১১১ছিটমহলের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ মানুষটিই ভোটার বিহীন
https://www.obolokon24.com/2016/08/sit-mohol.html
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
“মোর বাপ-দাদা এইঠে থাকি মরি গেইল। মুইও কুন্দিন মরিম,তার ঠিক নাই। কিন্তুক আপসোস মুই একবারও ভোট দিবার পান্নু না। বাংলাদ্যাশের নাগরিক হবার পান্নু না।” একনাগারে কথাগুলো হাসপাস করে বলে গেলেন দেবীগঞ্জ উপজেলাধীন সাবেক ছিটমহল ৩নং বালাপাড়া খাগড়াবাড়ীর বাসিন্দা বয়সের ভারে নুব্জ এবং অসুস্থ্য শতোর্দ্ধ প্রবীণ মফিজদ্দিন ওরফে হেল্টা বুড়া। কেন ভোটার হতে পারেন নি প্রশ্নকালে তিনি বলেন, “ছিটমহল বাংলাদ্যাশ হবার সমায় ২০১১ সালে সবার নাম নিছে। কিন্তুক ভূল করি মোর নাম বাদ পইচ্ছে।” কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস নেওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার শুরু করেন কথা বলা। বলেন, “পরে আরও ২০১৫সালে হেডকাউন্টিং হইলে মোর নাম দিছিলো কিন্তুক আইসে নাই। নামটা বাদ পইচ্ছে। এইজইন্যে ভোট ওঠায় নাই।” বর্তমানে হেল্টা বুড়ার বয়স তাঁর ভাষ্য মতে ১১৫ বছর। তাঁর ৩ছেলে ও ১মেয়ে। ১২জন নাতী-নাতনী এবং নাতী নাতনীর ছেলে-মেয়ে ৭জন ।
এবিষয়ে হেল্টা বুড়ার বড় ছেলে সত্তর বছর বয়সী আফসার আলী বলেন, “যেলা নাম নেয় সেলা কাহো এতোটা গুরুত্ব দেয় নাই। মনে কইচ্ছে বাংলাদ্যাশ তো হবার নহয়। সেইতেনে কাহো নাম দিছে কাহো দেয় নাই।” তিনি আরও বলেন, “অনেকলায় আছে জায় হেডকাউন্টিংকোত নাম দেয় নাই। এলা দেখ্যেছি হেডকাউন্টিং ছাড়া ভোট না ওঠায়। মহা মছিবোত।” হেল্টা বুড়া আবার বলেন, “মোর দাদারা এই ছিটোত থাকি মরি গেইল। কত বিপদ-আপদ সয়া আজি যাওবা বাংলাদ্যাশ হইল, তাও আরও মোর ভোট নাই। মুই কি ভোটার হবার পারিম না? তিনি এই প্রতিবেদককে প্রশ্নটি করে নির্বাক অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকেন।
এবিষয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সুমিয়ারা পারভীনের সাথে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, হ্যাঁ, এরকম কিছু মানুষ আছে যারা সাবেক ছিটমহলের জনগনণা থেকে বাদ পড়েছেন। জনগনণা ছাড়া সাবেক ছিটমহলে কারো ভোট ট্রান্সফার বা ভোটের ছবি তোলা হয়নি। আমরা উর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলেই আমরা তাদেরকে ভোটার করে নেব। প্রসংগতঃ ২০১১ ও ২০১৫ইং সালে সাবেক ছিটমহলের হেডকাউন্টিং তথা জনগনণা করা হয়। সে গনণায় হেল্টা বুড়ার মতো অনেক ছিটবাসি বাদ পড়ে। গত ১২-২৭জুলাই’১৬ইং পর্যন্ত জরিপসহ ভোটের ছবি তোলা ও ভোটার স্থানান্তরের কাজ শুরু ও শেষ হয়। এরপর গত ১আগষ্ট ভোটারদের একটি খসড়া তালিকা উপজেলা নির্বাচন অফিস কর্তৃক প্রকাশিত হলে নতুন ভোটের ছবি উত্তোলনকারী ও ভোটার স্থানান্তরের নাম ভোটার তালিকায় আসেনি। এনিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাকে অভিযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাচন প্রশাসন সংশোধনীর জন্য গত ১৬জুলাই শেষ তারিখ ধার্য্য করে এবং হালনাগাদকৃত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের চূড়ান্ত তারিখ ৪সেপ্টেম্বর ধার্য্য করে।