দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অভিযুক্ত ২ শিক্ষকের কারণে ব্যহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম,

মোঃ আব্দুস সাত্তার,দিনাজপুর প্রতিনিধি ॥
দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া কঠিনশিলা প্রকল্প সংলগ্ন মৌলভীর ডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রশাসনিক দ্রুতভাবে গ্রহণ না করায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত ও অভিভাবক মহল এখন ক্ষুদ্ধ। জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমান এবং শিক্ষিকা  মোছাঃ রেবেকা বেগম এর বিরুদ্ধে ৩ দফায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তাগণ অভিযোগের সত্যতা পেয়ে দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ২ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত ২  শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ ধীরগতিতে হওয়ায় অভিভাবক মহলকে ক্ষুদ্ধ করে তুলেছে। ফলশ্র“তিতে যে কোন ধরণের অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন সচেতন অভিভাবক মহল। পার্বতীপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, মৌলভীরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ সহকারী শিক্ষক তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে তারা স্বেচ্ছাচারিতা, উৎশৃঙ্খলতা এবং বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বেলি চলাকালীন সময়ে অফিসে বসে খোশগল্পে ব্যস্ত থেকে জাতীয় পতাকাকে অবজ্ঞা প্রদর্শন করছে। এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ক্লাষ্টার এ,ইউ,ও’র পরিদর্শন খাতায় নির্দেশনার আলোকে শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রধান শিক্ষক শিক্ষা অফিসে প্রতিবেদন দাখিল করেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার এসব বিষয় তদন্তের জন্য একজন সহকারী শিক্ষা অফিসার আল সিরাজকে দায়িত্ব দিলে শিক্ষক ২ জন ক্ষিপ্ত হয়ে তদন্তটি ভিন্ন খাতে প্রবাহের অপচেষ্টা চালায়। গত ২১ আগস্ট রেবেকা খানম নিজেদের অনৈতিক সম্পর্ক আড়াল করতে উপজেলা শিক্ষা অফিসে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক একটি অভিযোগ দাখিল করেন। গত ৩০ আগস্ট ২ জন সহকারী শিক্ষা অফিসারকে সাথে নিয়ে পার্বতীপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আখতারুল ইসলাম উক্ত বিদ্যালয়ে গিয়ে তদন্তকালে অভিযোগকারী শিক্ষিকার মুখোশ খুলে যায়। তিনি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণাদী তাকে উপস্থাপনের তাগিদ দিলে বিপাকে পড়ে শিক্ষিকা নীরব থাকে। ঘটনার তারিখ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে বললে তিনি ২২ মে দুপুর দেড়টায় বিদ্যালয় চলাকালীন সময় উল্লেখ করেন। অথচ শিক্ষক হাজিরা খাতায় ঐ পুরো সপ্তাহ বিদ্যালয় গ্রীষ্মকালীন ছুটি ছিল। তদন্ত কর্মকর্তা সুকৌশলে প্রশ্ন করলে শিক্ষিকা অপকটে স্বীকার করেন, তার দাখিলকৃত অভিযোগটি প্রধান শিক্ষককে ফাসাতে প্রতিহিংসা বশত: করেছিল। তিনি অভিযোগটি প্রত্যাহার করার জন্য শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করেন। শিক্ষা অফিসার মিথ্যা অভিযোগ প্রেক্ষিতে শিক্ষিকার বিরুদ্ধে  বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানালে, শিক্ষিকা তার চাকুরী বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক অঙ্গিকার নামায় উল্লেখ করে এ ধরনের অভিযোগ কখনো কারো বিরুদ্ধে করবেন না। শিক্ষার্থীর অভিভাবক এনামুল হক, আতাউর রহমান, সাহিদা বেগম ও  অহিদুল হক আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, এসব ঘটনার কারণে শিক্ষকদের মাঝে যেভাবে তিক্ততা বেড়েই চলেছে তাতে করে অভিযুক্ত শিক্ষককে অতিদ্রুত অন্যত্র বদলী করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বাকের হোসেন মাস্টার বলেন, শিক্ষকদের মাঝে যে অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে তা দ্রুত নিরসন হওয়া উচিত। কেননা এতে করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধিকে প্রধান শিক্ষক তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওই শিক্ষকদের প্রতি আমার কোন ব্যাক্তিগত অভিযোগ নেই, শুধুমাত্র দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বিভাগীয় প্রতিবেদন দিয়েছি। ওরা মনুষত্ব্যহীন ভাবে শিক্ষক হয়ে অমানুষের মত মিথ্যাচার করেছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এবং সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের যথার্থতা তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পার্বতীপুর শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা দিলে গত ৭ সেপ্টেম্বর  সহকারী শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বিদ্যালয়ে গিয়ে ৬টি বিষয়ের উপর দিনব্যাপী তদন্ত সম্পন্ন করেন। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ওই ২ শিক্ষক নিজেদের আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করলেও প্রধান শিক্ষক কর্তৃক উপস্থাপিত দালিলিক প্রমাণাদিতে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়, তারা উভয়ে চাকুরীবিধি পরিপন্থি কাজ করেছেন। তাই আমি দালিলিক প্রমাণাদির উপর ভিত্তি করে, সুপারিশ সহ ৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করেছি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আখতারুল ইসলাম বলেন, একজন শিক্ষিকা কি করে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে দুরে সরে গিয়ে উল্টো প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যে যৌন হয়রানীর অভিযোগ আনতে পারে, এতে আমি হতবাক হয়েছি। অভিযোগটি আমি নিজেই তদন্ত করেছি, মিথ্যে অভিযোগ আনায়নকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ সহ দুটি প্রতিবেদন ২২ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাররে দাখিল করেছি। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সমরেশ মজুমদার জানান, পার্বতীপুরে মৌলভীরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই ২ শিক্ষকের দুটি প্রতিবেদন আমার হাতে এসেছে, উপজেলা শিক্ষা অফিসারের প্রতিবেদনের আলোকে আমি তাদের বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। উপ-পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা, রংপুর বিভাগ, রংপুর মোঃ মাহাবুব এলাহী জানান, বিষয়টি জেনেছি ইতিমধ্যে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। অভিযুক্ত ২ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা সহ দূরবর্তী স্থানে প্রশাসনিক বদলী করে শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন এলাকাবাসী।

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 3310278453684214027

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item