স্ব - উদ্যোগেই ছিটমহলের উন্নয়ন করতে চায় শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম
https://www.obolokon24.com/2016/07/panchagar_18.html
আবু ফাত্তাহ্ কামাল (পাখি),স্টাফ রিপোর্টারঃ
ডোমার (নীলফামমারী) প্রতিনিধি :ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল নিজ উদ্যোগেই এলাকার মানুষের জন্য উন্নয়ন করার। কিন্তু ছিটমহল নামক এক বাধা অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছিল। ছিটমহল বাংলাদেশে রুপান্তরিত হওয়ায় সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের সময় হয়েছে। মানুষের কল্যানে জীবনের বাকী সময়টুকু কাটাতে চাই। কথাগুলো বলছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম(৬৫)। তিনি বলেন,এলাকার মানুষকে শিক্ষিত করাই হবে তার মুলকাজ। এলাকার মানুষ একদিন শিক্ষিত হয়ে এলাকার নাম উজ্বল করবে সেই প্রত্যাশায় করেন তিনি। তাই তিনি বিলুপ্ত ছিটমহলে ১৩ বিঘা জমি দান করেছেন।সেখানে মসজিদ,মাদ্রাসা,ময়দান,কবরস্থান গড়ে তুলার কাজ চলছে নিজস্ব উদ্যোগে।অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো: সিরাজুল ইসলাম জানান,জীবনের বাকী দিনগুলো সরকারকে সহযোগীতার পাশাপাশি অধুনাবিলুপ্ত কোট ভাজনী ছিটমহলের এস এম রুম্মান পাড়ার অবস্থা পাল্টে দিতে চান। তিনি স্বপ্ন দেখেন রুম্মান পাড়ার মানুষজন একদিন দেশ শাসন করবে। এজন্য তিনি নিজ খরচে ওই এলাকায় গড়ে তুলেছেন বাইতুল রিয়াদ জামে মসজিদ, এস এম রওফুন ফোরকানিয়া নামে একটি মাদ্রাসা, রুম্মান পাড়া ঈদগা ময়দান । একটি কবরস্থানও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি ১৩ বিঘা জমি দান করেছেন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় কোটি টাকা। সিরাজুল মাষ্টার ভবিষ্যতে গুলজান নেছা শিশু সনদ ও এতিমখানা, একটি কিন্টারগার্ডেন স্কুল ও একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষন কেন্দ্র করবেন বলে তিনি জানান।
এস এম রুম্মানপাড়া বায়তুল রিয়াদ জামে মসজিদে ১ জন ঈমাম ও একজন মুয়াজ্জেম রয়েছে। তাদের বেতনও তিনি নিজে বহন করেন।
মসজিদের পাশে তিনি একটি আম বাগন করে দিয়েছেন এবং এস এম রুম্মান পাড়ায় প্রস্তাবিত নতুন থানার জন্য তার ভাইয়েরা মিলে ১০ বিঘা জমি দান করেছে।
সিরাজুল মাষ্টারের এসব মহৎ কাজের জন্য এলাকাবাসী তার কাছে কৃতজ্ঞ বলে জানালেন ওই এলাকার মো: মোতালেব হোসেন, মোহাম্মদ আলী ও সহিদুল ইসলাম।
তারা আরো জানান, যখন ছিটমহল ছিল। সে সময়ে বাংলাদেশে অপরাধীরা হত্যা, চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে পুলিশের হাত থেকে বাচার জন্য এ ছিটমহলে এসে আশ্রয় নিত। কিন্তু বর্তমান সরকার ও ভারতীয় সরকার ছিটমহল সমস্যার সমাধান করার পর আমাদের এ এলাকায় সিরাজুল মাস্টার অনেক উন্নয়নমূলক ও শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে। এতে এলাকার মানুষ সচেতন হয়েছে। এখন আর কোন অপরাধী আমাদের এখানে আশ্রয় নিতে পারেনা। কোন সন্ত্রাসী এখানে আসলে আমরা তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেই। এসব সম্ভব হয়েছে একমাত্র সিরাজুল মাস্টারের সহযোগীতায় বলে তারা জানায়।
সিরাজুল ইসলাম ডোমার উপজেলার ঘুনুরাম উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারী অবসর গ্রহণ করেন। তার স্ত্রী ও ৩ ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে এস এম রুম্মান ঢাকায় একটি বেসরকারী ভার্সিটিতে ইলেট্রিক ইঞ্জিনিয়ানিংয়ে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র, দ্বিতীয় ছেলে এস এম রওফুন ইসলাম এইচ এস সি পরীক্ষার্থী ও ছোট ছেলে রিয়াদুল ইসলাম ৮ম শ্রেনীতে লেখাপড়া করে।
শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ছিটমহল থাকার কারনে এ এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিণ্ঠান ছিল না। এর ফলে এ এলাকার কেউ পড়াশুনাসহ কোন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল না। তারা অনেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করতো। ছিটমহল সমস্যার সমাধানের পর আমি উপলদ্ধি করি তাদের সচেতন করা না হলে এসব সমস্যা দুর করা যাবে না। তিনি আরো বলেন, এতে আমি বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান তৈরী করে তাদেরই দায়িত্ব দেই এসব চালানোর। এখন তারা সবাই সচেতন হয়ে উঠেছে। এখন তারা নিজেও কোন অন্যায় করে না। তাদের সামনেও কোন অন্যায় হলে তারা প্রতিরোধ করে।
শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম আরো জানান, শুধু ওইসব প্রতিষ্ঠান নয় এ এলাকার সকলের সহযোগীতায় তিনি আরো কিছু উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান ও কর্মকান্ড করার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন। সরকারের সহযোগীতা চেয়ে তিনি নিজেও জীবনের বাকি সময়টুকু অধুনাবিলুপ্ত সাবেক ছিটমহল কোট ভাজনীর এস এম রুম্মান পাড়ার মানুষের সাথে কাটাতে চান।