তিস্তা অববাহিকায় লন্ডভন্ড হচ্ছে চরখড়িবাড়ি
https://www.obolokon24.com/2016/06/tista_24.html
বিশেষ প্রতিনিধি- ২৪ জুন॥
ভারী বর্ষন ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি ফের বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। শুক্রবার বিকাল ৬টা থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদসীমা (৫২ দশমিক ৪০ মিটার) ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল।
এদিকে উজানের ঢলে ফুঁসে ওঠা তিস্তানদীর গতিপথ পরিবর্তনে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ও লালমনিরহাট জেলার সানিয়াজান এলাকার ২০ হাজার মানুষ বিপাকে। শুক্রবার সকাল থেকে চরখড়িবাড়ির সেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বালির বাঁধের আরো দুইশত মিটার বিলিন হয়। এ ছাড়া বিকালে তিস্তা নদীতে বিলিনের পথে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি মধ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পুরাতন ভবনটি। এতে স্কুলের নতুন ভবনটিও হুমকীর মুখে পড়েছে।
ডিমলা উপজেলার চরখড়িবাড়ি এলাকাবাসী অভিযোগ বোমা মেশিন দিয়ে তিস্তা নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের খেসারতে গতিপথ পরিবর্তন করে তিস্তা ফুঁসে উঠেছে। তাই বাড়ি ঘর ভেঙ্গে অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে তারা। চরখড়িবাড়ি এলাকাগুলোতে নদীর পানি প্রবেশ করে ঘরবাড়িগুলো হাটুপানিতে তলিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে চরখড়িবাড়ি এলাকা পরিদর্শন করেন ডিমলা উপজেলার চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম , নির্বাহী কর্মকতার্ (ইএনও) রেজাউল করিম ও টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন।
ইউএনও রেজাউল করিম জানান নদীর ভাঙ্গনে সেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁধটি যেমন বিলিন হচ্ছে সেই সাথে চরখড়িবাড়ি মধ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পুরাতন ভবনটিও তিস্তা নদীর বানের পানিতে তলিয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে বিলিন হতে শুরু করেছে। হুমকীর মুখে পড়েছে স্কুলটির নতুন ভবনটি। শুক্রবার চরখাড়িবাড়ির ১৭টি পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। শতশত পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছে।
ওইসব এলাকার মোতালেব হোসেন, মোমেনা বেগম, আরাজুল ইসলাম, আজিজুল ইসলাম, ও আবুল কাশেম জানান গত বছর থেকে তিস্তা নদী গতিপথ শুরুর আলামত ফুটে উঠেছিল। ফলে চরখড়িবাড়ির সাথে ভারত সীমান্ত বরাবর তারা তিস্তা নদীর গতিপথকে ঠেকাতে সেচ্ছাশ্রমে এক হাজার মিটার দীর্ঘ বালির বাঁধ নির্মান করে। কিন্তু তিস্তা যেন রাক্ষুসী হয়ে উঠছে। তিস্তার মুল গতিপথ ভারতের মেখলিগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশের জিরো পয়েন্ট কালিগঞ্জ দিয়ে। কিন্তু ওই পথ পরিবর্তন করতে শুরু করে তিস্তা।
বন্যায় চুলো ও টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ার কারনে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে রয়েছে বন্যা কবলিত মানুষগুলো। কোথাও হাটু ও কোথাও কোমড় পানির নিচে চলে গেছে রাস্তা-ঘাট, স্কুল ও বাড়ি-ঘর। পানিবন্দী মানুষজন তাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে গবাদী পশু নিয়ে উচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে বাঁধের উপর ঘর নির্মান করেছে। রোজার মাসে বানের পানির এই দুর্ভোগ এলাকাবাসীকে চরম হেনস্তা করে রেখেছে।
এলাকাবাসী অরো জানায় ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানি ছাড়াও বন্যা হওয়ার পিছনে আরো অন্য কিছু কারণ দেখছে চরখড়িবাড়ি এলাকার সাধারন ভুক্তভোগী অনেকে। তারা বলছে, শুষ্ক মৌসুমে কিছু অসাধু মানুষ মূল নদীতে পাথর ও বালু উত্তোলন করে নদী ভরাট করে ফেলে। এর ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে বর্ষাকালে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। আবার ভুল দিকে সেচ্ছাশ্রমে বালির বাঁধ নির্মানেও এ বন্যা পরিস্থিতির আরেকটি কারণ রয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডের বন্যা পুর্বাভাস ও সর্তকীকরন কেন্দ্র সুত্র জানায় শুক্রবার সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর প্রবাহ ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। সকাল ৯টা ও দুপুর ১২টায় ৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়। বিকাল ৩টায় ২ সেন্টিমিটার ও বিকাল ৬টায় আরো ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল।