অমর একুশে নীলফামারীর শহীদ মিনারে মানুষের ঢল

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ২১ ফেব্রুয়ারী॥
দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় নীলফামারীতে উদযাপিত হচ্ছে অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস  মহান ২১ ফেব্রুয়ারী বা ৮ ফালগুন। একুশের প্রথম প্রহর দিবসের শুভ সুচনায় রাত ১২টা ১মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পু®পমাল্য অর্পণ করা হয়। রাস্ট্রের পক্ষে সর্বপ্রথম শহীদ মিনারের বেদীতে পুস্পমাল্য অর্পন করেন জেলা প্রশাসন জাকীর হোসেন। এরপর  পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা পরিষদ,সিভিল সার্জন,  জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর, জেলা আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, মহিলা পরিষদ, প্রেস ক্লাব,মিডিয়া হাউস, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম, মটর শ্রমিক ইউনিয়ন, রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন, কাছ মিস্ত্রী সমিতি, দর্জি কল্যান সমিতি, পৌর মার্বেট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি,পল্লী বিদ্যুৎ,বাংলাদেশ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী (টিএফপিএ) সমিতি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, ক্লাব, ক্রীড়া সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। প্রথম প্রহর থেকেই শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নেমেছিল। পুস্পমাল্যের পর ভাষা শহীদ দের স্মরনে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
এদিকে সুর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ভাবে উত্তোলন করা হয়। এরপর দেখা যায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, টিআইবি সনাক , উদিচি, ভাওয়াইয়া একাডেমী,পিটিআই, সরকারি কলেজ, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়,বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জেলা যুবলীগ,কৃষক লীগ পৌর আওয়ামী লীগ সহ  বিভিন্ন স্তরের  প্রভাত ফেরি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে সমবেত হয়। এসব সংগঠন পক্ষে ফুলে ফুলে ভরে দেয়া হয় শহীদ মিনারের বেদি। শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষ ফুল নিয়ে আসে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে নীলফামারী প্রধান শহীদ মিনারে।
সকাল থেকে শহীদ মিনার চত্বরে শহীদ মিনার চত্বরে পোস্টার, পুস্তক ও আলোকচিত্র প্রদর্শন শুরু হয়।
সনাক টিআইবির পক্ষে পুস্পমাল্য অর্পনের পর সেখানে অমর একুশের ভাষা মাসের শপথ নিয়ে দুর্নীতি বিরোধী মানববন্ধন করা হয়। সেখাসে উপস্থিত ছিলেন সনাকের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক নরেশচন্দ্র রায়, সাবেক সহ সভাপতি তাহমিনুল হক, সহ সভাপতি প্রভাষক নাসিমা, সনাক সদস্য নুরন্নবী, ইয়েস সদস্যগণ। এদিকে শহীদ মিনারে উদিচি ও ভাওয়াইয়া সঙ্গীত একাডেমী পৃথক ভাবে আয়োজন করে ভাষার গানের আসর।
সকাল ১০টা থেকে মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজ ও নীলফামারী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে অমর শহীদের স্মরণে রচনা প্রতিযোগিতা, শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আবৃত্তি, চিত্রাংকন, সুন্দর হাতের লেখা ও দেশাত্ববোধক সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দুপুরে মসজিদে মসজিদে বিশেষ প্রার্থনা,  মন্দির, প্যাগোডা ও গীর্জায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।  সন্ধ্যায় শিল্পকলা অডিটোরিয়ামে চলচিত্র প্রদর্শন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অয়োজন করা হয়েছে। সেখানে নীলফামারীর প্রয়াত ৫ ভাষা সৈনিকের পরিবারকে সম্মাননা প্রদান করবে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক  জাকীর হোসেন জানান, অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গতঃভাষা আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সুচনা হয় ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর।১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা জারি করে পাকিস্তান সরকার। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমবেত ছাত্ররা ২১ ফেব্র“য়ারী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। পুলিশ ভাষা সৈনিকদের উপর গুলি বর্ষণ করলে ভাষাশহীদদের তপ্ত রক্তে সিক্ত হয় ঢাকার মাটি। ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারী পুলিশের গুলিবর্ষণে যারা শহীদ হন তাদের মধ্যেছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বার প্রমুখ। ভাষাসৈনিকদের অনেকে গ্রেফতার হন। কারাগাড়ে যান। অনেকে গ্রেফতার এড়াতে আতœগোপন করেন।
বাংলা ভাষা এমন ইতিহাস আর পৃথিবীর কোথাও নেই। প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী বা ৮ই ফালগুন এই দিনটি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পৃথিবীর সব দেশ একযোগে পালন করা হয়। ১৭ই নভেম্বর ১৯৯৯ সালে ইউনোস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারীকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেন এবং ২০০০ সাল থেকে সারা বিশ্বে এই দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমান মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনারের স্থপতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। তাঁরই রূপকল্পনা অনুসারে নভেম্বর, ১৯৫৭ সালে তিনি ও নভেরা আহমেদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংশোধিত আকারে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ কাজ শুরু হয়। এ নকশায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের সম্মুখভাগের বিস্তৃত এলাকা এর অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯৬৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ ব্যক্তিত্ব আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম নতুন শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন।আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি - একুশের সেই অমর সঙ্গীত- একুশের এই অমর সঙ্গীতটি একটি খবরের কাগজের শেষের পাতায় একুশের গান শিরোনামে প্রথম প্রকাশিত হয়। তখন গীতিকারের নাম জানানো হয়নি। ১৯৫৪ সালে হাসান হাফিজুর রহমান স¤পাদিত একুশে সংকলনে প্রকাশিত হয় গানটি। তৎকালীন সরকার সংকলনটি বাজেয়াপ্ত করে। গানটি রচনার ইতিহাস শুরুতে এটি কবিতা হিসেবে লেখা হয়েছিল। তৎকালীন যুবলীগের সাংস্কৃতিক স¤পাদক কবিতাটি আব্দুল লতিফকে দিলে তিনি এতে সুরারোপ করেন। পরবর্তীতে, লতিফ আতিকুল ইসলাম প্রথম গানটি গান। ঢাকা কলেজের কিছু ছাত্র কলেজ প্রাঙ্গনে শহীদ মিনার স্থাপনের চেষ্টা করার সময়ও গানটি গেয়েছিল। একারণে তাদেরকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদ, যিনি সে সময়কার একজন নামকরা সুরকার এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনি গানটিতে পুনরায় সুরারোপ করেন। বর্তমানে এটিই গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে
একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরীতে এই গান গেয়ে প্রতিটি বাঙ্গালী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। গানটি রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী এবং প্রথম সুরারোপ করেন আব্দুল লতিফ। কিন্তু পরবর্তীতে সুরকার আলতাফ মাহমুদ গানের সুরে পরিবর্তন আনেন। বর্তমানে আলতাফ মাহমুদের সুর করা গানটিই গাওয়া হয়।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 5917322004243006598

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item