রায় ওই কার্ড প্রাপ্তি এবং চাল উত্তোলনের বিষটি স্বীকার করেন।
হরিণচড়া ইউনিয়নে শালমারা গ্রামে ১০টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ হয়েছে গত ২৭ সেপ্টেম্বর। সেদিন অনেকেই দেখেছেন ওই গ্রামের অনেক সম্পদশালী ব্যক্তিদের ওই চাল উত্তোলন করতে। এ প্রসঙ্গে শালমারা গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমান (৬৫) বলেন,‘মুই শুনিছিনু গরীব মাইষির জন্য সরকার কমদামে চাউল দিবে। এলা দেখেছ ওইলা চাউল হামার না হয়। যার জমি জাগা আছে তায় ওইলা ভাগ করি নিছে।’ এমন অভিযোগ করেন গ্রামের জোবায়েদুল ইসলাম (৪০), নরেন্দ্র রায়সহ (৪৫) অনেকে। তারা কার্ডধারীর তালিকা দেখে ১২২৯, ১২৩৯, ১২৭৯, ১২৪০, ১২৪১, ১২৪৩, ১২৭৪, ১২৭৮, ১২৯৯, ১২৭২, ১২৮৬, ১৩২০, ১৩০৭, ১২৩৬, ১২২৬, ১২২৯, ১২৩০ নম্বর ক্রমিকের নামীয়দের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এসকল কার্ডধারীর অনেকেরই সম্পদ রয়েছে, আবার অনেকের স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে কার্ড রয়েছে বলে তারা জানান।
এব্যাপারে ওই ইউনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খগেন্দ্র নাথ রায় বলেন,‘আমি নূতন নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচনের আগে ওই তালিকা করা হয়েছে। দায়িত্ব নেয়র পর আমাকে মাত্র ১৫টি কার্ডের তালিকা করতে দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন,‘বিভিন্ন সময়ে মেম্বার, চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা তালিকা তৈরী করায় এমন বিভ্রান্তি ঘটেছ। আমি চাই সঠিক তদন্ত করে যোগ্য ব্যক্তিদের ওই কার্ড প্রদান করা হোউক।
একই ইউনিয়নে ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাহজাহান আলী এবং ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মনিরুজ্জামান বলেন,‘কার্ডের তালিকা প্রস্তুতে কিছু সমস্যা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অনেকেই তালিকায় নিজের নাম বসিয়েছে। তালিকাটি আরো স্বচ্ছতার সাথে হওয়া প্রয়োন বলে দাবি করেন তারা।
হরিণচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নে ১৩২০টি কার্ডে প্রথম দফায় গত মাসের শেষ দিকে চাল বিতরণ করা হয়েছে। কিছু কিছু ওয়ার্ডে কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ আসছে। এর মধ্যে নয় নম্বর ওয়ার্ডের সংখ্যা বেশী। সুনিদিষ্ট অভিযোগ এলে আমি তদন্ত করে সে কার্ড বাতিলের ব্যবস্থা করবো।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মৃতুঞ্জয় রায় বর্ম্মণ বলেন,‘ ৭ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরে মধ্যে উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ১৬ হাজার ৩৩৪ কার্ডে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। নূতন করে আরো দুই হাজার ৩৫১ কার্ড বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে। দুস্থ্যদের মধ্যে ওই কার্ড বিতরণের কথা বলে তিনি জানান।
অনেক সম্পদশালীরা কার্ড পেয়েছেন এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন,‘অভিযোগ এলে তদন্ত সাপেক্ষে সেটির ব্যবস্থা নেয়া হবে।’