ফের গর্জে উঠেছে তিস্তা
https://www.obolokon24.com/2016/07/tista_17.html
ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ১৭ জুলাই॥
তিস্তা নদী ফের গর্জে উঠেছে। তৃতীয় দফায় ভারী বর্ষন ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি আজ রবিবার সকাল ৬টা থেকে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা (৫২ দশমিক ৪০ মিটার) ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা ও লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা ও কালিগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রাম হাটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ১০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। প্রচন্ড ¯্রােত আর শোঁ শোঁ শব্দ তিস্তারপাড় কাঁপিয়ে তুলেছে। তিস্তা হিং¯্ররূপ এলাকাবাসীকে আতংঙ্কগ্রস্থ করে তুলেছে। কি হবে কি হচ্ছে তা এলাকাবাসী ভেবে পাচ্ছে না।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরন কেন্দ্র সুত্র তিস্তার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করে জানায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। সুত্র মতে বর্ষা মৌসুমে তিস্তা এবার তৃতীয় দফায় বিপদসীমা অতিক্রম করলো। এর আগে ২৩ জুন বিপদসীমার ২৫ ও ২৫ জুন বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
এদিকে তিস্তার বন্যায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি, জলঢাকা উপজেলার, গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ,লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা,কালিগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদী বেস্টিত চর ও চর গ্রামগুলোর এলাকার ২৫টি চর ও গ্রামের ১০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছে।
ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ছাতুনামা ও ফরেষ্টের চরের ৭শ পরিবার বসতভিটায় বন্যায় পানি প্রবেশ করেছে। এসব পরিবারের অধিকাংশ বাড়ীতে হাটু পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
এদিকে উজানের ঢলে ফুঁসে ওঠা তিস্তানদীর গতিপথ পরিবর্তনে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ও লালমনিরহাট জেলার সানিয়াজান এলাকার ২০ হাজার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। ওই সব গ্রামের উপর দিয়ে তিস্তা এখন প্রবাহিত হচ্ছে।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক জাকীর হোসেন বলেন, ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখাড়িবাড়ি সহ ১০টি গ্রামের অবস্থা ভাল না। এসব এলাকার লোকজন সাহসের সাথে বন্যা মোকাবেলা করছে। এসব এলাকার ঘরবাড়ি স্কুল, আবাদী জমি, হাটবাজার সব কিছু তিস্তা গ্রাস করে চলেছে। তিনি ওই সব এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমান ত্রানের পাশাপাশি সরকারী সকল সেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করেন। সেই সাথে ওই এলাকায় দ্রুত একটি বাঁধ নির্মানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বিষয়টি নিয়ে পাউবোর উদ্ধর্তন কতৃপক্ষকে অবগতি করবেন মর্মে জানায়।
এলাকার একতার বাজারটি তিস্তা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ায় হাটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী আব্দুল হাই (৬৫) জানান এই জীবনে তিস্তার এমন রাক্ষুসী রূপ দেখিনি।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন জানান, তিস্তা নদীর গতিপথ পাল্টে যাওয়ায় টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম এখন তিস্তা নদীতে পরিনত হয়েছে। নদী এখন এসব গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সাথে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে চরখড়িবাড়ী মধ্য চরখড়িবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, টাপুর চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, টেপাখড়িবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় ও ওই গ্রামের ত্রানের ৩৯ ফিট একটি ব্রীজ। এ ছাড়া বিএডিসির চরখড়িবাড়ী এলাকায় গত ২ বছর আগে নির্মিত ১৭ ফিট ১টি ব্রীজ, ঝিঞ্জির পাড়ায় এলজিইডির নির্মিত ৭০ ফিট ১টি ব্রীজ ও পূর্বখড়িবাড়ী এলাকায় এডিপির ১০ফিট একটি ব্রীজ বিলিন হয়েছে। এ ছাড়া ১০টি গ্রামের সহ¯্রাধীন পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে।
বন্যায় চুলো ও টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ার কারনে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে রয়েছে বন্যা কবলিত মানুষগুলো। কোথাও হাটু ও কোথাও কোমড় পানির নিচে চলে গেছে রাস্তা-ঘাট, স্কুল ও বাড়ি-ঘর। পানিবন্দী মানুষজন তাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে গবাদী পশু নিয়ে উচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে বাঁধের উপর ঘর নির্মান করেছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানায়, উজানে ঢলে ও ভারী বৃস্টিপাতের কারনে তিস্তার পানি সকাল ৬টা থেকে ১৭সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় ৭ সেন্টিমিটার পানি কমে এখন বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।