ফুঁসছে নদী -ভাঙ্গছে বাড়ি॥ তিস্তা ফের বিপদসীমায়
https://www.obolokon24.com/2016/06/tista_25.html
ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ২৫ জুন॥
তিস্তা নদী ফের বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারী বর্ষন ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার বন্যায় তিস্তা অববাহিকার নীলফামারী,লালমনিরহাট ও রংপুরের চর ও চরগ্রাম গুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সেই সাথে তিস্তা ফুঁসে উঠায় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে ঘরবাড়ি জমিজিরাত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সুত্র মতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষজনের ঘরবাড়িতে বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়া খবর পাওয়া গেছে। আজ শনিবার নীলফামারী ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডের বন্যা পূর্বাভাস সর্তকীকরন কেন্দ্র সুত্র জানায় সকাল ৬টা নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার (৫২ দশমিক ৫৫ মিটার)) উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। যা তিনঘন্টা পর সকাল ৯টায় আরো ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘন্টায় তিস্তা অববাহিকার ডালিয়া পয়েন্টে বৃস্টিপাত রেকড করা হয় ১২৭ মিলিমিটার।
এদিকে তিস্তা নদী ফুঁসে উঠায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়বাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর ওপারে তিনটি ওয়াডের ৫টি গ্রাম যথাক্রমে চরখড়িবাড়ি পূর্বখড়িবাড়ি,টাপুরচর,ঝিঞ্জিরপাড়া ও মেহেরটারী তিস্তার বন্যা ও ভাঙ্গনে লন্ডভন্ড হতে শুরু করেছে। চরখড়িবাড়ি সেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বালির বাঁধটি ৪০০ মিটার নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। সেখানকার দেড়শত পরিবার নদীভাঙ্গনের শিকার হয়ে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে ও নিচ্ছে। এ ছাড়া মধ্য চরখড়িবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলিন হতে শুরু করেছে। স্কুলটি পুরানো ভবনটির একটি অংশ চলে গেছে নদীর গর্ভে। নতুন ভবনটি হুমকীর মুখে পড়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন। সুত্র মতে শুধু চরখড়িবাড়ি এলাকার ২০ হাজার মানুষ চরম ক্ষতিগ্রস্থ । কারন তিস্তা নদী গতি পরিবর্তন করে ওই এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানায় তিস্তা বন্যা ও ভাঙ্গনে টেপাখড়িবাড়ির তিনটি ওয়াডের ৫টি গ্রামের অবস্থা ভয়াবহ সৃস্টি করেছে। সেখানে ১০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে ১০ কেজি করে চাল ও বরাদ্দকৃত নগদ টাকা দিয়ে শুকনা খাবার সরবারের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে তিস্তার এমন বন্যায় তিস্তার বন্যায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি, জলঢাকা উপজেলার, গোলমুন্ড, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ,লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা,কালিগঞ্জ ,রংপুরের গঙ্গচড়া উপজেলার তিস্তা নদী বেস্টিত চর ও চর গ্রামগুলোর এলাকার ২৫টি চর ও গ্রামের ৫০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানায়।
ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ছাতুনামা ও ফরেষ্টের চরের ৭শ পরিবার বসতভিটায় বন্যায় পানি প্রবেশ করেছে। এসব পরিবারের অধিকাংশ বাড়ী হাটু পানিতে তলিয়ে বয়েছে। খালিশা চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন পশ্চিম বাইশ পুকুর, পুর্ব বাইশ পুকুর, সতিঘাট ও ছোটখাতা গ্রামের ৮শ পরিবার বন্যার কবলে পড়েছে। পুর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক আবদুল লতিফ খান বলেন, ঝাড়সিংশ্বের ও ছাতনাই গ্রামের সহ¯্রাধিক পরিবারের বসতভিটায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। খগাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন বলেন, কিসামত ছাতনাই ও দোহলপাড়া গ্রামের ৫শতাধিক পরিবার বন্যার কবলে পড়েছে। এসব পরিবারের শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ যে গত বুধবার ২২ জুন সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা বিদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এরপর ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ৩৬ সেন্টিমিটার পানি কমে তিস্তা বিপদসীমার নিচে চলে এসেছিল। ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে ভারী বর্ষন ও উজানের ঢলে তিস্তা পুনরায় বিপদসীমা অতিক্রম করলো।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান সকাল ৯টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জল কপাট খুলে রাখা হয়েছে।